প্রবাস

মালয়েশিয়ায় পাম বাগানে বিদেশী কর্মী নিয়োগে সরকারের ঘোষণা

আহমাদুল কবির, মালয়েশিয়া:
তেল পাম খাতে বিদেশী কর্মীদের জন্য আবেদনপত্র উন্মুক্ত করেছে  মালয়েশিয়া সরকার। দেশটির  স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দিন নাসুসন ইসমাইল বলেছেন, সরকার বিদেশী কর্মীদের আবেদন বিবেচনা করার জন্য উন্মুক্ত, বিশেষ করে তেল পাম বাগান খাতের জন্য।

তিনি বলেন, যদিও সরকার গত বছর থেকে বিদেশী কর্মী নিয়োগ স্থগিত রেখেছে, তবুও শ্রমিক সংকটের কারণে প্ল্যান্টেশন ও পণ্য মন্ত্রণালয় থেকে বিদেশী কর্মী নিয়োগের জন্য অনুরোধ এসেছে।

“(উদ্ভিদ ও পণ্যমন্ত্রী) জোহারি গনি অনুরোধ করেছেন যে আমরা বৃক্ষরোপণ কর্মীদের জন্য আবেদন প্রক্রিয়াটি খুলে দেই, বিশেষ করে সাবাহ এবং সারাওয়াকে যেখানে বৃক্ষরোপণ পরিচালকরা তাদের ফসল কাটা না হলে ক্ষতির সম্মুখীন হন। বুহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি)  ইউনিভার্সিটি টেকনোলজি মারাতে এক অনুষ্টানে এ ঘোষণা দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

তিনি বলেন, কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে বৃক্ষরোপণ ও পণ্য মন্ত্রণালয়কে এই খাতের নির্দিষ্ট চাহিদা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য প্রদান করতে বলা হয়েছে।

“আমরা প্রথমে বাগান কোম্পানিগুলিকে জিজ্ঞাসা করব যে তাদের কতজন শ্রমিক প্রয়োজন, এবং তারপর  চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য বৈঠক করার আগে সংখ্যাগুলি যাচাই এবং নিশ্চিত করবে কর্তৃপক্ষ।
সাইফুদ্দিন পূর্বে উল্লেখ করেছিলেন যে বিদেশী কর্মী কোটার আবেদনের উপর স্থগিতাদেশ ঘোষণার তারিখ পর্যন্ত বহাল থাকবে, কারণ বিদেশী কর্মীর সংখ্যা সরকার কর্তৃক নির্ধারিত সর্বোচ্চ সীমার কাছাকাছি পৌঁছে গেছে।

তিনি বলেন, বিদেশী কর্মীর মোট সংখ্যা দ্বাদশ মালয়েশিয়া পরিকল্পনায় অর্থনীতি মন্ত্রণালয়ের লক্ষ্যমাত্রা দ্বারা পরিচালিত হয়, যাতে বিদেশী কর্মীরা দেশের মোট কর্মীশক্তির ১৫% এর বেশি না হয়।
গেলো বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর এক বিজ্ঞপ্তিতে মালেশিয়াস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশন জানায়, মালয়েয়িশয়ার নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে ‘চাহিদাপত্র’ সত্যায়ন করার ঘোষণার মধ্যে দিয়ে বন্ধ থাকা কলিং ভিসা আবারো চালুর বিষয়টি নিশ্চিত করে বাংলাদেশ হাইকমিশন।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মালয়েশিয়া সরকার নতুন করে তাদের প্ল্যান্টেশন সেক্টরে বিদেশি কর্মী নিয়োগের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। মালয়েশিয়ার সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় কর্তৃক ইতোমধ্যে মালয়েশিয়ায় কর্মী নিয়োগের কোটা অনুমোদন করা শুরু হয়েছে। বাংলাদেশ হাইকমিশনের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে প্ল্যান্টেশন সেক্টরের চাহিদাপত্র ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে সত্যায়ন করা হচ্ছে। মালয়েশিয়ায় কর্মী নিয়োগের চাহিদাপত্র সত্যায়নের জন্য বিজ্ঞপ্তিতে চাওয়া তথ্যাদি বাংলাদেশ হাইকমিশনে জমা প্রদানের জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করে হাইকমিশন।

সে সময় দেশটির নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের জন্য বাংলাদেশ হাইকমিশনের পক্ষ থেকে যেসব তথ্য চাওয়া হয় সে গোলো হল, কোম্পানির অনুমোদনপত্র (কমপক্ষে কোম্পানির একজন কর্মচারী হতে হবে ম্যানেজার পর্যায়ে), সত্যায়ন ফি’র মূল ব্যাংক স্লিপ, শ্রমিকদের সবশেষ বেতন স্লিপ (চার/পাঁচজন শ্রমিকের নমুনা বেতন স্লিপ), কোম্পানির পটভূমি তথ্যের একটি প্রোফাইল যেখানে উল্লেখ থাকবে বিদ্যমান শ্রমিকের সংখ্যা (দেশী ও বিদেশী), শ্রমিকদের দুই/তিনজনের ফোন নম্বর, কোম্পানির ব্যাংক স্টেটমেন্ট (বিগত তিন মাসের) যেখানে ১০০ শ্রমিকের জন্য ন্যূনতম ব্যালেন্স থাকতে হবে দুই লাখ মালয়েশিয়ান রিঙ্গিত।

এছাড়াও বিদেশিখ শ্রমিক ক্ষতিপূরণ প্রকল্পের সকসো নথি (বিদ্যমান কর্মীদের নমুনা নথি), বিদেশি কর্মীদের হাসপাতালে ভর্তি এবং সার্জিকা এক স্কিম (এসপিআইকেপিএ) (এসকেএইচপিপিএ)-এর নথি (বিদ্যমান শ্রমিকদের নমুনা নথি), বিদ্যমান শ্রমিকদের আবাসন সম্পর্কে জেটিকে অনুমোদিত সার্টিফিকেট, জমির মালিকানার দলিল/জমি ইজারা দলিল, প্রতিশ্রুতি/গ্যারান্টিপত্র, পরিচালকের স্বাক্ষরিত ডিমান্ড লেটার, পাওয়ার অব অ্যাটর্নি, কর্মসংস্থান চুক্তি, রিক্রুটিং এজেন্ট (বিআরএ) এবং কোম্পানির মধ্যে চুক্তি, মালয়েশিয়ার সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় কর্তৃক কোটা অনুমোদন পত্রসহ সকল নথির দুই সেট তৈরি করে এক সেট মূল এবং এক সেট অনুলিপি হিসেবে দিতে হবে। এসব তথ্য পাওয়া গেলেই সংশ্লিষ্ট কোম্পানীকে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগের অনুমতি দেওয়া হবে।

এ ক্ষেত্রে মালয়েশিয়ায় প্ল্যান্টেশন সেক্টরে বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগের সত্যায়নের মেয়াদ শেষ হয় ৩১ ডিসেম্বর। জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) থেকে বহির্গমন ছাড়পত্র নেওয়ার শেষ তারিখ ছিল  ১৫ জানুয়ারি ২০২৫ এবং দেশটির সরকার প্ল্যান্টেশন সেক্টরের জন্য নির্বাচিত বাংলাদেশি কর্মীদের মালয়েশিয়ায় প্রবেশের সর্বশেষ সময়সীমা চলতি মাসের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়। এ ক্ষেত্রে কতজন বাংলাদেশি কর্মী নির্বাচিত হয়েছেন তা জানা যায়নি।

এমন আরো সংবাদ

Back to top button