হিরণের স্বপ্নের প্লেন এখন আকাশে
নাম হিরণ। বয়স ১৮ বছর। দরিদ্র ঘরে বেড়ে ওঠা হিরণ পেশায় একজন মোবাইল মেকানিক। ছোটবেলা থেকেই বিভিন্ন যন্ত্রপাতি দিয়ে কিছু একটা করার চেষ্টা। তাই এবার বাস্তবে নিজ হাতে প্লেন তৈরি করে তা আকাশে উড়িয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিলেন মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার বিনোদপুর মোল্যাপাড়ার আবুল খায়েরের ছেলে হিরণ। তার প্লেন আকাশে উড়তে দেখে এলাকাবাসীসহ অনেকে এখন তার কাছে ভিড় করছে। তৈরিকৃত প্লেনটির দৈর্ঘ্য ৪২ ইঞ্চি। তিনি খেলনা হিসেবে জেট ফাইটার বিমান ও প্লেন তৈরি করে আকাশে উড়িয়েছেন এবং স্পিডবোট তৈরি করে পানিতে চালাতে সক্ষম হয়েছেন। যা কন্ট্রোল করা হয় রিমোট দিয়ে।
হিরণ উপজেলার বিনোদপুরের মোল্যাপাড়া এলাকার এক অসহায় দিনমজুর পরিবারের ছেলে। হিরণ অভাব-অনটনের সংসারে থেকেও লেখাপড়ার পাশাপাশি অনেক স্বপ্ন নিয়ে বেড়ে উঠা আলো ঝলমলে সদা হাস্যোজ্জ্বল যুবক। পঞ্চম শ্রেণিতে পড়াকালীন সময়ে ২০১৩ সালে দিনমজুর বাবা আবুল খায়ের মারা যান। মা তাসলিমা বেগম ও দুই ভাইয়ের অভাবি সংসারের হাল ধরতে আর লেখাপড়া করতে পারেননি তিনি। দুই ভাইয়ের মধ্যে হিরণ ছোট। অভাবের সংসারে চাহিদা মিটাতে এবং তিন বেলা খাবারের জন্য শিশুকাল থেকেই ভ্যান চালানো, গ্যাস লাইট মেরামত ও গ্যাস ভরাসহ নানা ধরনের কাজ করতে হয়েছে। তার আয় উপার্জনে বড় ভাই এসএসসি পাস করে ঢাকায় একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি নিয়েছিলেন। কিন্তু করোনার কারণে তিনি বেকার হয়ে বাড়ি ফিরে এসেছেন। হিরণের আয়ে এখন চলছে চার সদস্যের পরিবার। তবে তথ্যপ্রযুক্তির এ যুগে পিছিয়ে নেই প্রত্যন্ত অঞ্চলের লেখাপড়া না জানা হিরণ।
আঠারো বছর বয়সী হিরণ বিনোদপুর বাজারে এনামুলের মোবাইল সার্ভিসিং সেন্টারে বেতনভুক্ত সামান্য একজন কর্মচারী। মাসিক বেতন ৪ হাজার টাকা। কিন্তু হিরণের তুখোড় মস্তিষ্ক থেমে থাকেনি কখনো। মেধাবী হিরণ মনের আনন্দেই খেলনা হিসেবেই তৈরি করেছে ৪২ ইঞ্চি দৈর্ঘ্য ও ২৯ ইঞ্চি প্রস্থের দু’টি প্লেন, দু’টি জেট ফাইটার বিমান ও দু’টি স্পিডবোট। খেলনা হলেও প্লেন আকাশে উড়তে সক্ষম। অনেক গতিতে চারদিকে দুই কিলোমিটার ঘুরে আসতে পারে এ প্লেন। স্পিডবোটও পানিতে চলতে পারে। ব্যাটারির চার্জ কমে গেলে একটা সংকেত দেয়, যার ফলে এটাকে হিরণ নামিয়ে আনতে পারে। খেলনা হিসেবে এলাকায় বিক্রয়ের জন্য তৈরি করলেও ব্যয় বেশি হওয়ায় এটা তিনি বিক্রি করতে পারেননি। আট থেকে দশ হাজার টাকা ব্যয় হয় প্লেন-বিমান বা স্পিডবোট এর একটি তৈরি করতে। যদি ভালো কোনো পৃষ্ঠপোষক পায় তাহলে হিরণ এটিকে বাণিজ্যিকভাবে বাজারজাত করবে বলে জানায়।
বিনোদপুর চৌরাস্তা বাজার বণিক সমিতির সভাপতি হরসিত ঘোষ বলেন, হিরণের বাবা হাট-বাজারে গান গাওয়াসহ বিভিন্ন সময় নানা ধরনের কাজ করে সংসার চালাতো। হিরণ ও রনি লেখাপড়া করতো, ওদের মেধা ভালো ছিল। বাবা মারা যাওয়ার পর সংসারের হাল ধরতে গিয়ে লেখাপড়া শিখতে পারেনি। সহযোগিতা পেলে হিরণের মতো মেধাবিরা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে সক্ষম হবে।