সপ্তাহ দুয়েক ধরে সাগরে ইলিশ কম ধরা পড়ছে। এ জন্য চলতি মাসে তিন-তিনটি লঘুচাপকে দায়ী করেছেন মৎস্য ব্যবসায়ী ও বিশেষজ্ঞরা। তবে সাগর শান্ত হলে আগামী মাসের মাঝামাঝি নাগাদ ইলিশ পাওয়া নিয়ে আশাবাদী তাঁরা। আশার কথা আরও আছে। এ বছর ইলিশের গড় ওজন বেড়ে ১ কেজি ছুঁই ছুঁই বলে জানালেন মৎস্যবিজ্ঞানীরা। সাগরে মাছ ধরার ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা উঠে গেছে। তা-ও প্রায় এক মাসের বেশি হলো। গত ২৪ জুলাই থেকে জেলেরা সাগরে মাছ ধরার সুযোগ পাওয়ার পর প্রথম দুই সপ্তাহ ইলিশ ভালোই ধরা পড়ছিল। কিন্তু দুই সপ্তাহ ধরে সাগর-নদীতে যেন ইলিশের আকাল পড়েছে। গতকাল শনিবার বরগুনা ট্রলার ও মৎস্য সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে কথাগুলো বললেন। তবে এবার ইলিশ পাওয়া নিয়ে খুব বেশি হতাশও নন তিনি। তাঁর মতে, সাগর শান্ত হলে ইলিশ বাড়তে পারে। গত বছর এই সময় ইলিশ কম ছিল। সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে ইলিশ ধরা বেড়ে যায়।
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট, মৎস্য অধিদপ্তর ও মৎস্যসম্পদবিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা ওয়ার্ল্ড ফিশ বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরা বলছেন, চলতি মাসে বঙ্গোপসাগরে তিনটি লঘুচাপ তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট ও ওয়ার্ল্ড ফিশ বাংলাদেশ থেকে নিয়মিতভাবে বাংলাদেশের ইলিশের ওজন ও আকৃতি পর্যবেক্ষণ করা হয়। তাতে দেখা গেছে, গত পাঁচ বছরে দেশের ইলিশের গড় ওজন প্রায় ৩০০ গ্রাম বেড়েছে। পাঁচ বছর আগে ধরা পড়া ইলিশের অর্ধেকই ছিল ছোট ও মাঝারি আকৃতির। আর বড় ইলিশ পাওয়া যেত ২০ থেকে ৩০ শতাংশ। চলতি বছর এ পর্যন্ত ধরা পড়া ইলিশের ৭০ শতাংশের ওজন ৫৫০ থেকে ১ হাজার ২৫০ গ্রাম। এর মধ্যে ৫৫০ থেকে ৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ হচ্ছে ৫৫ শতাংশ এবং ১ কেজি থেকে ১ কেজি ২৫০ গ্রাম ওজনের ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে ১৫ শতাংশ। গত বছর ইলিশের গড় ওজন ছিল ৮৭০ গ্রাম। এবার তা ৯১৫ গ্রামে দাঁড়িয়েছে।
ওজন ও আকৃতি বেড়ে যাওয়ায় দেশে ইলিশের মোট উৎপাদনও বেড়ে গেছে। গত এক যুগে ইলিশের উৎপাদন দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে। প্রতি বছরই ইলিশের উৎপাদন ২০ থেকে ৪০ টন করে বাড়ছে। গত বছর ইলিশের উৎপাদন ছিল ৫ লাখ ৭০ হাজার টন। এ বছর তা ছয় লাখ টনে পৌঁছানোর সম্ভাবনা দেখছে মৎস্য অধিদপ্তর। জানতে চাইলে ওয়ার্ল্ড ফিশ বাংলাদেশের ইকোফিশ প্রকল্প-২-এর দলনেতা অধ্যাপক আবদুল ওয়াহাব প্রথম আলোকে বলেন, ইলিশ রক্ষায় সরকার এ পর্যন্ত যে কটি পদক্ষেপ নিয়েছে, তার প্রতিটি বিজ্ঞানসম্মতভাবে নেওয়া হয়েছে। আর এর বাস্তবায়নও বেশ কঠোরভাবে করা হয়েছে। তবে ইলিশের উৎপাদন প্রায় ৭ লাখ টনে উন্নীত করা সম্ভব বলে উল্লেখ করেন তিনি। এ জন্য ইলিশ ধরার জাল ব্যবহারের ক্ষেত্রে সরকার যে নতুন নিয়ম করেছে, তার কঠোর বাস্তবায়ন করতে হবে।