লিড নিউজ

যুক্তরাষ্ট্র থেকে ১ বিলিয়ন ডলারের সয়াবিন আনবে সিটি, মেঘনা ও ডেল্টা

ইউএসএসইসির সঙ্গে আগ্রহপত্র সই

রাজধানীর একটি হোটেলে গতকাল যুক্তরাষ্ট্রের সয়াবিন এক্সপোর্ট কাউন্সিলের সঙ্গে বাংলাদেশের তিন প্রতিষ্ঠানের সয়াবিন আমদানিসংক্রান্ত এলওআই স্বাক্ষর হয় | ছবি: ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাস যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ১ বিলিয়ন ডলারের সয়াবিন কিনবে বাংলাদেশের তিন শীর্ষ সয়াবিন প্রক্রিয়াজাত প্রতিষ্ঠান—মেঘনা গ্রুপ, সিটি গ্রুপ ও ডেল্টা এগ্রো ফুড। আগামী এক বছরে এ সয়াবিন আমদানি করা হবে। রাজধানীর একটি হোটেলে গতকাল যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থা ইউএস সয়াবিন এক্সপোর্ট কাউন্সিল (ইউএসএসইসি) ও ইউএস সয়ের সঙ্গে দেশীয় তিন প্রতিষ্ঠান আগ্রহপত্র (এলওআই) সই করেছে।

অনুষ্ঠানে ইউএসএসইসির পক্ষে সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক কেভিন এম রুকা এবং বাংলাদেশের পক্ষে মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল, ডেল্টা এগ্রো ফুডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিরুল হক ও সিটি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. হাসান চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। অনুষ্ঠানে মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালক তানজিমা মোস্তফা, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) নাসের এজাজ বিজয়সহ প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

ডেল্টা এগ্রো ফুডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিরুল হক বলেন, ‘ইউএসএসইসির সঙ্গে সয়াবিন কেনার চুক্তি করতে পেরে আমরা অত্যন্ত আনন্দিত। শুধু সয়াবিনই নয়, যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমরা অপরিশোধিত জ্বালানি তেল ও এলপিজি আমদানি করতে পারি। চাহিদা অনুসারে এ তিনটি পণ্য আমদানি করা হলে বছরে এর পরিমাণ সাড়ে ৩ বিলিয়ন ডলারের মতো হবে, যা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনতে সহায়ক হবে।’

এ চুক্তির ফলে বাংলাদেশের ভোক্তারা প্রতিযোগিতামূলক দামে সয়াবিন তেল পাবেন বলে জানান মেঘনা গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. মোস্তফা কামাল। গ্রুপটির পরিচালক তানজিমা মোস্তফা বলেন, ‘আমরা আজকে শুধু একটি এলওআই স্বাক্ষর করছি না, বরং এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের কৃষক ও আমাদের পরিবারের মধ্যে সেতুবন্ধ তৈরি করলাম।’ বাণিজ্যসংক্রান্ত বিভিন্ন বাধা দূর করার বিষয়ে তিনি উদ্যোগ নেয়ার অনুরোধ জানান।

সিটি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. হাসান বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে সয়াবিন আমদানির এ চুক্তি স্বাক্ষরের ক্ষেত্রে যাদের অবদান রয়েছে আমি তাদের সবাইকে ধন্যবাদ জানাই। সিটি গ্রুপের পক্ষ থেকে আমরা ভোক্তাদের উচ্চমানসম্পন্ন সয়াবিনের নিশ্চয়তা দিচ্ছি।’

সয়াবিন রফতানির মাধ্যমে ব্যবসায়িক সম্পর্ক বাড়ার পাশাপাশি বাংলাদেশে খাদ্যনিরাপত্তা ও পুষ্টি নিশ্চিত হবে বলে মনে করেন ইউএসএসইসির সিইও কেভিন এম রোপকে। সংগঠনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) জিম সাত্তারও অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যোগ দেন। তিনি তার বক্তব্যে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশ উভয়েই এর মাধ্যমে নিজেদের এগিয়ে নিয়ে যেতে সক্ষম হবে। বাংলাদেশকে সহায়তা করার জন্য আমরা প্রস্তুত আছি।’

এ চুক্তিকে স্বাগত জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স ট্রেসি জ্যাকবসন বলেন, ‘বাংলাদেশের বাজার এখন যুক্তরাষ্ট্রের রফতানির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ গন্তব্যে পরিণত হয়েছে। এ চুক্তির ফলে বাংলাদেশের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সয়াবিন বিক্রি আগামী বছর তিন গুণ বৃদ্ধি পাবে, যা দুই দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ককে করবে আরো সুদৃঢ়।’

যুক্তরাষ্ট্রের সেনসাস ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ৮৩৬ কোটি ডলারের পণ্য রফতানি করেছে বাংলাদেশ। একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করেছে ২২১ কোটি ডলারের পণ্য। এ হিসাবে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি ৬১৫ কোটি ডলারের। তাই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আরোপিত শুল্ক থেকে রেহাই পেতে দেশটির গম, এলএনজি, উড়োজাহাজসহ বেশকিছু পণ্য আমদানির মাধ্যমে বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত আগস্টে বাংলাদেশের ওপর আরোপিত শুল্ক ৩৫ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশে নামিয়ে আনেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। এরই মধ্যে গম আমদানি শুরু করেছে বাংলাদেশ। সে ধারাবাহিকতায় এবার বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা যুক্তরাষ্ট্র থেকে সয়াবিন আনার উদ্যোগ নিয়েছেন।

বাংলাদেশে প্রতি বছর ২০-২২ লাখ টন সয়াবিন আমদানি হয়ে থাকে, যার সিংহভাগই আসে ব্রাজিল থেকে। তবে দক্ষিণ আমেরিকার দেশটির তুলনায় বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের সয়াবিনের দাম কিছুটা কম থাকায় সেখান থেকে বাংলাদেশে সয়াবিন আমদানি বাড়তে পারে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। এরই মধ্যে মেঘনা গ্রুপ আট লাখ টন সয়াবিন আমদানি করেছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে।

এমন আরো সংবাদ

Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker