
দেশব্যাপী সাম্প্রতিক ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ ও নৃশংসতার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার আশঙ্কা ছিল এ ধরনের একটা আঘাত আসবে। তিনি বলেন, ‘সমৃদ্ধির পথে দেশের অগ্রযাত্রা রুখে দিতে বিএনপি-জামায়াত জোট এ ধরনের হামলা করতে পারে।’ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে (পিএমও) এডিটরস গিল্ড আয়োজিত বিভিন্ন গণমাধ্যমের সম্পাদক, সিনিয়র সাংবাদিক এবং হেড অব নিউজদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে গতকাল তিনি এ মন্তব্য করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘তারা (বিএনপি-জামায়াত) আমাদের নির্বাচন করতে দিতে চায়নি, কিন্তু আমরা নির্বাচন করেছি। নির্বাচনের পর এটা সবাই মেনে নেবে না, সেটাও আমরা সবার কাছে গ্রহণযোগ্য করে দিয়েছি, আমরা সরকার গঠন করেছি। আমার একটা আশঙ্কা ছিল, এ রকম একটা আঘাত আসবে।’ তিনি উল্লেখ করেন, ‘২০১৩-১৪ সালের নির্বাচনের আগে ও পরে বিএনপি-জামায়াত চক্র অগ্নিসংযোগ ও হত্যাকাণ্ড চালিয়েছিল, ফলে শত শত মানুষ নিহত ও হাজার হাজার লোক আহত হয়েছিল।’
সাম্প্রতিক আন্দোলন একটি গুরুতর ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখেন শেখ হাসিনা। তিনি এমন কোনো ঘটনা দেখতে চান না, যা দেশে অস্থিতিশীলতা বা কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি ডেকে আনতে পারে। কারণ বিএনপি-জামায়াতের লক্ষ্য ছিল দেশের অর্থনীতি ধ্বংস করা। তিনি দেশের অগ্রগতি ও সমৃদ্ধিকে পঙ্গু করার লক্ষ্যে এ বিপর্যয়কে সমর্থনকারী লোকদের বোধবুদ্ধির স্তর নিয়েও প্রশ্ন তোলেন।
প্রধানমন্ত্রী জানান, জনগণের কল্যাণ ও জীবিকা নির্বাহের জন্য যেসব স্থাপনা তৈরি করা হয়েছে, তারা তা ধ্বংস করে দিয়েছে। তারা সব কাঠামোতে আঘাত করেছে। যারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে, তারা অবশ্যই গণমানুষ। এখন এসব সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদকে প্রতিহত করার দায়িত্ব জনগণের। তিনি এই ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডে জড়িত জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে গণসচেতনতা সৃষ্টির ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, ‘জনগণ যদি সচেতন না হয়, তাহলে আমরা কী করতে পারি বা আমরা একা কতটা করতে পারি।’ তিনি আরো উল্লেখ করেন, সাম্প্রতিক ধ্বংসযজ্ঞের লক্ষ্য ছিল আওয়ামী লীগ, মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সব দাবি যখন মানা হলো, তখন তারা কেন জঙ্গিদের এমন জঘন্য কর্মকাণ্ডের সুযোগ দিল, প্রশ্ন রেখে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আন্দোলনকারীদের একদিন জাতির কাছে জবাব দিতে হবে, কেন তারা তাদের দেশের এই ধ্বংসযজ্ঞের সুযোগ দিল।’
প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব নাঈমুল ইসলাম খান অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন এবং স্বাগত বক্তব্য রাখেন এডিটরস গিল্ডের সভাপতি মোজাম্মেল হক বাবু। সিনিয়র সাংবাদিক আবেদ খান, বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক নঈম নিজাম, ডিবিসির প্রধান সম্পাদক মনজুরুল ইসলাম, ভোরের কাগজ সম্পাদক ও জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত, দৈনিক যুগান্তর সম্পাদক সাইফুল আলম, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন, ঢাকা জার্নালের প্রধান সম্পাদক সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা, নাগরিক টিভির হেড অব নিউজ দীপ আজাদ, আমাদের সময় সম্পাদক মাইনুল আলম, বাংলাদেশ জার্নালের সম্পাদক শাজাহান সরদার, ডিবিসির বার্তা সম্পাদক জায়েদুল আহসান পিন্টু, ইনডিপেনডেন্ট টিভির আশীষ সৈকত, বাংলা ট্রিবিউন সম্পাদক জুলফিকার রাসেল, ৭১ টিভির হেড অব নিউজ শাকিল আহমেদ, এনার্জি অ্যান্ড পাওয়ার এডিটর মোল্লা আমজাদ, কিংস নিউজের হেড অব নিউজ নাজমুল হক সৈকত, আরটিভির মামুনুর রহমান খান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
অন্যদিকে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মালয়েশিয়া চাইলে তাদের পেরোডুয়া ব্র্যান্ডের সম্পূর্ণ গাড়িই বাংলাদেশে তৈরি করতে পারে। এজন্য মালয়েশিয়াকে বাংলাদেশে কারখানা তৈরির আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। গতকাল সকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মালয়েশিয়ার বিদায়ী হাইকমিশনার হাজনাহ মো. হাশিম বিদায়ী সাক্ষাৎ করতে গেলে শেখ হাসিনা এ আহ্বান জানান। বৈঠকে মালয়েশিয়ার দূত বলেন, স্থানীয় পিএইচপি মোটরস এখন বাংলাদেশে মালয়েশিয়ান ব্র্যান্ডের পেরোডুয়া গাড়ির যন্ত্রাংশ সংযোজন (অ্যাসেমব্লিং) করছে।