হাইলাইটস

পাঁচ কিশোরী এনেছে আন্তর্জাতিক পুরস্কার

পাঁচ কিশোরী এনেছে আন্তর্জাতিক পুরস্কার
পাঁচ কিশোরী এনেছে আন্তর্জাতিক পুরস্কার

বদ্ধ ঘরে থেকেও যে জগৎ দেখা যায়, প্রমাণ করেছে কলেজ পর্যায়ে পড়ুয়া পাঁচ কিশোরীর দল। মহামারির কারণে তাদের বেশির ভাগ সময় চার দেয়ালের মধ্যেই কাটছে। তাই বলে চিন্তা বা মননকে বেঁধে রাখা যায়নি। আন্তর্জাতিক পর্যায়ের স্বীকৃতি এনেছে তারা। টোয়েন্টিফোর আওয়ার রেস নামে হংকংভিত্তিক একটি যুব উন্নয়নমূলক প্রতিষ্ঠান আয়োজিত সিডিং ক্যাম্পেইন প্রতিযোগিতায় বিজয়ী নির্বাচিত হয়েছে এই কিশোরীদের দল।

চূড়ান্ত পর্বে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব ওয়ারউইক, ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভানিয়ার মতো খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের হারিয়ে বিজয়ী হিসেবে ২০ হাজার হংকং ডলার (দুই লাখ টাকার বেশি) পুরস্কার পেয়েছে বাংলাদেশের মেয়েরা।

পাঁচ কিশোরীর এই দলের অন্যতম সদস্য সেবন্তী খন্দকার ও সেজাল রহমান পড়ছে ঢাকার সানবীমস স্কুলে দ্বাদশ শ্রেণিতে। দ্য আগা খান স্কুলে একই বর্ষে পড়ছে রাঈদা সিদ্দিকী। অন্যদিকে সানিডেইল স্কুল থেকে সদ্য এ লেভেল সম্পন্ন করেছে রাইয়ান খান। আর রামিশা কাবির পড়াশোনা করছে হংকংয়ের এলপিসি ইউনাইটেড ওয়ার্ল্ড কলেজে।

রামিশা মূলত এই প্রতিযোগিতার ব্যাপারে তার বাংলাদেশের বন্ধুদের জানায়। বিশ্বের যেকোনো প্রান্তের ১৫ থেকে ২৩ বছর বয়সী শিক্ষার্থীরা এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারে। তাই তারা নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করে গত জুন মাসে প্রতিযোগিতার জন্য আবেদন করে। প্রতিযোগিতার প্রথম ধাপে তারা ‘রিলিফ’ নামে একটি সামাজিক ব্যবসা প্রকল্পের প্রস্তাব জমা দেয়। তাঁদের এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হলো তথ্যপ্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে শহুরে বাগান বা আরবান গার্ডেনিংকে জনপ্রিয় করে তোলা।

পুরো ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকার নার্সারিগুলোকে একটি অনলাইন সেবা মাধ্যমে সংযুক্ত করার পরিকল্পনা তৈরি করেছে মেয়েরা। ক্রেতারা ঘরে বসেই পছন্দের গাছ অর্ডার করতে পারবেন, গাছ পৌঁছে যাবে দরজায়। গাছ ছাড়াও টব, সার, মাটিসহ গাছ লাগানোর বিভিন্ন উপকরণ মিলবে এই অনলাইন প্ল্যাটফর্মে। এ ছাড়াও অনলাইনে মালির খোঁজ পাওয়া যাবে, যিনি বাসায় এসে গাছের সব ধরনের পরিচর্যা করবেন।

ভাবনাটা যে বিচারকদের পছন্দ হয়েছে, তা ফলাফলই বলে দিচ্ছে। প্রথম ধাপেই নির্বাচিত সেরা ১০ প্রকল্পের মধ্যে স্থান করে নেয় রিলিফ। পরে প্রতিযোগিতার নিয়মানুযায়ী ১০টি দল প্রায় ৬ থেকে ৮ সপ্তাহব্যাপী একটি ক্যাম্পেইন পরিচালনা করে। এই সময়ের মধ্যে প্রকল্পের ভাবনা আরও ঘষামাজা করতে আয়োজক সংস্থাটি প্রতিযোগীদের বিভিন্ন পরামর্শ দেয়। ধীরে ধীরে দাঁড়িয়ে যায় প্রকল্পের চূড়ান্ত কাঠামো। জোগাড়যন্ত্র, বিষয়বস্তু উন্নয়ন, উপস্থাপন—এসব নিয়ে কাজ করেন রাঈদা, সেজাল, সেবন্তী ও রামিশা। অন্যদিকে গ্রাফিকস ও ওয়েবসাইটের কাজের দায়িত্ব পড়ে রাইয়ানের কাঁধে। প্রকল্পের অংশ হিসেবে একটি ডেমো ওয়েবসাইট বানায় তারা। এরপর সব গুছিয়ে ভার্চ্যুয়াল প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে বিচারকদের সামনে পুরো প্রকল্পটি তুলে ধরে বাংলাদেশের মেয়েরা।

বিজনেস মডেল বা মার্কেটিং—এই বিষয়গুলো সম্পর্কে আমাদের তেমন অভিজ্ঞতা নেই। এই ধরনের বিষয়ে পরিবারের বড়দের কাছ থেকে আমরা সহায়তা নিয়েছি। সেজাল রহমান, শিক্ষার্থী, সানবীমস স্কুল

বিচারকদের রায়ের পাশাপাশি চূড়ান্ত ফলাফল নির্ধারণের ক্ষেত্রে সাধারণের ভোটও আমলে নেওয়া হয়। ভোটাভুটির এই ধাপে উতরে যায় কিশোরী দল। ফলে বিচারকদের রায় আর পাবলিক ভোট মিলিয়ে ১৮ আগস্ট বিজয়ীর খেতাব পেয়ে যায় প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ থেকে উপস্থাপিত একমাত্র প্রকল্প—রিলিফ।

ভালো সংবাদের সর্বশেষ খবর পেতে গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি অনুসরণ করুন

এমন আরো সংবাদ

Back to top button