টাকার অংকে এখন পর্যন্ত দেশের সবচেয়ে বড় প্রকল্প রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ। দুটি টারবাইন আইল্যান্ড, কুলিং ওয়াটার সিস্টেম, ট্রেনিং সেন্টারসহ প্রকল্পের ছয়টি লটের নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার। নভেল করোনাভাইরাসের (কভিড-১৯) সংক্রমণের এ প্রতিকূল সময়ে এসেও নির্মাণকাজ অব্যাহত রেখেছে প্রতিষ্ঠানটি। প্রকৌশলী-কর্মী-শ্রমিকদের জন্য রাখা হয়েছে সব ধরনের নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা। রূপপুর প্রকল্পের কাজ আরো গতিশীল করতে এরই মধ্যে ১ হাজার ২০০ কর্মী নিয়োগ দিয়া হয়েছে। কর্মীদের সাইটে পাঠানোর আগে প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব খরচে কভিড-১৯ পরীক্ষাও করা হয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশ রেলওয়েতে যে কয়টি বড় প্রকল্পের কাজ চলছে, অগ্রগতি আর ব্যবস্থাপনায় সবচেয়ে ভালো অবস্থানে আছে দোহাজারী-রামু-কক্সবাজার এবং রামু-গুনদুম সিঙ্গেল লাইন ডুয়াল ট্র্যাক রেললাইনের নির্মাণকাজ। রেলওয়ের ব্যবস্থাপনা আর ঠিকাদারদের চেষ্টায় লক্ষ্যমাত্রা ধরেই এগিয়ে যাচ্ছে রেললাইনটির নির্মাণকাজ। প্রকল্পটির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশের (লট-২; চকরিয়া-কক্সবাজার) কাজ বাস্তবায়ন করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড। করোনাকালে এ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান একদিনের জন্যও বন্ধ রাখেনি প্রকল্পটির নির্মাণকাজ।
রেলওয়ের আরেকটি প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন করছে ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার। আখাউড়া থেকে লাকসাম পর্যন্ত বিদ্যমান রেললাইনটি সংস্কার করে ডুয়াল গেজ ডাবল লাইন নির্মাণ করছে প্রতিষ্ঠানটি। দোহাজারী-রামুর মতো এ প্রকল্পের অগ্রগতিও সন্তোষজনক।
চট্টগ্রামের লালখান বাজার ইন্টারসেকশন থেকে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত সাড়ে ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজ করছে ম্যাক্স। সাব কন্ট্রাক্টর মিলিয়ে প্রকল্পটিতে কর্মরত আছেন প্রায় তিন হাজার কর্মী। সরকারের অগ্রাধিকারে থাকা প্রকল্পগুলোর মধ্যে চট্টগ্রামের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েটি আছে ১৮ নম্বরে। ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে এক্সপ্রেসওয়েটির নির্মাণকাজ শুরু করে ম্যাক্স। তখন থেকে পুরোদমে কাজ চললেও ‘লকডাউনে’ নানা চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়ে প্রকল্পটি। নির্মাণসামগ্রী পরিবহন, প্রকৌশলী-কর্মীদের চলাচল—সবই বিঘ্নিত হতে থাকে। তার পরও গুরুত্ব বুঝে কাজ অব্যাহত রাখে ম্যাক্স। শ্রমিক-কর্মী-প্রকৌশলীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা, সুরক্ষা উপকরণ সরবরাহের পাশাপাশি তাদের আর্থিক সুরক্ষার বিষয়টিও গুরুত্ব দিয়েছে ম্যাক্স গ্রুপ, যার ধারাবাহিকতায় দেড় বছরের মাথায় এসে প্রায় ৩০ শতাংশ নির্মাণকাজ গুছিয়ে এনেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি। অস্বাভাবিক কোনো পরিস্থিতি তৈরি না হলে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই এক্সপ্রেসওয়ের কাজ শেষ করার প্রত্যাশা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের।
শ্রীপুরে ১৫০ মেগাওয়াটের পাওয়ার প্লান্ট, আমিনবাজার থেকে গোপালগঞ্জ পর্যন্ত ৪০০ কেভি বিদ্যুৎ ট্রান্সমিশন লাইন নির্মাণের কাজ মহামারীর মধ্যেও অব্যাহত রেখেছে ম্যাক্স। এর বাইরে পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় ৬৭৭ মিটার দীর্ঘ সেতুসহ বেশকিছু ছোট-বড় প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন করছে প্রতিষ্ঠানটি। প্রতিকূলতা থাকলেও এসব প্রকল্পের কাজও একদিনের জন্য বন্ধ থাকেনি। ম্যাক্স গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইউনিটের সিইও কাজী ইয়ামিনুর রশিদ তূর্য বলেন, করোনা মহামারীর এ দুঃসময়ে আমরা একদিনের জন্যও আমাদের বাস্তবায়নাধীন মেগা প্রকল্পগুলোর কাজ বন্ধ রাখিনি। আমাদের গ্রুপে কমবেশি নয় হাজার কর্মী কাজ করছেন। এদের বেশির ভাগকেই আমরা বাড়িতে থেকে কাজ করার সুযোগ দিয়েছি। অত্যাবশ্যকীয় কাজে যাদের অফিসে আসতে হয়েছে, তাদের নিয়মিত গাড়ি সুবিধা দেয়া হচ্ছে।
বর্তমানে ম্যাক্স গ্রুপে নয় হাজার বেশি নিয়মিত কর্মী কাজ করছেন। গত মার্চে নভেল করোনাভাইরাসের কারণে যখন সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার, তখন থেকেই ম্যাক্সের কর্মীদের সিংহভাগ অংশ বাড়িতে থেকে কাজ করছেন। এ সময়ে একজন কর্মীও ছাঁটাই করেনি প্রতিষ্ঠানটি। প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তাদের দাবি, এ সময়ে কর্মীর বেতনও ঠিকঠাক দেয়া হচ্ছে।