খালা মামাদের স্মৃতি
মাইজদিতে নানার বাড়িতেই সত্তরের দশকের শেষে আর আশির দশকের শুরুতে, আমার এক্কেবারে আন্ডাকালে, লিখা শিখার বহু আগেই খাতা-কলম-কালি-পেন্সিলের সাথে পরিচয়। আমার খালাদের দেখতাম বই পড়ার পাশাপাশি নিয়ম কইরা একটু ‘চিকনা-লম্বাটে’ অথবা ‘চওড়া-চ্যাপ্টা’ খাতায় অংক করতেন, বাংলা-ইংরেজী লিখতেন আর নানা সাব্জেক্ট এর ‘নোট’ করতেন।
হার্ড কভারের বাইন্ড করা খাতা খুব বেশী দেখি নাই। বরং দোকান থিকা কয়েক ‘দিস্তা’ সাদা কাগজ একসাথে কিনা সেখান থিকাই আলাদা আলাদা কইরা কয়েকটা খাতা সিলাই করতেন! আব্বার কাছ থিকাই শুনি ঐ লম্বা খাতাগুলো হইল ‘ফুল স্ক্যাপ’ সাইজ (যেইটা উত্তর আমেরিকায় লিগ্যাল পেপার) আর চ্যাপ্টা খাতাগুলা হইল ‘ডিমাই’। কয়েকটা খাতারে উনারা বলতেন ‘রাফ খাতা’ যেইটাতে বাংলা, অংক, ইংরেজী সবকিছুই লিখা হইতো।
নিউজ বা হোয়াইট প্রিন্টের এই রাফ খাতাগুলা একটু মোটা হইতো, খুব বেশী যত্ন কইরা লিখতে হইতোনা বইলা একটু কাটাকাটিও মনে হয় বেশী থাকতো। হোয়াইট প্রিন্ট কাগজে কালি কলমের ব্যবহার বেশী থাকলেও নিউজপ্রিন্ট এর উপর লেখার জন্য উনারা রেডলিফ বা দেশীয় সস্তা কিছু ‘শীষ’ কলমের ব্যবহার করতেন-‘ওয়ান টাইম ইউজ’ বলপেন বাজারে আসে নাই তখনো। যাই হোক খালাদের নোট করার দিস্তা খাতাগুলা ছিল অনেক পরিষ্কার- সাদা কাগজের উপর কালি কলমের লেখা অনেক বেশী ফুইটা উঠতো, দেখতেও অনেক সুন্দর লাগতো।
নতুন পৃষ্ঠায় লিখা শুরুর আগে দেখতাম উনারা খাতার উপরে আর সাইডে কাঠের রুলার দিয়া দুইটা লাইন টাইনা নিতেন। রুলার না থাকলে হাত দিয়া খাতার উপর-নীচ আর সাইড ভাঁজ কইরা নতুন পৃষ্ঠায় লিখা শুরু করতেন।
এই রকম রুল ছাড়া সাদা খাতায় উনাদের হাতের লিখা কেমনে এত সোজা থাকতো এইটা ছিল একটা বিস্ময়! ‘রুল’ করা বা ‘লাইন’ টানা দিস্তা খাতা খুব একটা চোখে পড়ে নাই তবে নীল রংয়ের লাইন টানা দুই একটা ছোট সাইজের বাইন্ড করা খাতা দেখছি। এই খাতাগুলার প্রতিটা পৃষ্ঠায় উপরের দুইটা লাইন কেন নীল না হয়া লাল হইতো আর অন্য লাইনের থিকা একটু বেশী কাছাকাছি থাকতো এইটা নিয়া খুব কৌতুহল হলেও পরে এইটা হইলো গিয়া একটা ‘ডিজাইন’-গুরুত্বপূর্ন কিছু না। আম্মা মাঝেমাঝে আমাদের দুই ভাইরে দুপুরে খাওয়ানোর পর খালাদেরকে পাটীগনিত-বীজগনিত করাইতে বসতেন। অংক করার সময় উনাদের মুখে ‘এ প্লাস বি হোল স্কয়ার’, ‘প্লাসে প্লাসে প্লাস’ কিন্তু ‘মাইনাসে মাইনাসে প্লাস’ এই ‘সূত্র’ গুলা অনেক শুনছি কিন্তু বুঝতামনা এগুলার মানে কি।
মাঝেমাঝে কানে আসতো এই ‘সূত্র’ গুলা না জানলে বীজগনিত বা জ্যামিতি করা যায়না। মনে মনে উনাদের মত ‘সূত্র’ ইউজ কইরা বীজগনিত বা জ্যামিতি করার ইচ্ছা জাগতো। কিন্তু এর আগে তো বড় হইতে হইবো, পড়ালিখা শিখতে হইবো! (চলবে) ..