১৩০ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখেন দালাই লামা

তিব্বতি বৌদ্ধদের ধর্মীয় নেতা দালাই লামা আরও অন্তত ৪০ বছর, বা মোট ১৩০ বছরেরও বেশি বাঁচার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, তিনি আশা করেন—তিনি ১৩০ বছরের বেশি বাঁচবেন। মৃত্যুর পর তিনি পুনর্জন্ম নিয়ে তিব্বতি বৌদ্ধধর্মের প্রধান হিসেবে আবার ফিরে আসবেন বলেও ভক্তদের আশ্বাস দিয়েছেন। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, আজ শনিবার ভারতের হিমাচলের ধর্মশালায় তাঁর দীর্ঘ জীবন কামনায় আয়োজিত এক প্রার্থনা অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন দলাই লামা। এদিন হাজারো ভক্ত, সন্ন্যাসী এবং বিভিন্ন দেশের অতিথিরা ওই অনুষ্ঠানে যোগ দেন। আগামীকাল রোববার তাঁর ৯০ তম জন্মদিন।
অনুষ্ঠানে দলাই লামা বলেন, ‘আমি এখন পর্যন্ত বৌদ্ধধর্ম এবং তিব্বতের মানুষের জন্য যথেষ্ট ভালোভাবে কাজ করতে পেরেছি। এখনো আশা করি, আমি ১৩০ বছরের বেশি বাঁচব।’ তাঁর এ কথা শুনে উপস্থিত ভক্তরা হাততালি ও উল্লাসে ফেটে পড়েন।
ইতিমধ্যে দলাই লামা তিব্বতি বৌদ্ধধর্মের সবচেয়ে দীর্ঘজীবী নেতা হিসেবে ইতিহাসে ঠাঁই করে নিয়েছেন। ধর্মশালায় অবস্থিত তাঁর আশ্রমে তিনি প্রায় ৯০ মিনিট সময় কাটান। ১৯৫৯ সালে চীনের বিরুদ্ধে ব্যর্থ বিদ্রোহের পর তিনি ভারতে আশ্রয় নেন এবং তারপর থেকেই ধর্মশালায় বসবাস করছেন। তিব্বতের ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চায় চীন। দেশটি দলাই লামাকে ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী’ মনে করে এবং তাঁর উত্তরসূরি নির্বাচনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিজেদের হাতেই রাখতে চায়। এ নিয়ে দলের লামা বলেন, তাঁর উত্তরসূরি বেছে নেওয়ার একমাত্র অধিকার অলাভজনক প্রতিষ্ঠান ‘গাডেন ফোড্রাং ট্রাস্টের’ হাতে থাকবে। তিনি আগেই ঘোষণা দিয়েছেন, তাঁর পুনর্জন্ম হবে ‘মুক্ত বিশ্বে’, অর্থাৎ চীনের বাইরে।
এদিনের অনুষ্ঠানে মূল মন্দিরের সামনে বুদ্ধমূর্তির সামনে বসেন দলাই লামা। তাঁর সামনে সারিবদ্ধ হয়ে বসেন সন্ন্যাসীরা। ভক্ত ও সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে পুরো মন্দির চত্বর ছিল সরগরম। ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের পাশাপাশি সন্ন্যাসীরা বাজিয়েছেন ঝাঁঝরা ও বিশেষ বাদ্যযন্ত্র।
ওরাকল বা ভবিষ্যদ্বক্তারা এবং আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্বরাও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। মোহে কাঁপতে কাঁপতে তারা তাদের গুরু দলাই লামার প্রতি শ্রদ্ধা জানান। দলাই লামা বলেন, ‘আমি প্রতিদিন সকল জীবের মঙ্গল কামনায় প্রার্থনা করি। আমি বিশ্বাস করি, তিব্বতের অভিভাবক দেবতা অবলোকিতেশ্বরের আশীর্বাদ আমার ওপর আছে। অনেক ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ীও তাই মনে হয়। আমি যা পেরেছি, করেছি। এখন আশা করি আরও ৩০ থেকে ৪০ বছর বাঁচব।’ জন্মদিনের অনুষ্ঠানে ভারতের শীর্ষ মন্ত্রী, যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতিকসহ হাজারো ভক্ত উপস্থিত থাকবেন। ১৯৮৯ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত দলাই লামা স্বাধীনতার জন্য নয়, বরং তিব্বতের বিশেষ ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক ও জাতিগত পরিচয় রক্ষার জন্য স্বায়ত্তশাসনের দাবি জানিয়ে আসছেন।