ব্রেক্সিট–পরবর্তী সময়ের জন্য ব্রিটিশ স্টুডেন্ট ভিসার ক্ষেত্রে কিছু পরিবর্তন আসছে। অন্য ভিসা ক্যাটাগরি থেকে স্টুডেন্ট ভিসায় আসার সুযোগ রেখে নতুন নিয়ম করা হয়েছে। নতুন নিয়মে বলা হয়েছে, এক বছর ধরে অধ্যয়নরত বিদেশি শিক্ষার্থীদের মেইনটেন্যান্স ফান্ড দেখাতে হবে না। একই সঙ্গে পিএইচডি শিক্ষার্থীদের জন্য স্টুডেন্ট ভিসার আট বছরের সর্বোচ্চ সীমা তুলে দেওয়া হচ্ছে। পড়াশোনা শেষে চাকরির প্রস্তাব পেলে সেখানে যোগ দিতে পারবেন বিদেশি শিক্ষার্থীরাও।
ইংলিশ টেস্টের বাধ্যবাধকতার বিষয়টিও সংশ্লিষ্ট কলেজের ওপর ছেড়ে দিয়েছে ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। নতুন ভিসার নিয়মে মাস্টার্সের পর দুই বছর এবং পিএইচডির পর তিন বছর শিক্ষার্থীরা ইংল্যান্ডে থাকতে পারবেন। ইউরোপ এবং ইউরোপের বাইরের দেশ থেকে আসা শিক্ষার্থীরা একই নিয়মে শিক্ষার্থী (স্টুডেন্ট) ভিসার আবেদন করতে পারবেন।
১০ সেপ্টেম্বর ব্রিটেনের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এসব কথা জানিয়েছে। নতুন নিয়মে বাংলাদেশসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরের শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে আগামী ৫ অক্টোবর থেকে কার্যকর হবে নতুন নিয়ম। নতুন নিয়মে অন্য ভিসা ক্যটাগরির বিদেশিরা স্টুডেন্ট ভিসায় আসার সুযোগ পাবেন। ব্রিটেনের বাইরে থেকে স্টুডেন্ট ভিসায় কেউ যেতে চাইলে সে ক্ষেত্রে বেশ নমনীয় হয়েছে দেশটি। আগামী ৫ অক্টোবর থেকে ভিসার মেয়াদ বাড়াতে বিদেশি শিক্ষার্থীদের মেইনটেন্যান্স ফান্ড দেখাতে হবে না।
এদিকে স্টুডেন্ট ভিসার ক্ষেত্রে বহু সমালোচিত আট বছরের ভিসার ক্যাপ তুলে দেওয়া হয়েছে। ফলে শিক্ষার্থীরা আরও বেশি সময় ব্রিটেনে পড়াশোনা করতে পারবেন। একই সঙ্গে লেখাপড়া শেষে কাজের প্রস্তাব পেলে ব্রিটেনে থাকারও সুযোগ সৃষ্টি হবে।
এর আগের ভিসার ক্ষেত্রে নিয়ম ছিল পড়া শেষ হওয়ার চার মাসের মধ্য ব্রিটেন ছেড়ে চলে যেতে হবে। ২০১২ সালে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থেরেসা মে (সাবেক প্রধানমন্ত্রী) শিক্ষার্থীদের ব্রিটিশ ভিসার ক্ষেত্রে এমন নিয়ম করেছিলেন। এর আট বছর পর ভিসার ক্ষেত্রে নতুন নিয়ম চালু হতে যাচ্ছে।
ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন এ সুযোগকে বিদেশি শিক্ষার্থীদের পেশা বেছে নেওয়ার জন্য ‘সম্ভাবনার নতুন দুয়ার খোলা’ বলে মন্তব্য করেন। তবে অভিবাসী নিয়ে কাজ করা সংস্থাগুলো বলছে, শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন ভিসানীতি দেশকে উল্টো পথে নেবে।
ভারত থেকে যুক্তরাজ্যে পড়তে আসা শ্রেয়া স্বামী বলছেন, নতুন ভিসার এ উদ্যোগ নতুনদের সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য। কিন্তু দিনটি তাঁর জন্য দুঃখের দিনও। কারণ, ভিসার নতুন নিয়মটি আগে থাকলে ব্রিটেনে আসা শিক্ষার্থীদের জন্য অনেক ভালো হতো। কেন্টের একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ক্রিয়েটিভ আর্টসে মাস্টার্স করা শ্রেয়া বলেন, ‘পুরোনো নিয়মের কারণে আমি পড়া শেষ করে কাজ খোঁজার জন্য মাত্র চার মাস সময় পেয়েছিলাম। আর বিদেশি মাস্টার্স শিক্ষার্থীদের অভিজ্ঞতা কম থাকায় কাজের সুযোগও মেলে কম। আমি নিজেও কয়েক মাস ধরে কাজের সন্ধান করেছি। কিন্তু বাস্তবতাটা ভিন্ন। আমি অনেকটা অসহায় এবং এখানে পড়তে আসা বোকামি মনে হচ্ছে। আমি এখন এখান থেকে চলে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি।’
ইউনিভার্সিটি অব ইউকের প্রধান নির্বাহী অ্যালিস্টার জারভিজ এ নতুন ভিসার নিয়মকে স্বাগত জানান। তিনি বলেন, এ সিদ্ধান্ত ব্রিটেনের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করবে। যুক্তরাজ্যই ‘শিক্ষার ক্ষেত্রে প্রধান গন্তব্যস্থল’ এটাও আবার প্রতিষ্ঠিত হবে। বিদেশি শিক্ষার্থীরা ব্রিটেনের অর্থনীতিকে ফুলেফেঁপে উঠতে সহায়তা যে করেছে, এর অনেক প্রমাণ কাগজে–কলমেই আছে। আর এর পরিমাণ ২৬ বিলিয়ন পাউন্ড।
কিন্তু ভিসার নতুন নিয়ম নিয়ে বিরোধিতাও আছে। ভিসার নতুন নিয়মের বিরোধিতা নিয়ে সোচ্চার অভিবাসনবিরোধী সংস্থাগুলো। মাইগ্রেশন ওয়াচ ইউকের চেয়ারম্যান আলপ মেহমেট ভিসার নতুন নিয়মকে ‘অপরিণামদর্শী’ বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বিপুলসংখ্যক বিদেশি শিক্ষার্থীকে আকৃষ্ট করার জন্য নানা উদ্যোগ নেবে। কিন্তু এটা আবার না অবৈধ পথে প্রবেশের উপায় হয়ে যায়, ভয় সেখানেই।’
সাড়ে চার লাখ শিক্ষার্থী ব্রিটেনে পড়ছেন
ব্রিটেনের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বর্তমানে সাড়ে চার লাখ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছেন। এর মধ্যে দুই–তৃতীয়াংশই ইইউর বাইরে থেকে আসা। এর মধ্যে ১ লাখ ৭০ হাজার থেকে ১ লাখ ৮৫ হাজার শিক্ষার্থী স্নাতক শেষ করবেন এ বছরই। এসব শিক্ষার্থী নতুন ভিসার আবেদন বা কাজের আবেদনের জন্য চার মাস সময় পাবেন। অথবা তাঁরা পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারবেন। তথ্যসূত্র: বিবিসি ও বিজনেস ইনসাইডার