অর্থনীতিপ্রবাসলিড নিউজ

দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেমিটেন্স আসছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে

 নিউ ইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসে বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশির বসবাস।
নিউ ইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসে বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশির বসবাস।

প্রবাসী বাংলাদেশিরা যে টাকা দেশে তাদের স্বজনদের কাছে পাঠাচ্ছেন, তার মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেমিটেন্স এখন আসছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে; সেইসঙ্গে বাড়ছে প্রবাসী বন্ডে বিনিয়োগের অংক। চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী বাংলাদেশিরা ৩৪ কোটি ৩৫ লাখ ডলারের রেমিটেন্স দেশে পাঠিয়েছেন, যা গত বছরের একই মাসে পাঠানো অর্থের দ্বিগুণেরও বেশি। ২০১৯ সালের জুলাইয়ে ১৫ কোটি ৬০ লাখ ডলার দেশে পাঠিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসীরা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, প্রতিবছর দেশে যে রেমিটেন্স আসে তার প্রায় অর্ধেক পাঠান সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত বাংলাদেশিরা।

স্বাধীনতার পর থেকেই সবচেয়ে বেশি রেমিটেন্স আসছে সৌদি আরব থেকে। এতদিন দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল সংযুক্ত আরব আমিরাত। তবে গত সাত মাস ধরে আমিরাতকে ডিঙিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকছে যুক্তরাষ্ট্র।

এর ফলে গত অর্থবছর যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা রেমিটেন্সের পরিমাণ প্রথমবারের মত ২০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে ২৪০ কোটি ডলারে পৌঁছায়।

২০১৯-২০ অর্থবছরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী বাংলাদেশিরা এক হাজার ৮২০ কোটি ৫০ লাখ ডলারের রেমিটেন্স দেশে পাঠিয়েছেন।

এর মধ্যে সৌদি আরব থেকে ৪০১ কোটি ৫১ লাখ ডলার; সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে ২৪৭ কোটি ২৫ লাখ ডলার এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২৪০ কোটি ৩৪ লাখ ডলার দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।

২০১৮-১৯ অর্থবছরে সৌদি আরব প্রবাসীরা ৩১১ কোটি ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছিলেন। সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে এসেছিল ২৫৪ কোটি ডলার। আর যুক্তরাষ্ট্র থেকে এসেছিল ১৮৪ কোটি ৩০ লাখ ডলার।

এ হিসাবে গত অর্থবছরে সৌদি আরব থেকে রেমিটেন্স বেড়েছে ২৯ দশমিক ১ শতাংশ। আমিরাত থেকে কমেছে ২ দশমিক ৭ শতাংশ। আর যুক্তরাষ্ট্র থেকে বেড়েছে সবচেয়ে বেশি, ৩০ দশমিক ৪ শতাংশ।

চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে সৌদি আরব থেকে এসেছে ৬৩ কোটি ২৬ লাখ ডলার, যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসীরা পাঠিয়েছেন ৩৪ কোটি ৩৫ লাখ ডলার। আর সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে এসেছে ২৮ কোটি ৫৩ লাখ ডলার।

২০১২ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে বেশি রেমিটেন্স আসত কুয়েত থেকে। একক দেশ হিসেবে কুয়েত থেকে আসা রেমিটেন্সের পরিমাণ এখন চুতর্থ সর্বোচ্চ।

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে এক কোটি ২০ লাখ বাংলাদেশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থান করছেন। তাদের বড় অংশই রয়েছেন মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে, কাজ করছেন বিভিন্ন শ্রমঘন পেশায়।

যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত বাংলাদেশির সংখ্যা প্রায় আট লাখ; এর মধ্যে নিউ ইয়র্কেই থাকেন আড়াই লাখের মত। নিউ ইয়র্কের জ্যাকসন হাইটস ও জ্যামাইকায় বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশির বসবাস।

ইউএসএ-বাংলাদেশ ডেমোক্র্যাটিক ক্লাবের চেয়ারম্যান হাসানুজ্জামান হাসান নিউ ইয়র্কেই থোকেন। টেলিফোনে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে এখন যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রবাসীরা যে টাকা দেশে পাঠাচ্ছেন, তার প্রায় পুরোটাই ব্যাংকিং চ্যানেলে যাচ্ছে। সে কারণেই এখন বেশি রেমিটেন্স পাচ্ছে বাংলাদেশ।

“তবে ইউএসএ থেকে রেমিটেন্স বাড়ার একটি বড় কারণ হল বাংলাদেশ সরকারের ২ শতাংশ নগদ প্রণোদনা। এখন যদি কেউ এখান থেকে ১০০ ডলার দেশে পাঠান, তাহলে এর সঙ্গে বাড়তি ১৭০ টাকার মত প্রণোদনা পান। সে কারণেই প্রবাসীরা বেশি রেমিটেন্স পাঠাতে উৎসাহী হচ্ছেন।”

হাসানুজ্জামান বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে প্রবাসী বাংলাদেশির সংখ্যা বাড়ছে। নানা পেশায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছেন তারা। অনেকের উপার্জনও ভালো।

“যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাংকে টাকা রাখলে মুনাফা পাওয়া যায় না। কিন্তু দেশে টাকা পাঠিয়ে প্রবাসী বন্ড কিনলে ১২ শতাংশ পর্যন্ত মুনাফা পাওয়া যায়। ২ শতাংশ হারে নগদ প্রণোদনা এবং বন্ড কিনে মুনাফার আশায় এখন ইউএসএ থেকে বেশি রেমিটেন্স পাঠাচ্ছেন প্রবাসীরা।”

প্রবাসী এই ব্যবসায়ী বলেন, মধ্যপাচ্যের দেশগুলোতে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের তুলনায় যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসীরা পেশগতভাবে ‘তুলনামূলকভাবে ভালো অবস্থানে’ আছেন। ফলে তাদের উপার্জনও হয় বেশি।

“সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র থেকে যারা দেশে টাকা পাঠান, তারা তুলনামূলকভাবে একটু বেশি অর্থ দেশে পাঠাতে পারেন। এদের অনেকেই আবার বন্ডে বিনিয়োগ করেন।”

হাসানুজ্জামান বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাস মহামারী ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়লেও গণহারে চাকরি হারানোর ভয় নেই। আপাতত কিছুদিন আয় হয়ত কমে যাবে, তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে থাকলে সে সমস্যাও মিটে যাবে।

ফলে আগামী দিনগুলোতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে রেমিটেন্স প্রবাহে খুব বেশি সমস্যা হবে বলে মনে করছেন না এই ব্যবসায়ী।

“ঠিকঠাক কাগজপত্র নেই- এমন অনেক প্রবাসীও নিউ ইয়র্কে বসবাস করেন। মহামারীর সময়ে ট্রাম্প সরকার তাদেরকেও প্রণোদনা দিচ্ছে। এই প্রণোদনার অর্থও অনেকে পরিচিত কারো ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে দেশে পরিবার-পরিজনের কাছে পাঠাচ্ছেন।”

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষক রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান জায়েদ বখতও মনে করেন, মহামারীর মধ্যেও রেকর্ড রেমিটেন্স আসার পেছনে ২ শতাংশ নগদ সহায়তা এবং হুন্ডি বন্ধ হওয়ার বিষয়টি ভূমিকা রেখেছে।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “আমেরিকা থেকে যে রেমিটেন্স বাড়ছে, সেটা একটা ভালো খবর। এটা যদি আগামীতেও অব্যাহত থাকে তাহলে কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে মধ্যপাচ্যের দেশগুলো থেকে রেমিটেন্স কমে গেলেও সামগ্রিক রেমিটেন্সপ্রবাহ যদি ইতিবাচক থাকে তাহলে আমাদের অর্থনীতির জন্য খুবই ভালো হবে।” অনেক উন্নত দেশেই ব্যাংকে টাকা রেখে মুনাফা পাওয়া পায় না। সে কারণে প্রবাসীদের অনেকে মাসের খরচ মেটানোর পর যে টাকা সঞ্চয় করেন, তা কোথায় রাখবেন তা নিয়ে চিন্তায় থাকেন।

সেই টাকা দেশে পাঠিয়ে তারা যাতে লাভবান হতে পারেন, সেজন্য বাংলাদেশে রয়েছে ওয়েজ আর্নার ডেভেলপমেন্ট বন্ড, তিন বছর মেয়াদি ইউএস ডলার প্রিমিয়াম বন্ড এবং ইউএস ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ড।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ৩০ জুন পর্যন্ত এই তিন বন্ডে ১৫ হাজার কোটি টাকার মত বিনিয়োগ করেছেন প্রবাসীরা।

এমন আরো সংবাদ

Back to top button