প্রবাস

নিউইয়র্কে সড়ক দুর্ঘটনায় বাংলাদেশী দুই ভাইসহ ৩জনের মৃত্যু

আহত আরেক ভাই হাসপাতালে

nyনিউইয়র্কে বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত ফাহিম সালেহ হত্যার পর দুই সপ্তাহ আগে একইদিনে পৃথক তিনটি ঘটনায় তিনজন বাংলাদেশী তরুণের অকাল মৃত্যুর শোক কাটতে না কাটতেই বাংলাদেশী কমিউনিটি আবারো শোক সাগরে পতিত হলেন। সোমবার (১৭ আগষ্ট) দিবাগত মধ্যরাতে বাংলাদেশী দুই ভাইসহ তিনজন নিহত এবং অপর ভাইসহ দু’জন আহত হয়েছেন। নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের বাফেলো সিটি থেকে নিউইয়র্ক সিটিতে ফেরার সময় রচেস্টার এলাকায় মুখোমুখি দুই গাড়ীর সংঘর্ষে মারাত্নক এই দূর্ঘটনা ঘটে। এতে যুক্তরাষ্ট্র ছাত্রলীগের সাবেক প্রচার সম্পাদক ও ময়মনসিংহ বিভাগীয় তারুণ্য নামক সামাজিক সংগঠনের নেতা মোজাম্মেল হক রাসেল (২৭) ও তার ছোট ভাই হিমেল আকরাম জয় (২৫) এবং অপর গাড়ীর চালক চার্লস বারগারস্টোক (৮১) ঘটনাস্থলেই মারা যান। দূর্ঘটনায় রাসেল-হিমেলের ছোট ভাই আনিসুল হক আপেল (২৩) এবং তাদের সাথে থাকা কেনেডি অপি (১৮) গুরুতর আহত হন। আহতদেরকে নিকটস্থ রচেস্টার স্ট্রং মেমরিয়াল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বিপরীত দিক থেকে (ভুল পথে) আসা একটি গাড়ির সাথে রাসেল-হিমেল-আপেলদের ঘাড়ীর মুখোমুখী সংঘর্ষ হয়। রাসেল-হিমেল-আপেলদের গ্রামের বাড়ী ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার চন্ডীপাশা। আর চার্লস বারগারস্টোক ওহাইয়ো অঙ্গরাজ্যের বাসিন্দা বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।
জানা গেছে, নিহত বাংলাদেশীরা নিউইয়র্ক সিটির এস্টোরিয়ায় সপরিবারে বসবাস করছিলেন। তাদের বাবা সিরাজুল ইসলাম ভূঁইয়া নিউইয়র্কের বোর্ড অব ইলেকশন কমিশনের কর্মকর্তা। রাসেল-হিমেল-আপেলরা তিন ভাই আর এক বোন ছিলেন। মৃত্যুকালে রাসেল স্ত্রী সহ ৬ বছরের এক কন্যা আর ৬ মাস বয়সী অপর এক কন্যা রেখে যান। নিহত রাসের ছিলেন তাদের পরিবারের অন্যতম উপার্যনক্ষম ব্যক্তি। অপরদিকে হিমেল বিবাহের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। আগামী ২/৩ মাসের মধ্যেই তার বিয়ের কথা ছিলো। একই সাথে দুই পুত্র হারিয়ে বাকরুদ্ধ সিরাজুল ইসলাম ভূইয়ার পরিবার। মঙ্গলবার দুপুরে এস্টোরিয়ায় তাদের বাসায় গিয়ে এমন দৃশ্যই দেখা যায়।
রাসেল-হিমেল-আপেলদের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, নিউইয়র্কের জীবনযাত্রা ব্যয়বহুল হওয়ায় এবং মহামারী করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে তারা সিউইয়র্ক সিটি থেকে বাফেলো সিটিতে ‘মুভ’ (স্থায়ীভাবে চলে যাওয়া) করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো। এজন্যই তারা তিন ভাই মিলে বাফেলোর খোঁজখবর নিতে সেখানে গিয়েছিলেন। বাফেলো থেকে ফেরার পথে তারা পৃথিবীর সপ্তম আশ্চর্যের একটি বিশ্বখ্যাত ‘নায়েগ্রা জলপ্রপাত’ দেখে সোমবার দিবাগত রাতে নায়েগ্রা থেকে সিউইয়র্ক সিটির উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। গভীর রাতে ফেরার সময় নিউইয়র্কের আপষ্টেটের রচেস্টার কাউন্টিতে তারা দূর্ঘটনার শিকার হন।
পুলিশের বরাত দিয়ে সিরাজুল ইসলাম ভূঁইয়া জানান, মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনার জন্য আমার সন্তানরা দায়ী নয়। টহল পুলিশ আমাকে টেলিফোনে জানায় যে, ভুলপথে আসা গাড়ির ড্রাইভার এই দূর্ঘটনার জন্যে দায়ী। সন্তানদের মরদেহ আনতে তিনি মঙ্গলবার রচেস্টার কাউন্টিতে গেছেন। ময়না তদন্তের পর দুই ভাই রাসেল-হিমেল এর মরদেহ নিউইয়র্ক আনার পর কোথায় তাদের দাফন করা হবে পরবর্তীতে তার সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। দূর্ঘটনায় আহত আপেল আশংকামুক্ত।
এদিকে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় বাংলাদেশী দুই ভাইয়ের অকাল মৃত্যুতে কমিউনিটিতে গভীর শোকের ছায়া নেমে এসেছে। এতে গভীর উদ্বেগ এবং নিহতদের জন্যে শোক জানিয়েছেন নিউইয়র্কে কন্সাল জেনারেল সাদিয়া ফয়জুননেসা। এছাড়াও গভীর শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করেছেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ আজাদ, নিউইয়র্ক ষ্টেট আওয়ামী লীগের সভাপতি মুজিবুর রহমান মিয়া ও সাধারণ সম্পাদক শাহীন আজমল, মুক্তিযোদ্ধা শরাফ সরকার, এডভোকেট মোর্শেদা জামান।
ময়মনসিংহ বিভাগীয় তারুণ্য ইউএসএ-এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা এবং ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা হুমায়ুন কবীর খান, ময়মনসিংহ বিভাগীয় তারুণ্য ইউএসএ-এর অন্যতম উপদেষ্টা বেলাল আহমেদ, সভাপতি খালেকুজ্জামান সুমন, সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম মনির, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সারোয়ার হোসেন চন্দন, মহিলা সম্পাদিকা খাদিজা মিতু, সদস্য আব্দুল আল মুরাদ প্রমুখ মঙ্গলবার দুপুরে নিহতের এস্টোরিয়া বাসায় গিয়ে শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করেন।

এমন আরো সংবাদ

Back to top button