ফেসবুক স্ট্যাটাস থেকে
লেখক হুমায়ুন আহমেদের প্রতি প্রয়াণ দিবসে শ্রদ্ধাঞ্জলি
সে-ও অনেক অ নে ক দিন আগের ঘটনা।
বিশ্ববিদ্যালয়ে এক শিক্ষক জয়েন করলেন কোন এক ডিপার্টমেন্টে। কিন্তু তিনি মোটেও ক্লাস নেন না। বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেন আর যান। এমনকি ক্লাসরুমে ঢুকলেও পড়ান না, সবার সাথে একটু হাই-হ্যালো ক’রে তখনই বের হয়ে আসেন। এই যখন অবস্থা, এটা দেখে সবাই প্রথমে আশ্চর্য হল। পরে তারা মহাআশ্চর্য হল। পরে বাধ্য হয়ে সেই শিক্ষকের বিরুদ্ধে কয়েকজন মামলাও করল। সবাই ভাবল, যাক, এবার শিক্ষকের হয়ত বিকার হবে। কিন্তু একি! তাতেও যে তার কোনো বিকার নেই!
পরে কোর্টে যখন তাকে ডাকা হল তখন তিনি কোর্টে গেলেন বুক ফুলিয়ে। আত্মপক্ষ সমর্থন করতে গিয়ে তিনি বললেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লেকচারার হিসেবে জয়েন করলে যে ক্লাশ নিতে হবে তা বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতি মালায় কোথাও লেখা নেই।’
বলা বাহুল্য তিনি সেই মামলায় জিতে গেলেন। আসলেই সেই সময় নীতিমালায় সেটা লেখা ছিল না। পরে তা যুক্ত করা হয়েছিল।
যে কোনো বিষয়েই অস্পষ্টতা মারাত্মক ফল বয়ে আনতে পারে। অস্পষ্টতার এই গল্পটি প্রয়াত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ-এর ক্যাম্পাসজীবনের মৌখিক গল্প থেকে নেওয়া। তার অনূজ আহসান হাবীবের স্মৃতিচারণামূলক লেখা থেকে ধার করেছি।
আজ সাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদের প্রয়াণ দিবস। তার সাহিত্য নিয়ে তুমুল আলোচনা হয়। এমনকি পক্ষে-বিপক্ষেও বাহাস হয়। এখানেই হুমায়ুন আহমেদ সার্থক। আমি তার সাহিত্যের যে বিষয়টিকে বেশি মূল্যবান মনে করি, সেটি হল সহজভাষায় তিনি সাহিত্যে কথা বলে গেছেন। তার বই তরুনরা লাইন ধরে কিনেছেন। আজকের মতো ফেসবুক গ্রুপ করে, লেখকদের নিয়ে ঝাক তৈরি করে, পরস্পরে লাইক-শেয়ার বিনিময় করে তার বইয়ের প্রচার চালাতে হয়নি। পাঠক ভাল লাগা থেকেই তার বই কিনে পড়েছেন। বইবিমুখ একটি জাতিকে নতুন করে তিনি বইমুখী করেছেন।
অনেকে অভিযোগ আনেন, তার সাহিত্যে নাকি গভীরতা নেই! ‘সাহিত্যের গভীরতা’ বিষয়টি উচুমার্গীয় একটি টার্ম। এ দেশে এটি বহুল আলোচিত বিষয়। হুমায়ুন নিজের মতো লিখতেন। তিনি যদি রবীন্দ্রনাথ বা নজরুলের মতো লেখার ক্ষমতা রাখতেন, আমার বিশ্বাস তিনি সেভাবে লিখতেন না। ভাল লেখকরা কাউকে অনুকরণ না করে নিজের মত লিখতে চান। সেভাবেই লেখেন। হুমায়ুন সহজ ভাষায় নিজের মত করে লিখতেন। গভীরতার দিকে তিনি ইচ্ছে করেই হয়ত মনোযোগ দেননি। তাতে তার সাহিত্য কম গুরুত্বপূর্ণ হয়ে যায়নি। তিনি এই সময়ে পাঠকদের নিবিড়ভাবে দেখেছেন, তাদের মতো করেই তিনি লিখেছেন। এ কারনেই তিনি তরুনদের প্রিয় লেখক হয়ে উঠেছিলেন।
লেখক হুমায়ুন আহমেদের প্রতি প্রয়াণ দিবসে শ্রদ্ধাঞ্জলি।