মানবাধিকার লঙ্ঘন ও সহিংসতার জন্য দায়ী সবার জবাবদিহিতার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক প্রধান ভলকার তুর্ক বলেছেন, এই রূপান্তর বাংলাদেশে মানবাধিকার, অন্তর্ভুক্তি ও আইনের শাসনের ওপর ভিত্তি করে সুশাসন নিশ্চিত করার একটি ঐতিহাসিক সুযোগ। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে বাংলাদেশের অস্থিরতা নিয়ে শুক্রবার (১৬ আগস্ট) জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তর থেকে প্রাথমিক প্রতিবেদন প্রকাশ করার পর এ কথা বললেন তিনি। ভলকার তুর্ক বলেন, এই রূপান্তর দেশের প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কার ও পুনরুজ্জীবিত করা, মৌলিক স্বাধীনতা ও নাগরিক স্থান পুনরুদ্ধার এবং ভবিষ্যত গঠনে বাংলাদেশের সবাইকে ভূমিকা দেওয়ার একটি ঐতিহাসিক সুযোগ উপস্থাপন করেছে।
‘এগিয়ে যাওয়ার পথের মূল চাবিকাঠি হলো- দোষীদের জবাবদিহিতা এবং ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ন্যায়বিচার। সেই সঙ্গে এটি নিরাময়ের জন্য জাতীয় প্রক্রিয়া প্রয়োজন। সব ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘন ও নির্যাতনের বিষয়ে একটি ব্যাপক, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ তদন্ত হবে গুরুত্বপূর্ণ প্রথম পদক্ষেপ।’
জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরকারি পদ বণ্টনপ্রক্রিয়া নিয়ে জুনের মাঝামাঝি সময়ে বাংলাদেশে প্রাথমিকভাবে শান্তিপূর্ণ ছাত্র বিক্ষোভের পরে নিরাপত্তা বাহিনী দ্বারা সহিংসতা এবং গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটে। কমপক্ষে ৩২ জন শিশুসহ যেখানে শত শত লোক নিহত হয়েছে বলে মনে করা হয়- আহত হয়েছে হাজার হাজার। স্বাধীন তদন্তের দাবি রাখার মতো জোরালো ইঙ্গিত রয়েছে, নিরাপত্তা বাহিনী পরিস্থিতি মোকাবেলায় তাদের প্রতিক্রিয়ায় অপ্রয়োজনীয় ও অসামঞ্জস্যপূর্ণ শক্তি ব্যবহার করেছে। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, নির্বিচারে গ্রেপ্তার ও আটক, গুম, নির্যাতন ও দুর্ব্যবহার এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতা অনুশীলন ও শান্তিপূর্ণ সমাবেশের ওপর কঠোর বিধিনিষেধ আরোপের অভিযোগ আছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ৫ আগস্ট সরকারের পদত্যাগের পরে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের সদস্যদের ওপর লুটপাট, অগ্নিসংযোগ এবং হামলার পাশাপাশি প্রাক্তন ক্ষমতাসীন দল এবং পুলিশের সদস্যদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ ও প্রতিশোধমূলক হত্যার খবরও পাওয়া গেছে। ১৫ আগস্ট উন্মত্ত জনতা বাঁশের লাঠি, লোহার রড ও পাইপ নিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সমর্থকদের ওপর হামলা চালায়। ঘটনাস্থলে সাংবাদিকদের ওপর হামলা ও ভিডিও ধারণ না করার হুমকিও দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। প্রতিবেদনে দ্রুত আইন-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার গুরুত্ব এবং আরও প্রাণহানি, সহিংসতা ও প্রতিশোধমূলক কর্মকাণ্ড রোধে কার্যকর ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। এতে আরও বলা হয়, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানদণ্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে শক্তি প্রয়োগের বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা ও প্রশিক্ষণ নিতে হবে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়সহ যে কোনো প্রতিশোধমূলক বা প্রতিশোধমূলক সহিংসতার বিরুদ্ধে ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীকে অবশ্যই রক্ষা করতে হবে। অবশ্য ভলকার তুর্ক সংখ্যালঘুদের ধর্মীয় স্থাপনা রক্ষায় বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন, ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ ও গোষ্ঠীবদ্ধভাবে গঠিত অন্যান্য ব্যক্তিদের উদ্যোগকে স্বাগত জানান। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারও সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছে সে কথাও উল্লেখ করা হয়।
তিনি বলেন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য দায়ী সবাইকে, এমনকি যারা অপ্রয়োজনীয় ও অসামঞ্জস্যপূর্ণ শক্তি প্রয়োগের নির্দেশ দিয়েছে- তাদের অবশ্যই জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে এবং ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ ও কার্যকর প্রতিকার দিতে হবে। ভলকার তুর্ক হাজার হাজার বন্দি এবং দীর্ঘমেয়াদী রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছেন, যার মধ্যে কিছু জোরপূর্বক গুমের শিকার ব্যক্তিও রয়েছেন। সেই সঙ্গে নির্বিচারে আটক থাকা সকলকে মুক্তি দেওয়ার আহ্বানও জানিয়েছেন।