ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে গতকাল। এতে তার সম্মতিও আছে। তবে এ সরকারে উপদেষ্টা হিসেবে আর কে কে থাকছেন, সে বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। বিশ্বস্ত একটি সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ অন্তর্বর্তীকালীন এ সরকারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে যাচ্ছেন।
এর আগে গতকাল ভোরের কিছু আগে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নাম প্রস্তাব করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এর পর দুপুরে বিষয়টি নিয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিবিসিকে বলেন, ‘যে শিক্ষার্থীরা এত ত্যাগ স্বীকার করেছেন, তারা যখন এ কঠিন সময়ে আমাকে এগিয়ে আসার অনুরোধ করেন, তাহলে আমি কীভাবে তা প্রত্যাখ্যান করি?’
ঘনিষ্ঠ সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের মধ্যে এ বিষয়ে নিয়মিত যোগাযোগ হচ্ছে। দেশের ক্রান্তিকালে দায়িত্ব গ্রহণে ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের অনাগ্রহ নেই। বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ড. মুহাম্মদ ইউনূস বর্তমানে ফ্রান্সের প্যারিসে আছেন। তিনি শিগগিরই ঢাকা ফিরবেন বলে ইউনূস সেন্টারের নির্বাহী পরিচালক লামিয়া মোরশেদ বিবিসিকে জানিয়েছেন।
সরকার পতনের এক দফা দাবিতে গত রোববার সারা দেশে অসহযোগ আন্দোলন শুরু করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। আর পরদিন সোমবার ছাত্র-জনতাকে ঢাকায় আসার আহ্বান জানিয়ে ঘোষণা করা হয় ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি। তাদের সে আহ্বানে সাড়া দিয়ে লাখ লাখ মানুষ ঢাকায় আসতে শুরু করে। সেদিন গণআন্দোলনের মুখে দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেয়ার সঙ্গে সঙ্গেই পালিয়ে ভারত চলে যান শেখ হাসিনা। পরে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান জাতির উদ্দেশে দেয়া এক বক্তব্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের কথা বলেন। সেনাপ্রধান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন। এখন একটা ইনটেরিম গভর্নমেন্ট ফর্ম করে আমরা আমাদের কার্যক্রম পরিচালনা করব। আপনারা একটু ধৈর্য ধরেন, আমাদের কিছু সময় দেন।’
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন সেদিনই বিষয়টি নিয়ে বঙ্গভবনে তিন বাহিনীর প্রধানদের উপস্থিতিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন।
দেশের বর্তমান পরিস্থিতি ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের রূপরেখা নিয়ে গতকাল বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি ও তিন বাহিনীর প্রধানের সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১৩ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দলের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানেই ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বৈঠকে আরো উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক তানজীম উদ্দীন খান।