সমুদ্রের জলস্তর বেড়ে যাওয়ার ফলে মারাত্মক প্রভাব পড়েছে সুন্দরবনের বাস্তুতন্ত্রের
তলিয়ে যাচ্ছে দ্বীপ
ভারতের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার সুন্দরবনের মথুরাপুর ১ নম্বর ব্লকের কৃষ্ণচন্দ্রপুর হাই স্কুলের রবীন্দ্র অডিটোরিয়ামে সাউথ এশিয়ান ক্লাইমেট চেঞ্জ জার্নালিস্ট ফোরাম ও নেচার কেয়ার ইনিশিয়েটিভের উদ্যোগে অ্যাডভান্সড সোসাইটি ফর হেডমাস্টার্স অ্যান্ড হেডমিস্ট্রেসেস এর সহযোগিতায় ৩১ আগস্ট সারা দিনের একটি “জলবায়ুর পরিবর্তন” বিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হলো। এই বিদ্যালয়ের উচ্চ মাধ্যমিক বিভাগের কলা ,বাণিজ্য, বিজ্ঞান, বৃত্তিমূলক শাখা সহ এনসিসি, এনএসএস, কিশোর বাহিনী, স্কুল ব্যান্ড এর প্রায় এক হাজার ছাত্রছাত্রী অংশ নেয়।
প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন পদ্মশ্রী পুরস্কার প্রাপ্ত, ঝারখন্ড রাজ্যের অধিবাসী শ্রীমতি চামী মুর্মু। শ্রীমতি মুর্মু রেকর্ড সংখ্যক গাছ লাগিয়ে পরিবেশ সচেতনতার কাজে নিজেকে উৎসর্গ করেছেন। এতই গাছকে ভালবাসেন যে তাঁকে এলাকার মানুষ “লেডি টারজান” নামে ডেকে থাকেন। তিনি তাঁর বক্তব্যে ছাত্র-ছাত্রীদের গাছ লাগিয়ে পরিবেশ বাঁচানোর জন্য উৎসাহ প্রদান করেন। তাঁর নিজের কর্ম জীবন তুলে ধরেন।
বিশিষ্ট অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ও বিশিষ্ট পরিবেশবিদ এস সি সাঁতরা এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপকও জলবায়ু পরিবর্তন গবেষক ড. পুনর্বসু চৌধুরী । তাঁরা অডিও ভিজুয়াল এর মাধ্যমে মনোজ্ঞ আলোচনা করেন। অধ্যাপক পুনর্বসু চৌধুরী, বিভিন্ন ছবি দেখিয়ে শিক্ষার্থীদের বোঝাচ্ছিলেন কিভাবে জলবায়ু পরিবর্তন আগামী দিনে বিপদ হিসেবে দেখা দিচ্ছে। দেখিয়েছেন কেমন করে মানুষ, পশু পাখি , এমনকী পরিবেশ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বিশ্ব উষ্ণায়ন বাড়ছে। বরফের চাদর ক্রমশ গলে যাচ্ছে। বাড়ছে সমুদ্রের জলস্তর। এই জলস্তর বেড়ে যাওয়ার ফলে মারত্মক প্রভাব পড়েছে সুন্দরবনের বাস্তুতন্ত্রে। বিঘ্নিত হচ্ছে ওখানকার প্রাকৃতিক ভারসাম্য। ইতিমধ্যে দুটি দ্বীপ প্রায় জলের তলায় চলে যাচ্ছে। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ঘোড়ামারা দ্বীপ। ছবিতে পরিষ্কার দেখা গেছে কিভাবে জলস্রোত আসতে আসতে দ্বীপটিকে গ্রাস করছে। এটাও দেখা গেছে, যে অংশটুকু অবশিষ্ট রয়েছে তাকে বাঁচানোর জন্য গাছ লাগানো চলছে। দ্বীপ দুটিকে রক্ষা করা গেল কিনা, সেটা সময় – ই বলবে।
এছাড়াও, নেচার কেয়ার ইনিশিয়েটিভের প্রধান কার্য্যবাহী শ্রীকান্ত শেখর সাহু, দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ বনদপ্তর সহ ভারতের নামকরা পরিবেশবিদগণ উপস্থিত ছিলেন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সাউথ এশিয়ান ক্লাইমেট চেঞ্জ জার্নালিস্ট ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আশিস গুপ্ত এবং কৃষ্ণচন্দ্রপুর হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক শ্রী চন্দন মাইতি।। জাতীয় পতাকা উত্তোলন, শহীদ বেদীতে মাল্যদান, বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি , প্রদীপ প্রজ্বলন ছাত্র-ছাত্রীদের তৈরি জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত মডেল, চার্ট, ইত্যাদি দিয়ে বিজ্ঞান প্রদর্শনী, বসে আঁকো প্রতিযোগিতা, ছাত্র-ছাত্রীদের সংগীত পরিবেশন, নৃত্য, আবৃত্তি, কুইজ কনটেস্ট, ইত্যাদি নানান কর্মকাণ্ড দিয়ে কর্মশালা পরিচালিত হয়।
ধন্যবাদ জ্ঞাপন বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট প্রবন্ধকার এবং শিক্ষক দেবাশীষ মিথিয়া। বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় সফল প্রতিযোগিতার বিশেষ সম্বর্ধনা দেওয়া হয়। প্রত্যেকের হাতে পরিবেশ সংক্রান্ত বই এবং সাউথ এশিয়ান ক্লাইমেট চেঞ্জ জার্নালিস্ট ফোরামের পক্ষ থেকে কর্মশালায় যোগদানের জন্য সার্টিফিকেট তুলে দেওয়া হয়। পরিবেশ সচেতনতা সংক্রান্ত এই কর্মশালার পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন, শিক্ষক শ্রী রাজু দেবনাথ ও শ্রী কৃপানন্দ ভূঁইয়ার এর নেতৃত্বে বিদ্যালয়ের এবং বিদ্যালয় ছাত্রাবাসের শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং শিক্ষাকর্মীগণ।