প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনায় দুপুর ১২টায় এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল এ বৈঠকে উপস্থিত থাকবে। বিএনপির মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান বণিক বার্তাকে গতকাল এ বৈঠক সম্পর্কে নিশ্চিত করেছেন।
নির্বাচনসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করতে সময় চাওয়া হয়েছিল বিএনপির পক্ষ থেকে। তাদের চাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে বৈঠকের সময় নির্ধারণ করা হয়েছে বলে ৯ এপ্রিল জানিয়েছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমেদ। সেদিন তিনি বণিক বার্তাকে বলেছিলেন, ‘আগামী ডিসেম্বরের আগেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে প্রধান উপদেষ্টা ইতিমধ্যে বলেছেন। আসন্ন বৈঠকে এ বিষয়ে পরিষ্কার রোডম্যাপ জাতির সামনে উপস্থাপন করার দাবি করব। এছাড়া অন্যান্য রাজনৈতিক বিষয় আলোচনা হবে।’
গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে ৯ এপ্রিল সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমরা প্রধান উপদেষ্টার কাছে সুনির্দিষ্টভাবে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য ডিসেম্বরের আগে একটা রোডম্যাপ অবশ্যই চাইব, যাতে তিনি ক্লিয়ারলি জাতির সামনে যথাযথ প্রক্রিয়ায় উপস্থাপন করেন।’ নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আলোচনার কথা তুলে ধরে বিএনপির এ নেতা বলেন, ‘তারা (নির্বাচন কমিশন) জুনের মধ্যে সব প্রস্তুতি সমাপ্ত করতে পারবে এবং প্রধান উপদেষ্টা এর আগে আমাদের আশ্বস্ত করেছেন ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সব কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছেন। যেহেতু বিভিন্ন পক্ষের বক্তব্যে একটা ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে, সেটা পরিষ্কার করার জন্য আমরা তার কাছে আহ্বান জানাব।’
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই দ্রুততম সময়ে নির্বাচনের জন্য একটি রোডম্যাপ দাবি করে আসছিল বিএনপি। কিন্তু জাতির উদ্দেশে দেয়া প্রধান উপদেষ্টার ভাষণগুলোয় তা না থাকায় আক্ষেপও প্রকাশ করেছিল দলটি। পরে জাতির উদ্দেশে দেয়া এক ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা চলতি বছরের শেষে বা আগামী বছরের শুরুতে নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় উল্লেখ করেন। তাতেও অবশ্য সন্তুষ্ট হয়নি বিএনপি। বরং জামায়াতসহ কিছু দল ও সংগঠন নির্বাচনের আগে সংস্কারের বিষয়কে গুরুত্ব দিলে তাতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বিএনপি। নির্বাচন ইস্যুতে দীর্ঘ সময়ের মিত্র জামায়াতের সঙ্গেও দৃশ্যমান বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে দলটি। জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র, রাষ্ট্রপতিকে অপসারণ ও আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবি নিয়েও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের ওপর বিরক্ত বিএনপি।
সব মিলিয়ে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণায় বিলম্ব, সংস্কার ইস্যু, উপদেষ্টাদের বিভিন্ন মন্তব্য, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দায়ের করা রাজনৈতিক মামলা প্রত্যাহারসহ বেশকিছু বিষয়েই অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে বিএনপির দূরত্ব বেড়েই চলেছে। দুই পক্ষের এ ব্যবধান কমাতে বারবারই সংলাপের আহ্বান জানিয়ে আসছে বিএনপি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত
এদিকে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকের আগে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল রাত সোয়া ৮টায় রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়ে বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন।
বৈঠকে নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা ইস্যুতে নিজেদের আলোচ্যসূচি নির্ধারণ করে বিএনপি। এছাড়া ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়টিও আলোচনায় গুরুত্ব পায়। বৈঠকে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্যদের মধ্যে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাউদ্দিন আহমদ, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন ও বেগম সেলিমা রহমান উপস্থিত ছিলেন।