জলজ ‘বিমান’ বানিয়ে সাড়া ফেলেছেন মোস্তফা
২৭ বছর ধরে লোহালক্কড়ের ব্যবসা করেন বরিশাল বানারীপাড়া উপজেলার বিশারকান্দি ইউনিয়নের মোস্তফা ওরফে ফিটার। ইতিমধ্যে ট্রলার, কৃষকদের জন্য ইঞ্জিনচালিত স্টিলের নৌকা, ভাসমান টিলার বানিয়ে বেশ নাম কামিয়েছেন। কাজের ফাঁকে অবসরে নিজ উদ্যোগে এবার ভাসমান প্লেন বানিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছেন। এখন তার ব্যবসা আরও সমৃদ্ধি হচ্ছে। মোস্তফার কোনো অ্যাকাডেমিক জ্ঞান না থাকলেও নিজের চেষ্টায় তিনি গত ২৭ বছর ধরে অনেকটা পথ পাড়ি দিয়েছেন। এর মধ্যে প্রত্যন্ত অঞ্চলের কৃষকদের জন্য স্টিলের নৌকা ও ভাসমান টিলার বানিয়ে সবার নজর কেড়েছেন। বিশারকান্দিতে ইঞ্জিনের দক্ষ মেকানিক ‘মোস্তফা ফিটার’ নামেই তিনি পরিচিতি পেয়েছেন।
মো. মোস্তফা ফিটার বলেন, ‘আমি মূলত কিছু নতুন নতুন কাজ করি। কৃষকদের একটু সুবিধা দিতে ১১ বছর আগে আমি ভাসমান টিলার আবিষ্কার করি। এ ছাড়া স্টিলের নৌকা আজ থেকে ২০ বছর আগে তৈরি করা শুরু করেছি।’ এদিকে মাস্টার্স অধ্যয়ন শেষে করে বাবার সঙ্গে ওয়ার্কশপে নিয়মিত কাজ করছেন তার ছেলে মো. মেহেদি হাসান (২৫)। তিনি বাবার মতো নিজ উদ্যোগে নতুন কিছু উদ্ভাবন করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
মেহেদি হাসান বলেন, ‘আমরা মধ্যবিত্ত পরিবারের। এই জায়গা থেকে কখনো আমরা আশা করতে পারিনি সারা দেশের মানুষ আমাদের চিনবে। আমার বাবার কাজটি সারা দেশের মানুষ দেখবে। তবে সর্বপ্রথম এ কাজটি যখন শুরু করেছিলাম স্থানীয় সবার তিরস্কার করেছেন। এটা দিয়ে কী হবে? এটা কেন বানাচ্ছে? এটা দিয়ে কিছুই হবে না? এমন নানা রকমের কথা তারা বলেছেন। কিন্তু সর্বশেষ আজকে দেখা যাচ্ছে যে পেছনে বসে যারা নিন্দা করেছে তারাই আজকে প্রশংসা করছেন।’
মেহেদি হাসানের দাবি, ‘বাংলাদেশে এমন কোনো কাজ আর কেউ করছে কি না, আমাদের জানা নেই। তবে আমার মনে হয় আমরাই এটি সর্বপ্রথম তৈরি করেছি।’ ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে মেহেদি বলেন, ‘আমাদের ভাসমান টিলারের একটি প্রজেক্ট আছে। যেটি প্রত্যন্ত অঞ্চলে কৃষকদের জন্য অনেক সাশ্রয় এবং জমি চাষ করার জন্য অনেক উপকারী। কারণ এই টিলারটি পানির ওপর ভেসে ভেসে জমি চাষ করতে পারে। এটিও আবিষ্কার করেছেন আমার বাবা। এটিও বাংলাদেশের মধ্যে আমরা প্রথম তৈরি করেছি, যা আর কেউই করেনি। এটি বাজারে নিয়ে আসার পরে ব্যাপক সাড়া পেয়েছি। চাহিদাও আছে অনেক। সিজনের সময় চাহিদা মেটাতে গিয়ে আমাদের হিমশিম খেতে হয়। এ ছাড়া আমরা আরও একটি প্রজেক্ট নিয়ে ভাবছি কৃষকের ধানক্ষেতের যে আগাছা রয়েছে। সেটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার জন্য নতুন কিছু একটা নিয়ে আসার জন্য চেষ্টা করছি।’
২০২২ সালে মোস্তফার মাথায় চিন্তা আসে বিমান বানানোর। তিনি দিন-রাত ধরেই নিজ ওয়ার্কশপে কাজ করেন। হঠাৎ একদিন রাতের অন্ধকারে আকাশ থেকে দুটি বিমান উড়ে যেতে দেখেন মোস্তফা। তার একটিতে আবার শব্দ হচ্ছিল না। এরপরেই তিনি মনস্থির করে বিমান তৈরি করবেন তার অবসর সময় কাটানোর জন্য। যেটি জলের মধ্যে ভাসবে। পরের দিন সকাল থেকেই মালামাল কিনে কাজ শুরু করেন। প্রায় দুই বছর কাজ করে ২ লাখ টাকার বেশি খরচ করে শখের বশে এই ভাসমান প্লেনটি বানিয়েছেন মোস্তফা। নাম দিয়েছেন সুবর্ণা এক্সপ্রেস-২। এটি দূর থেকে দেখতে বিমানের মতো। কিন্তু এটি আসলে অবসর সময় কাটানোর জন্য একটি নৌযান, যা বিমানের আদলে তৈরি। জলজ বিমানটিতে ১৮ জন যাত্রী নিয়ে ২৪ ঘণ্টাই নৌপথে চলাচলের সক্ষমতা রয়েছে। ইঞ্জিনচালিত এই বাহনটি এখন পর্যন্ত মোস্তফা নিজেই পরিচালনা করছেন।