এমন একটি সময়, যখন পুরো দুনিয়ায় সংক্রামক করোনায় গত দুই মাসে গড়ে প্রতিদিন ৭০০’র বেশি মানুষ মারা গেছেন। মোট মিলিয়ে সংখ্যাটা ৫৩হাজারের বেশি। সক্রমন ঘটেছে ১০ লক্ষ্যের বেশি মানুষের মাঝে। বৈশ্বিক এই বাস্তবতায় খুঁজি নিজেদের অবস্থান। তথ্য নিয়মিত দিয়ে যাচ্ছে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইইডিসিআর।
প্রতিষ্ঠানটি বলছে ২৮ জানুয়ারি থেকে ৩ এপ্রিল পর্যন্ত তারা ২৪শ’র কিছু বেশি নমুনা পরীক্ষা করেছেন। সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা ৬১। যার মধ্যে মারা গেছেন ৬জন করোনা রোগী। হিসেব এই পর্যন্তই যদি সহজ করে বুঝি তাহলে দাঁড়ায় অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের নমুনা পরীক্ষার হার কম, তাই আক্রান্তও কম।
কিন্তু ৬১ জনের মধ্যে ৬ জনের মৃত্যু মনে করিয়ে দেয় দেশে করোনায় মৃত্যু হার প্রায় ১০শতাংশের কাছাকাছি এবং এটি অবশ্যই উদ্বেগের। কোভিড-১৯ পরিস্থিতি নিয়ে সার্বক্ষণিক নজর রাখছে এমন একটি ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডওমিটারস ডট ইনফো বলছে দক্ষিণ এশিয়ায় করোনায় মৃত্যু হারের শীর্ষদেশ বাংলাদেশ। যেখানে ভারতে মৃত্যুর হার ২.৮৫ শতাংশ, পকিস্তানে ১.৩৫ শতাংশ, আফগানিস্তানে ১.৬৭ শতাংশ, শ্রীলঙ্কায় ২.০৩ শতাংশ এবং বাংলাদেশে ৯.৮৪শতাংশ।
এই হিসেব নিয়েও রয়েছে বিস্তর মতভেদ। নিজেদের সক্ষমতার সবটুকু দিয়ে সেই সব প্রশ্নের উত্তর খুঁজে চলেছে আইইডিসিআর। বিজ্ঞানের ছাত্র হিসেবে শিখেছিলাম কোন সিস্টেমই ত্রুটি বিহীন হতে পারেনা। তাই ইফিসিয়েন্সি বা কর্মদক্ষতা নির্ণয়ের মত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবগুলোতে মেকানিক্যাল এরোর বা যান্ত্রিকত্রুটি বাদ দেওয়া হয়।
এখন প্রশ্নটি যদি এমন হয় দেশের করোনা পরিস্থিতির প্রকৃত চিত্র এটিই কিনা, তাহলে? সন্দেহ বা সংশয় থেকে নয় অনেকটা নিশ্চিত ভাবেই বলা যায় আক্রান্তের সংখ্যা অবশ্যই ৬১ জনের বেশি। দেশের স্বাস্থ্য সেবা ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতার কারনে আরও যে সংখ্যাটি যুক্ত হবে তা সময় সাপেক্ষ। আর সেটি হিসেব করা হলে মৃত্যু হার সংখ্যাতাত্ত্বিক ভাবে কমে আসবে। কিন্তু এই অসুখটির সবচেয়ে মারাত্মক দিক হলো সংক্রমণ প্রবণতা। সহজ বাংলায় ছোঁয়াচে। যার দরুন রোগটির কমিউনিটি ট্রান্সমিশন হতে পারে বা হচ্ছে।
এই দুর্ভাবনার সবগুলোই বিবেচনায় নিয়েছে সরকার। যার প্রমাণ সাধারণ ছুটি/বন্ধ ঘোষণা, স্বাস্থ্যসেবার পরিধি বাড়ানো, শৃঙখলা নিয়ন্ত্রণের প্রাণান্ত চেষ্টা, পুলিশের পাশাপাশি স্বশস্ত্র বাহিনীকে নিয়োজিত করা এবং আপদকালীন সহায়তা কার্যক্রম। রাষ্ট্রের এই কার্যক্রম কি যথেষ্ট? হয়তো না হয়তো হ্যাঁ।
কিন্তু এই প্রশ্নটির আগের প্রশ্নটি হওয়া উচিত এমন মারাত্মক একটি মহামারীতে রাষ্ট্রের দায় আছে, কিন্তু সমাজের কি কোন দায় নেই? ব্যক্তিগত উপলব্ধি অনেকটা এরকম; আমাদের পেট খায়, না খেয়ে মরবো, ভালো লাগা, মন্দ লাগা, দোষারোপ, বুঝিনা, মানিনা এইসবগুলো সমাজ রাষ্ট্রকে চাপিয়ে দিচ্ছে প্রতিদিন। আসছে দিনগুলোতে এই চাপিয়ে দেওয়ার প্রবণতা ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলবে নিশ্চিত। ভুলে গেলে চলবে না অসুখটির কোন ওষুধ এখনো আবিস্কৃত হয়নি।
এটি প্রতিরোধের সবচেয়ে সহজ ও কার্যকর উপায় ঘরে থাকা, জনসমাগম বন্ধ করা। স্পষ্ট বার্তাটি তাই; কিছুটা আতংকিত হোন, সচেতনতা বাড়ান।