তিন দিনব্যাপী ফেডারেশন অব বাংলাদেশি অ্যাসোসিয়েশনস ইন নর্থ আমেরিকা (ফোবানা) সম্মেলন ২০২৪ ভার্জিনিয়ার আর্লিংটনে অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে বাংলাদেশি প্রবাসীদের মিলনমেলা বসেছিল। ৩০ ও ৩১ আগস্ট এবং ১ সেপ্টেম্বরের এই আয়োজনে ছিল আনন্দ, সংস্কৃতি এবং দেশপ্রেমের ছোঁয়া। প্রতিদিনই সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালায় পরিপূর্ণ ছিল এবারের আয়োজন। এবারের ফোবানা সম্মেলনে ছিল না কোনো মিশ্র প্রতিক্রিয়া, ছিল শুধু একাত্মতা। সকলেই একমত ছিলেন, এটি ছিল এযাবৎকালের সবচেয়ে সুশৃঙ্খল এবং সফল ফোবানা।
সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, চলচ্চিত্র প্রদর্শনী, নাটক, বিজ্ঞানমেলা, গান, নাচ এবং অন্যান্য সাংস্কৃতিক আয়োজনের প্রতিটি পর্বে হোস্ট কমিটির আন্তরিকতা স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছিল। ফোবানার কনভেনার রোকসানা পারভীনকে সকলেই আন্তরিকভাবে সাধুবাদ জানিয়েছেন। উপস্থিত ছিলেন মেম্বার সেক্রেটারি আবু রুমি, হোস্ট প্রেসিডেন্ট নুরুল আমিন নুর, এন্থনি পিয়ুস গোমেজ, প্রদীপ ঘোষ, কচি খান, তাসকিন বিনতে সিদ্দিকী, করিম সালাউদ্দিন ।
প্রথম দিনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিশিষ্ট সাংবাদিক ইকবাল বাহার চৌধুরী, যিনি ৩৮ বছর আগে ফোবানার যাত্রা শুরু করেছিলেন। বক্তব্য রাখেন ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির চ্যান্সেলর ইঞ্জিনিয়ার আবুবকর হানিপ। বক্তব্য রাখেন ভার্জিনিয়ার স্টেট সেনেটর সাদ্দাম আসলান সেলিম, গাজালা এফ হাশমি, আর্লিংটন কাউন্টির রিজিওনাল ডিরেক্টর তানিয়া ট্যালেন্টো এবং স্কটিশ পার্লামেন্টের সদস্য ফয়সল চৌধুরী সহ আরও অনেকে।
দ্বিতীয় দিনে সন্ধ্যায় জমে ওঠে মূল মঞ্চ। একের পর এক সাংস্কৃতিক পরিবেশনা উপভোগ করেন কানায় কানায় পূর্ণ অডিটরিয়ামের দর্শকরা। তবে রাতের প্রধান আকর্ষণ ছিল বাংলাদেশের কিংবদন্তি শিল্পী কুমার বিশ্বজিৎ-এর গান।
তৃতীয় দিন শুরু হয় ফোবানার বার্ষিক সাধারণ সভা দিয়ে, যেখানে সকল অঙ্গ সংগঠনের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। দুপুরে শুরু হয় সেমিনার। ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির চ্যান্সেলর ইঞ্জিনিয়ার আবুবকর হানিপ যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষা ও ক্যারিয়ার গঠনের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি তুলে ধরেন কীভাবে ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির ট্রিপল মিশন—ডিগ্রি, স্কিল এবং ক্যারিয়ার—শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত করছে। দ্বিতীয় সেমিনারটি ছিল বাংলা ভাষার ব্যবহারিক দিক নিয়ে। এর মূল আলোচক ছিলেন ভয়েস অব আমেরিকার সাংবাদিক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক আনিস আহমেদ। সঞ্চালনায় ছিলেন অধ্যাপক ড. আমিনুর রহমান। ভাষার পরিবর্তন, ভাষার ব্যবহার ও অপব্যবহারের নানা দিক নিয়ে আলোচনা হয় এই সেমিনারে। অপর সেমিনারে অভীক সানোয়ার রহমান বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস নিয়ে আলোচনা করেন। তাঁর পর্বটি পরিচালনা করেন বিশিষ্ট সাংবাদিক রোকেয়া হায়দার।
এই দিনেও ড. তারেক মাহদি এবং মাহসাদুল আলম রুপামের নেতৃত্বে ইয়ুথ ফোরামের একাধিক উপস্থাপনা ছিল। দিনের শুরুতেই ছিলো আর্ট অব স্টোরি টেলিং- ফটো জার্নালিজম বিষয়ক কর্মশালা। যা পরিচালনায় ছিলেন নাজিয়া রহমান ও অ্যান্ড্রু বিরাজ। এই দিনেও তরুণদের সাফল্যের গল্পগুলো তুলে ধরা হয় এই ফোরামের আয়োজনে। ছিলো বিভিন্ন সাংস্কৃতিক পরিবেশনাও। শিশুরা তাদের উদ্ভাবনী প্রকল্প নিয়ে অংশগ্রহণ করে সায়েন্স ফেয়ারে, যা ছিল ভীষণ আকর্ষণীয়। বিকেলে জমে ওঠে মূল মঞ্চ। ক্যালিফোর্নিয়া, মিশিগান, শিকাগো, হিউস্টন, কানসাস থেকে আগত শিল্পী দলগুলোর সাথে ভার্জিনিয়ার বাংলাস্কুলের পরিবেশনা ছিল চোখ ধাঁধানো।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান প্রদর্শনের জন্য বিশেষ আয়োজন ছিল, এছাড়াও হাই স্কুল গ্র্যাজুয়েটদের মধ্যে মেধার ভিত্তিতে স্কলারশিপ বিতরণ করা হয়, যার মূল নেতৃত্বে ছিলেন ফোবানার প্রাক্তন চেয়ারম্যান মি. রেহান রেজা। রাত গভীর হলে অনুষ্ঠানস্থল হয়ে ওঠে আরও জমজমাট। লতা মঙ্গেশকরের মুক্তিযুদ্ধে অবদান নিয়ে একটি বিশেষ অনুষ্ঠানও আয়োজন করা হয়। সঙ্গীত শিল্পী আঁখি আলমগীরের পরিবেশনায় দর্শকরা মুগ্ধ ছিলেন।