গণ-অভ্যুত্থানের মুখে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশ থেকে সোমবার সরাসরি ভারতে যান তিনি। ভারতীয় নিরাপত্তাসংশ্লিষ্ট খাতের সূত্র দিয়ে দেশটির স্থানীয় সংবাদমাধ্যম দ্য প্রিন্ট জানিয়েছে, নয়াদিল্লি এখন চায় শেখ হাসিনা দ্রুত তার পরবর্তী গন্তব্য খুঁজে নিন। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যও এরই মধ্যে তাকে আশ্রয় দিতে বা সাময়িকভাবে অবস্থান করতে দিতেও অস্বীকৃতি জানিয়েছে। এ অবস্থায় তার পরবর্তী গন্তব্য হতে পারে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই। দ্য প্রিন্টের প্রতিবেদনে জানানো হয়, মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং বহু আন্দোলনকারীকে হত্যার অভিযোগের তদন্তের আহ্বান জানানো হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র শেখ হাসিনার রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদনও বাতিল করেছে। অন্যদিকে, দেশটি তার ভিসাও বাতিল করেছে। যুক্তরাজ্যে শেখ হাসিনার বৈধ ভিসা থাকলেও জাতিসংঘ তার বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ তোলায় দেশটিতে প্রবেশে বাধা তৈরি হতে পারে। ফলে দেশটিও তাকে রাজনৈতিক আশ্রয় দেয়ার ব্যাপারে আগ্রহী নয়।
সামরিক বাহিনীর একটি হেলিকপ্টারে করে ৫ আগস্ট দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। দেশী-বিদেশী আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের খবর বলছে, তার ছোট বোন শেখ রেহানাও এ সময় তার সঙ্গে দেশ ছাড়েন। দেশ ছাড়ার আগে শেখ হাসিনা নয়াদিল্লির সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। কিন্তু তাকে উদ্ধারের জন্য বাংলাদেশে উড়োজাহাজ পাঠানো সম্ভব নয় বলে সে সময় জানিয়ে দেয় নরেন্দ্র মোদি সরকার। কারণ হিসেবে বলা হয়, বাংলাদেশের আকাশসীমায় উড়োজাহাজ পাঠালে তাতে আইনের লঙ্ঘন হতে পারে। এরপর সামরিক বাহিনীর একটি হেলিকপ্টারে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা।
গত ১ জুলাই থেকে চলছিল সাধারণ শিক্ষার্থীদের কোটাবিরোধী আন্দোলন। সরকার আন্দোলন দমনে কঠোর অবস্থান নিলে সংঘাত শুরু হয় ১৫ জুলাই। ছাত্রলীগের হামলায় বহু শিক্ষার্থী হতাহত হন। যার জেরে ৩ আগস্ট বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এদিন সরকার পতনের এক দফা দাবি ঘোষণা করেন আন্দোলনকারীরা। এ দাবি আদায়ে ৪ আগস্ট অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেয়া হয়। একই দিন মাঠে নামে আওয়ামী লীগও। এদিন ভয়ংকর রূপ নেয় দেশের পরিস্থিতি, মৃত্যু হয় শতাধিক মানুষের। পরদিন ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এদিন কারফিউ অমান্য করে সরকার পতনের দাবিতে রাজপথে নেমে আসে লাখো জনতা। এর মধ্যে দুপুরের পর খবর আসে, পদত্যাগ করে সামরিক হেলিকপ্টারে দেশ ছেড়েছেন শেখ হাসিনা। চলমান এসব ঘটনায় পাঁচশর বেশি মানুষ নিহত হয়েছে।