
সৌদি আরবের অর্থনীতি বহুলাংশেই বিদেশী কর্মীনির্ভর। বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রচুর কর্মী প্রতি বছর দেশটিতে পাড়ি জমাচ্ছেন। সেখানে উপার্জিত অর্থ পরিবারের ভরণপোষণের জন্য রেমিট্যান্স হিসেবে নিজ নিজ দেশে পাঠাচ্ছেন তারা। গত মার্চে রেমিট্যান্স পাঠানোর পরিমাণ বেড়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির সরকার। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, মার্চে সৌদি আরব থেকে বিশ্বের অন্যান্য দেশে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে প্রায় ২৮ শতাংশ। খবর আরব নিউজ।
সৌদি সরকারের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, মার্চে দেশটিতে কর্মরত প্রবাসী কর্মীরা নিজ নিজ দেশে রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন ১ হাজার ১৯৬ কোটি রিয়ালের (সর্বশেষ বিনিময় হার অনুযায়ী প্রায় ৩১৯ কোটি ডলার) সমপরিমাণ। সে অনুযায়ী, এক মাসের ব্যবধানে সৌদি আরব থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রেমিট্যান্স প্রবাহের হার বেড়েছে ২৮ শতাংশ বেশি। এছাড়া গত বছরের একই সময়ের তুলনায় দেশটি থেকে মার্চে বহির্মুখী রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে প্রায় ৪ শতাংশ। জ্বালানি তেলনির্ভরতা থেকে সরে এসে সৌদি সরকার কয়েক বছর ধরে বৈচিত্র্যকরণ নীতি বাস্তবায়নে কাজ করছে। এর আওতায় দেশটিতে সরকারি, বেসরকারি নানা ধরনের উন্নয়ন প্রকল্প চালু করেছে। সামনে শিল্প থেকে বিনোদনসহ নানামুখী খাতের সম্প্রসারণ বাড়বে। এ কারণে দেশটিতে বিদেশী কর্মী বাড়ছে। তবে স্থানীয় অর্থনীতিতে বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি হওয়ায় সামনে সৌদি আরব থেকে বহির্মুখী রেমিট্যান্স প্রবাহ কমবে বলে আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের।
অবশ্য মার্চের রেমিট্যান্স প্রবাহ নিয়ে বিশ্লেষকরা বলছেন, মার্চে ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের রমজান শুরু হওয়ায় সংশ্লিষ্ট দেশগুলোয় সৌদি রেমিট্যান্স পাঠানো বেড়ে যায়। এ সময় উৎসব বাবদ খরচ ও জাকাতের মতো ধর্মীয় বাধ্যবাধকতা পূরণে বেশি অর্থ ব্যয় হয়।
এদিকে ফেব্রুয়ারিতে জাদওয়া ইনভেস্টমেন্টের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, সৌদি কর্মক্ষেত্রে প্রবাসীদের প্রবেশ বেড়ে যাওয়া সত্ত্বেও রেমিট্যান্স অপ্রত্যাশিতভাবে কম ছিল। কারণ কিছু প্রবাসী দেশে অর্থ পাঠানোর পরিবর্তে সৌদি আরবকে বিনিয়োগের জন্য বেছে নিয়েছেন।
সাম্প্রতিক সময়ে অর্থনীতির ধারা পরিবর্তনের সঙ্গে সৌদি দক্ষ ও উচ্চ শিক্ষাধারী পেশাজীবীদের আকর্ষণে গুরুত্ব দিচ্ছেন। দেশটিতে বিনিয়োগ, ব্যবসা ও ভিসা নীতিতেও ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে। এ কারণে অঞ্চলটিতে রেমিট্যান্স প্রবাহের ধারা পরিবর্তন হচ্ছে। সৌদি আরবের জ্বালানি তেলবহির্ভূত বৈচিত্র্যকরণ নীতি বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে দেশটির প্রতি আগ্রহী করে তুলেছে। এরই মধ্যে আঞ্চলিক দপ্তর প্রতিষ্ঠার জন্য লাইসেন্স নিয়েছে দুই শতাধিক প্রতিষ্ঠান। এ ধরনের কার্যক্রম রেমিট্যান্স প্রবাহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এছাড়া বিদেশী বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য চলমান কাঠামোগত সংস্কার সৌদি আরবের ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধি প্রশস্ত করছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোয় নিয়ন্ত্রকদের নীতি সংস্কারের পাশাপাশি আইনি শাসন ও প্রয়োগ আধুনিকীকরণ করেছে বলে দাবি সৌদি আরবের। এর মধ্যে রয়েছে কর্মসংস্থান চুক্তির ডিজিটাইজেশন, ভার্চুয়াল আদালতে শুনানি ও অনলাইনে সরকারি পরিষেবা। এ উদ্যোগগুলোর মূল লক্ষ্য দেশটির ব্যবসায়িক কার্যক্রম আরো সহজ করে তোলা এবং বৈশ্বিক অর্থনীতিতে নেতৃত্বকে এগিয়ে নেয়া।
সৌদি আরবের কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুদ্রানীতিতে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সংগতি রাখার লক্ষ্যেও কাজ করছে। এসএএমএ ২০২২ ও ২০২৩ সালে একাধিকবার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মিল রেখে নীতি সুদহার বাড়িয়েছে। এ সময় মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভ মূল্যস্ফীতির চাপ মোকাবেলার কৌশলের অংশ হিসেবে ধীরে ধীরে সুদহার বাড়িয়েছে। সামগ্রিকভাবে এর প্রভাবের বাইরে নয় রেমিট্যান্স প্রবাহ।
সাম্প্রতিক সরকারি পরিসংখ্যান আরো বলছে, রেমিট্যান্স মাসিক হিসাবে ৯ শতাংশ বেড়ে ৫১১ কোটি সৌদি রিয়ালে পৌঁছেছে। তবে প্রান্তিক ভিত্তিতে দশমিক ৫৩ শতাংশ কমেছে।
২০২২ সালের এক জনশুমারি অনুসারে, সৌদি আরবে অবস্থান করছেন এমন বিদেশীর সংখ্যা প্রায় ১ কোটি ৩৯ লাখ, যা দেশটির মোট বাসিন্দা ৩ কোটি ২২ লাখের ৪১ দশমিক ৬ শতাংশ। প্রবাসীদের মধ্যে ৭৬ দশমিক ৫ শতাংশ অর্থাৎ এক কোটিরও বেশি পুরুষ এবং ২৩ দশমিক ৫ শতাংশ হিসেবে ৩১ লাখ নারী রয়েছে। এর মধ্যে শীর্ষ অবস্থানে থাকা বাংলাদেশীর সংখ্যা ২১ লাখ ২০ হাজার বা মোট প্রবাসীর ১৫ দশমিক ৮ শতাংশ। এরপর ১৪ শতাংশ হিস্যা নিয়ে আছেন ১৮ লাখ ৮০ হাজার ভারতীয়। শীর্ষ পাঁচের বাকি তিন দেশ হলো পাকিস্তান, ইয়েমেন ও মিসর।