ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদের দ্বিতীয় ধাপের ১৫৭ উপজেলা নির্বাচনে আজ রোববার (১৯ মে) মাঠে নামবে বিজিবি, র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ভোটের আগে পরে মোট পাঁচদিনের জন্য তারা দায়িত্ব পালন করবেন। গতকাল শনিবার রাতে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখার উপসচিব মো. আতিয়ার রহমান জানিয়েছেন, বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরা পাঁচ দিনের জন্য মাঠে নিয়োজিত থাকবে। এ নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে পরিপত্র জারি করেছে। পরিপত্র অনুযায়ী, সমতলে সাধারণ ভোটকেন্দ্রে পুলিশ, আনসার ও গ্রাম পুলিশের ১৭ জন করে এবং ঝূঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে ১৯ জনের ফোর্স মোতায়েন থাকবে। দুর্গম ও পার্বত্য এলাকায় সাধারণ কেন্দ্রে ১৯ জন ও ঝূঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে ২১ জনের ফোর্স মোতায়েন থাকবে। নির্বাচনি আচরণবিধি প্রতিপালনে প্রতি ইউনিয়নে থাকবে একজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। এ ছাড়া মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্সের সঙ্গে, বিশেষ করে বিজিবির প্রতিটি মোবাইল টিমের সঙ্গে একজন করে এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োজিত থাকবেন।
এদিকে নির্বাচনি অপরাধ আমলে নিয়ে বিচার করার জন্য উপজেলায় থাকবেন একজন করে বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট। সরকারি জরুরি সেবা ৯৯৯-এ থাকবে বিশেষ টিম। ওই টিম নির্বাচন সংক্রান্ত প্রাপ্ত অভিযোগ অথবা তথ্যের বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরাসরি এলাকাভিত্তিক আইনশৃঙ্খলা সমন্বয় সেলে প্রেরণ করবে।
নির্বাচনে বিজিবি, বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড, আর্মড পুলিশ, আনসার ব্যাটালিয়নের সদস্যরা যেসব দায়িত্ব পালন করবেন– (ক) বিজিবি, বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড, আর্মড পুলিশ, আনসার ব্যাটালিয়ন মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে কাজ করবে। (খ) জেলা, উপজেলা, থানাগুলোতে বিজিবি এবং উপকূলীয় এলাকায় কোস্ট গার্ড দায়িত্ব পালন করবে। (গ) উপজেলার আয়তন, ভোটার সংখ্যা ও ভোটকেন্দ্রের গুরুত্ব বিবেচনায় প্রতি উপজেলায় দুই থেকে চার প্লাটুন বিজিবি দায়িত্ব পালন করবে। রিটার্নিং অফিসারের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কোর কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সংখ্যক বিজিবি মোতায়েনের ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। (ঘ) সন্দ্বীপ ও দুর্গম পার্বত্য এলাকায় প্রয়োজন অনুযায়ী অথবা কেন্দ্রভিত্তিক বিজিবি মোতায়েন করার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। (ঙ) জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে পরামর্শক্রমে রিটার্নিং অফিসারের চাহিদা অনুযায়ী আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে সহায়তা করবে। (চ) বিজিবি আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনে হেলিকপ্টার ও ডগ স্কোয়াড ব্যবহার করতে পারবে এবং (ছ) রিটার্নিং অফিসার ও প্রিজাইডিং অফিসারের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নিদের্শনাক্রমে ভোটকেন্দ্রের অভ্যন্তরে কিংবা ভোটগণনা কক্ষের শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার্থে দায়িত্ব পালন করবে।
র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) : (ক) মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে কাজ করবে; (খ) নির্বাচনি এলাকায় সামগ্রিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ করবে; (গ) রিটার্নিং অফিসারের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে সহায়তা করবে; (ঘ) আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজনে হেলিকপ্টার ও ডগ স্কোয়াড ব্যবহার করতে পারবে এবং (ঙ) রিটার্নিং অফিসার ও প্রিসাইডিং অফিসারের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে ভোটকেন্দ্রের অভ্যন্তরে কিংবা ভোটগণনা কক্ষের শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার্থে দায়িত্ব পালন করবে।
বাংলাদেশ পুলিশ : (ক) বাংলাদেশ পুলিশ নির্বাচনী এলাকায় সামগ্রিক শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে ও ভোটকেন্দ্রের অভ্যন্তরে শান্তি-শৃঙ্খলা বিধান এবং ভোটারদের জন্য আস্থার পরিবেশ সৃষ্টি করতে দায়িত্ব পালন করবে; (খ) নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সব সরঞ্জাম ও দলিল দস্তাবেজ বহন করার সময় নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে; (গ) নির্বাচন কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে; (ঘ) নির্বাচন কার্যালয়সমূহ, রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয় এবং সহকারী রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ের নিরাপত্তা বিধান করবে, (ঙ) স্থানীয় জননিরাপত্তা, ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের সুশৃঙ্খল লাইন করানোসহ স্থানীয় শৃঙ্খলা নিশ্চিত করবে।
আনসার ও ভিডিপি : (ক) বাংলাদেশ পুলিশ কর্তৃক নির্ধারিত পরিকল্পনা অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করবে; (খ) নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সব সরঞ্জাম ও দলিল দস্তাবেজ বহন করার সময় নিরাপত্তা সহায়তা প্রদান করবে এবং (গ) ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের সুশৃঙ্খলভাবে লাইনে দাঁড় করানোসহ শৃঙ্খলা নিশ্চিত করবে এবং সংশ্লিষ্ট ভোটকেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসারের আইনি যেকোনো নির্দেশনা প্রতিপালন করবে।
প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনা : (ক) অস্ত্র ও গোলাবারুদ স্ব স্ব বাহিনীর সদরদপ্তর নির্ধারণ করবে, (খ) স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয়পূর্বক আবাসন ব্যবস্থা নির্ধারণ করতে হবে, (গ) স্ব স্ব বাহিনীর সদরদপ্তর তাদের রেশন নির্ধারণ করবে, (ঘ) প্রশাসনি খাত হতে জ্বালানি খরচ নির্বাহ করতে হবে, (ঙ) স্ব স্ব বাহিনীর সদর দপ্তরের নির্দেশিকা অনুযায়ী রোগী অথবা হতাহতদের জরুরিভাবে চিকিৎসা ও স্থানান্তরের জন্য বিমান বাহিনী প্রয়োজনীয় সংখ্যক হেলিকপ্টার সুবিধাজনক স্থানে মোতায়েন করবে, (চ) স্ব স্ব বাহিনী তাদের নিজ নিজ সংস্থার প্রয়োজনীয় সংখ্যক যানবাহন ব্যবহার করবে এবং (ছ) এ সংক্রান্ত যাবতীয় ব্যয়ভার সামরিক-বেসামরিক যানবাহন, নৌযান, বিমান, হেলিকপ্টারের জ্বালানি রক্ষণাবেক্ষণ ও ভাড়া, কনটিনজেন্সি, ক্যাম্প, বাসস্থান ও টেলিফোন বিল নির্বাচন কমিশন সচিবালয় কর্তৃক বহন করা হবে। আগামী মঙ্গলবার (২১ মে) দ্বিতীয় ধাপের উপজেলা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে পরিবেশ শান্তিপূর্ণ রাখতে রোববার মধ্যরাতেই শেষ হবে প্রচার। এ ছাড়া একই সময় থেকে ভোটের এলাকায় সীমিত করা হবে যান চলাচলও।