আলোর ফেরিওয়ালা লোকমান হোসেন
প্রায় দুই যুগ ধরে নতুন বই নিয়ে পাঠকদের কাছে হাজির হন নওগাঁর আত্রাইয়ের লোকমান হোসেন। সমাজে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দেওয়াই যেন তার কাজ। অজপাড়াগাঁয়ে বসে প্রতিদিন নিত্যনতুন বইয়ের গন্ধ পাওয়া সত্যিই অবাক করার মতো। তারা শংকর বন্দ্যোপাধ্যায়, হুমায়ূন আহমেদ থেকে শুরু করে কালজয়ী বহু লেখকের বই নিয়ে হাজির হন পাঠকের সামনে। আত্রাই উপজেলার আমরুল কসবা গ্রামের মৃত রমজান আলীর ছেলে লোকমান হোসেন জীবনের ৬০ বছরের মধ্যে ২১ বছরই ব্যয় করেছেন এই কাজে। সব বয়সী পাঠকের হাতে তিনি তুলে দিতে চান পছন্দের বইটি। না, অন্য কোনো আশা কিংবা ইচ্ছা থেকে নয়, লোকমান এ কাজ করেন গ্রামের মানুষকে খারাপ কাজ থেকে বিরত রেখে বই পড়ায় মনোনিবেশ করতে।
কিশোর, যুবক-যুবতী, বৃদ্ধ এমন কি কৃষকরা পর্যন্ত তার পাঠক। বর্তমানে তার পাঠক সংখ্যা হাজার ছাড়িয়ে গেছে। কাঁধে চিরাচরিত ব্যাগ আর বাইসাইকেলে বাঁধা রয়েছে বেশ কিছু বই। হেঁটে যাওয়ার সময়ই কথা হয় তার সঙ্গে। জানতে চাইলে তিনি বলেন, বই আর পত্র-পত্রিকার সঙ্গে তার সখ্য ছোটবেলা থেকেই। কিন্তু শখ থাকলেও সাধ্য হতো না। তার গ্রাম তো দূরের কথা আশপাশের ১০-১২টি গ্রামেও ছিল না কোনো পাঠাগার। নিজ এলাকায় একটি পাঠাগার করা ও বই সবার মাঝে বিলিয়ে দেওয়ার স্বপ্ন জাগে দিনের পর দিন। মাসের পর মাস পথে-ঘাটে, হাট-বাজারে, হেঁটে ও বাইসাইকেলে করে ২১ বছর ধরে বই বিক্রি করছেন লোকমান হোসেন। সারা জীবন এভাবেই বই পড়া আন্দোলন চালিয়ে যেতে চান তিনি। গ্রামের মানুষকে দিতে চান আনন্দময় এক জগতের খোঁজ। যে জগতের খোঁজ তিনি পেয়েছিলেন বইয়ের ছাপানো অক্ষরে। সেই আনন্দের ভাগ মানুষের মধ্যে বিলিয়ে দিতেই তিনি হাঁটেন মাইলের পর মাইল।