‘ভালো গল্পের ছবিতে বিনা পয়সায় কাজ করেছি’

বাংলা চলচ্চিত্রের বিশিষ্ট অভিনেত্রী ববিতাকে সর্বশেষ নারগিস আক্তারের ‘পুত্র এখন পয়সা ওয়ালা’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করতে দেখা গেছে। চলমান মহামারীর কারণে দীর্ঘদিন ঘরবন্দি তিনি। তবে সম্প্রতি তার চলচ্চিত্রে ফেরার খবর জানা গেছে। করোনার এ সময়ে দুজন নির্মাতার সঙ্গে চলচ্চিত্র নিয়ে তার কথা হয়েছে বলে জানা যায়। ববিতা বলেন, ‘করোনার এ সময়ে দু-একজন নির্মাতার সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। দুজনের গল্পই আমার কাছে বিবেচনায় রয়েছে। তাদের মধ্যে একজনের চলচ্চিত্রে শিগগিরই কাজ করতে যাচ্ছি। সবকিছু স্বাভাবিক হলে চলচ্চিত্রে ফেরার প্রত্যাশা রাখছি।’
অভিনয়জীবনের ৫০ বছর পার করেছেন প্রখ্যাত এ অভিনেত্রী। চলচ্চিত্রে তার শুরুটা শিশু চরিত্রে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে। জহির রায়হানের ‘সংসার’ ছবিতে প্রথম অভিনয় করেন। দ্বিতীয় ছবি ‘শেষ পর্যন্ত’-তে নায়িকা হিসেবে নায়করাজ রাজ্জাকের বিপরীতে দেখা যায় তাকে। এটিও নির্মাণ করেন কিংবদন্তি নির্মাতা জহির রায়হান। ছবিটি ১৯৬৯ সালের ১৪ আগস্ট মুক্তি পায়। অভিনয়জীবনের ৫০ বছর পেরিয়েও এখনো দর্শকের ভালোবাসায় অবিরত সিক্ত ববিতা।
ঢাকাই চলচ্চিত্রের এ অভিনেত্রী আন্তর্জাতিক পরিসরেও খ্যাতিসম্পন্ন। দেশে-বিদেশে রয়েছে তার নানা অর্জন। বাংলাদেশী অভিনেত্রী হয়েও বিশ্ব অঙ্গনে তার পরিচিতিকে বিবেচনায় নিয়ে উইকিপিডিয়ায় লিপিবদ্ধ করা হয়েছে তার জীবনের নানা কথা। বাংলা, ইংরেজি, তামিল, কোরীয়, ওড়িয়া, পাঞ্জাবি ও আরবি ভাষায় অর্থাৎ সাতটি ভাষায় ববিতার জীবনের নানা তথ্য প্রকাশ করেছে অনলাইনভিত্তিক এনসাইক্লোপিডিয়া উইকিপিডিয়া। বিষয়টি নিয়ে ভীষণ উচ্ছ্বসিত ববিতা। জীবনের এ প্রাপ্তিকে অনেক বড় করেই দেখছেন তিনি। তার জীবনের এসব অর্জনের জন্য তিনি কৃতজ্ঞ চলচ্চিত্র পরিবারের প্রতি। সেই সঙ্গে কৃতজ্ঞ বেশ কয়েকজন চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্বের ওপরও। তিনি কৃতজ্ঞতা জানান প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা জহির রায়হানের প্রতি। ববিতা বলেন, ‘তিনি অভিভাবক হিসেবে ছিলেন বলেই চলচ্চিত্রে কাজ করার সাহস পেয়েছি, অনুপ্রেরণা পেয়েছি।’ এ নির্মাতার হাত ধরেই চলচ্চিত্রে আগমন ঘটে ববিতার। ববিতার এসব কৃতিত্বের পেছনে জহির রায়হানের সঙ্গে সঙ্গে বড় বোন সুচন্দার নামও আসে। পাশাপাশি বেশ কয়েকজন গুণী নির্মাতার নামও ববিতা স্মরণ করেন। ববিতা বলেন, ‘বড় বোন সুচন্দা, দেশের প্রতিথযশা পরিচালক খান আতাউর রহমান, নারায়ণ ঘোষ মিতা, সুভাষ দত্ত, আমজাদ হোসেন, আব্দুলল্লাহ আল মামুন, কামাল আহমেদসহ আরো বেশ কয়েকজনের কথা বিশেষত বলতেই হয়।’
নায়করাজ রাজ্জাক, আনোয়ার হোসেন, গোলাম মুস্তাফা, এটিএম শামসুজ্জামানের কথাও শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে ববিতা বলেন, ‘তাদের কাছ থেকে অভিনয় শিখে নিজেকে সমৃদ্ধ করেছি।’ অভিনয়জীবনে পথ চলতে গিয়ে জাগতিক বিষয়-আশয় নিয়ে গুরুত্ব দেননি ববিতা। জানালেন, ভালো গল্পের ছবিতে বিনা পয়সায় কাজ করেছেন। ‘দর্শকের ভালোবাসা পেয়েছি, হলে হলে হাততালি পেয়েছি, তাতেই অনুপ্রাণিত হয়েছি আমি। বড় বড় আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে বাংলাদেশের পতাকা হাতে নিয়ে উড়িয়েছি, এ প্রাপ্তি আমাকে অন্য রকম উচ্চতায় নিয়ে গেছে।’ জীবনে এ ধরনের প্রাপ্তিতে কৃতজ্ঞতা জানাতে ভুললেন না অস্কারজয়ী নির্মাতা সত্যজিৎ রায়ের প্রতিও। এ নির্মাতার ‘অশনি সংকেত’ ছবিতে অভিনয় করে আন্তর্জাতিক তকমা অর্জন করেন ববিতা। দেশীয় চলচ্চিত্রের অভিনেত্রীদের মধ্যে ফ্যাশন আইকন হিসেবে এখনো ববিতাকে অনুসরণ করেন নায়িকারা। বিষয়টি ববিতাকে দারুণভাবে আপ্লুত করে।
ববিতা তার দীর্ঘ অভিনয়জীবনে কয়েকশ ছবিতে অভিনয় করেছেন। একাধিকবার পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ও আজীবন সম্মাননা।