মতামত

করোনভাইরাস মহামারী গরীবদের জন্য জরুরি পদক্ষেপ নিন

bangladeshi male poor সংক্রমন নিয়ন্ত্রণের জন্য জরুরি ব্যবস্থা না নেয়া হলে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে চার কোটি মানুষ মারা যেতে পারে। এ আশঙ্কার কথা জানিয়েছে লন্ডনের ইম্পেরিয়াল কলেজ। এ পূর্বাভাসে যে বিপর্যয়কর প্রাণহানির কথা বলা হয়েছে তা ঠেকাতে বিশে^র দরিদ্র ও গৃহহীনদের সাহায্য করতে হবে।
করোনাভাইরাস যে বিঘ্ন সৃষ্টি করেছে তার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অন্যতম পদক্ষেপ হল লকডাউন, কোয়ারাইনটান এবং বাড়ি থেকে কাজ করার ব্যবস্থা। স্থিতিশীল চাকরি, খাবারের জন্য পর্যাপ্ত অর্থ এবং নাগালের মধ্যে স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ থাকলে মানুষজন আয়েশের সাথে ভাইরাস সংক্রমনের এ সময়কাল পেরিয়ে যেতে পারত। তবে এটি বিশ^জুড়ে শরণার্থী শিবির এবং বস্তিতে বসবাসকারীদের জন্য এক বিলাস কল্পনা।
দরিদ্রদের ঘরবাড়িও নেই এবং কোন নিরাপত্তাও নেই। তারা পুরোপুরি এ ভাইরাসের ঝুঁকিতে আছেন। তাই যখন গবেষণায় দেখা যায় যে, সমাজের প্রান্তিক লোকদের এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার ও বেশি করে মারা যাবার সম্ভাবনা রয়েছে তখন অবাক হওয়ার কিছু থাকে না।
এ মানুষেরা ছোট জায়গায় অনেকের সাথে ভাগাভাগি করে বাস করেন, যাতে করে সংক্রমনের ঝুঁকি বাড়ে। করোনা ভাইরাস বিরোধী যুদ্ধের কারণে দৈহিক শ্রমের উপর নির্ভরশীল লোকদের কাজ হারাতে হচ্ছে। বিশেষ করে দিন মজুররা তাদের খাবার ও ওষুধ কেনার অর্থ রোজগার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
বাংলাদেশের শ্রমজীবি মানুষেরা এ ক্ষেত্রে এক বাস্তব উদাহরণ। সংক্রমন রোধে সরকারের পক্ষ থেকে লকডাউনের ঘোষণায় বিভিন্ন কল কারখানার পাশাপাশি, রিকশাওয়ালা, দিন মজুরসহ নানা ধরণের মানুষ বেকার হয়ে যান। এ পরিস্থিতিতে তারা নিজ নিজ ঠিকানায় ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার এ সময়ে হাজার হাজার মানুষ বাস স্টেশন, ট্রেন স্টেশনগুলোতে ভীড় জমান। গণ পরিবহনগুলোতে গাদাগাদি করে ফিরে যান গ্রামের বাড়িতে। তাদের অনেকে হয়ত এমন জায়গায় করোনাভাইরাস বহন করে নিয়ে গেছেন যেখানে কোন চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থা নেই।
হঠাৎ করেই বুদ্ধিদীপ্ত একটি পদক্ষেপ প্রহসনে পরিণত হয়। এ পদক্ষেপে গরীবদের কথা বিবেচনা করা হয়নি। বরং তা তাদের উপকার করতে যেয়ে পাল্টা ক্ষতি করে বসেছে। অর্থনৈতিক প্রণোদনার যে ঘোষণা এসেছে তাতেও তারা অবহেলিত রয়ে গেছেন।
এ ভাইরাস যে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছে তার মোকাবেলায় বিশ^জুড়ে ধনী-গরীবের পার্থক্য প্রকট হয়ে উঠেছে। দুর্বল স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা নিয়ে গরীব দেশগুলো এ ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে, সমৃদ্ধশালী দেশগুলো তাদের ব্যবসা বাঁচাতে ট্রিলিয়ন ডলারের প্রণোদনা ঘোষণা করছে। সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্য এর আগে কখনও এতটা প্রকট হয়ে দেখা দেয়নি।
এটি আমাদের সময়ের অন্যতম বড় সঙ্কট। এটি এমন একটি সঙ্কট যার মোকাবেলায় আন্তর্জাতিক সাড়া প্রয়োজন। প্রয়োজন নিম্ন আয়ের মানুষদের সাহায্যের জন্য একটি বিশদ পরিকল্পনার।
আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে দরিদ্র দেশগুলোর ঋণ মওকুফের বিষয়টি বিবেচনা করতে হবে। এর পাশাপাশি ধনী রাষ্ট্রগুলোর পক্ষ থেকে অভাবী রাষ্ট্রগুলোকে প্রয়োজনীয় ত্রাণ ও স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা দিতে হবে। নিম্ন আয়ের মানুষদের জন্য বিনামূল্যে রোগ নির্ধারণ ও চিকিৎসার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
করোনাভাইরাস বিশে^র কোটি কোটি মানুষকে হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছে। কিন্তু আমাদের মধ্যে সবচেয়ে কম সম্পদশালীরা এর ক্ষত বহন করবে।

# আবু তাহির মুস্তাকিম (atmustakim@gmail.com)

এমন আরো সংবাদ

Back to top button