বিদেশহাইলাইটস

আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে মোটিভেশনাল বক্তব্য দিলেন ড. ইউনূস

ড. ইউনূস বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিখ্যাত আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে এক ঐতিহাসিক ভাষণ দেন।তিনি ১৯ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৭টায় আল আজহার কনফারেন্স পৌঁছালে মিশরে অধ্যায়নরত বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা তাকে দেখে উচ্ছ্বাসে ফেটে পরেন।

প্রধান উপদেষ্টা ইংরেজি ভাষায় ৪০ মিনিটের মোটিভেশনাল বক্তব্যে বাংলাদেশের দরিদ্র বিমোচনে ক্ষুদ্র ঋণের মাধ্যমে গ্রামীণ ব্যাংক ও গ্রামীণ টেলিফোনের ভূমিকা তুলে ধরে বলেন জব তথা চাকরি কোন সুন্দর সমাধান নয়, এটি কখনো ভালো সিদ্ধান্ত হতে পারে না, বরং ব্যবসাই চমৎকার সিদ্ধান্ত।

যেখানে উপস্থিত ছিলেন আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. সালামা দাউদ, উপ-উপাচার্য ড. মাহমুদ সিদ্দিক, দু’দেশের বিভিন্ন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা, বাংলাদেশ দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত মিস সামিনা নাজ ও মিশরে অধ্যায়নরত  বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের এক বিশাল অংশ।

ড. ইউনুস আল আজহারের প্রতি তাঁর গভীর শ্রদ্ধা এবং ঐতিহাসিক প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের সাথে থাকার আনন্দ প্রকাশ করে বলেন, আল আজহারের মতো একটি ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানে আসা আমার জন্য বিশাল সম্মানের। আমি এর আগে মিশরে এসে দূর থেকে আল আজহারকে দেখেছি। আজ এখানে এসে কথা বলার সুযোগ পাওয়া আমার জীবনের এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা।

ড. ইউনূস
oplus_2

ড. ইউনূস আল আজহারের বিশাল শিক্ষার্থী বহর এবং এর বিশ্বব্যাপী ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা করে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, “আপনারা যারা এখানে অধ্যয়ন করেছেন, তাদের জন্য এটি একটি বিরল সুযোগ। এখানকার শিক্ষা আপনাদের দৃষ্টিভঙ্গি প্রসারিত করবে এবং আপনাদের মানবতার বৃহত্তর কল্যাণে অবদান রাখতে সাহায্য করবে।

ড. ইউনুস আল আজহারকে একটি মেলবন্ধন হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, এটি বিভিন্ন ইসলামী মতাদর্শের মিলনস্থল। এখানে হানাফি, মালিকি, শাফি এবং হাম্বলি্য মতবাদসহ ইসলামে স্বীকৃত বিভিন্ন ধারার চিন্তাধারা সমানভাবে সমাদৃত। ইসলামের প্রাথমিক যুগে যে মূল্যবোধ মানুষকে আকৃষ্ট করেছিল, আল আজহার এখনও তা ধারণ করে আছে।

তিনি আরও বলেন, আল আজহার শুধু ধর্মীয় জ্ঞানচর্চার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; এটি বিজ্ঞান এবং নৈতিকতার ক্ষেত্রেও মানুষের মধ্যে অনুসন্ধিৎসার অনুপ্রেরণা জাগিয়ে তোলে।

বাংলাদেশে আল আজহারের প্রভাব উল্লেখ করে ড. ইউনুস  করে বলেন,  আল আজহারের প্রভাব বাংলাদেশের ইতিহাসে সুদূরপ্রসারী। এই প্রতিষ্ঠানের গ্র্যাজুয়েট বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা আমাদের দেশে সুফিবাদ প্রসার ঘটিয়েছেন, যা আমাদের সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয়েছে।  আজও আল আজহারের পণ্ডিতদের মতামত আমাদের দেশে অত্যন্ত শ্রদ্ধার সঙ্গে বিবেচিত হয় এবং এটি আমাদের ধর্মীয় ও সামাজিক জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

ড. ইউনুস তাঁর বক্তব্যে  ক্ষুদ্র ঋণ প্রকল্পের আওতায় কীভাবে দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াই এবং আপন দেশে টেকসই মানবিক সাহায্যের ব্যবস্থা যায় তা উল্লেখ করে বলেন, ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান গুলোকে শুধুমাত্র বড় বিনিয়োগকারীদের জন্য সীমাবদ্ধ না রেখে দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে সহজ শর্তে ঋণ প্রদানে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। সৃজনশীল চিন্তাভাবনা এবং নতুন সমাধানের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার জন্যে তরুণদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, দারিদ্র্য বিমোচন ও মানুষকে সাহায্য করার এ মহান দায়িত্ব তরুণদেরই বহন করতে হবে।

ইসলামি মূল্যবোধের আলোকে নতুন শিক্ষা ব্যবস্থা গঠনের গুরুত্ব তুলে ধরে ড. ইউনুস বলেন  ইসলামের মূল্যবোধ ও নীতির আলোকে এই পৃথিবীতে আমাদের একটি নতুন অবস্থান গ্রহণের সময় এসেছে। বিশ্ববাসীর সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে সম্প্রীতি বজায় রেখে আমাদের আবারও সক্রিয়ভাবে যুক্ত হওয়া প্রয়োজন। আমি আশা করি, আল আজহার আমাদের সমাজে সেই প্রয়োজনীয় পরিবর্তনের নেতৃত্ব দেবে। এই প্রতিষ্ঠানের জ্ঞান বিজ্ঞান,  নৈতিকতার এবং আধ্যাত্মিকতার সর্বজনীন বার্তা শুধু বিশ্বব্যাপী মুসলমানদেরই নয়, বরং সমগ্র মানবতাকেই একটি ভারসাম্যপূর্ণ ও সুসংগঠিত সভ্যতা গ্রহণে অনুপ্রাণিত করতে পারে।

এমন আরো সংবাদ

Back to top button