বিদ্যুৎ ও জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় প্রচলিত সেচ ব্যবস্থায় কৃষি পণ্যের উৎপাদন খরচও বেড়েছে। তবে সৌরচালিত সেচযন্ত্র খরচ কমিয়েছে কৃষকের। এছাড়া পরিবেশবান্ধব হওয়ায় রংপুর বিভাগের সৌরশক্তির ব্যবহার বাড়ছে। চলতি বছর বিভাগে দুই প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৩২৭টি সৌরচালিত সেচযন্ত্র কার্যক্রম পরিচালনা করছে। ফলে সেচের আওতায় এসেছে প্রায় পাঁচ হাজার হেক্টর জমি। নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারে শুধু কৃষকের উৎপাদন খরচ কমছে না, সেচ বাবদ বিদ্যুৎ ও জ্বালানি তেলের ব্যবহার কমায় সরকারের সাশ্রয়ও হচ্ছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
বিএমডিএ রংপুর সার্কেল তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. হাবিবুর রহমান খান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘ভূ-উপরিস্থ পানির সর্বোত্তম ব্যবহার ও বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের মাধ্যমে বৃহত্তর রংপুর জেলায় পাঁচ বছর মেয়াদে সৌরচালিত এলএলপি পাম্প এবং পাতকূপ স্থাপন শুরু হয়েছে। এতে কৃষকের সেচ খরচ প্রায় অর্ধেকের নিচে নেমে এসেছে। পানিতে আয়রন না থাকায় আবাদও ভালো হচ্ছে। পরিবেশবান্ধব সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহারের ফলে কৃষকের উৎপাদন খরচ যেমন কমছে, তেমনি সরকারও লাভবান হচ্ছে।’
তিনি উদাহরণস্বরূপ বলেন, ‘একেকটি সোলার প্যানেলে প্রায় ২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। যদি এতে ১৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎও ধরা হয়, তাহলে ১ ইউনিট বিদ্যুতের দাম ১৫ টাকা হারে এক বছরে সরকারের ব্যয় কমছে প্রায় সাড়ে ৭ লাখ টাকা। কৃষক পর্যায়ে ব্যাপক চাহিদা থাকায় রংপুর অঞ্চলে আরো ৫০০ এলএলপি পাম্প স্থাপনের প্রস্তাব করা হয়েছে। এটি পাস হলে কৃষক আরো উপকৃত হবে।’
রংপুর কাউনিয়া উপজেলার বালাপাড়া ইউনিয়নের কৃষক মো. মুক্তার আলী বলেন, ‘ঢুসমারা চর এবং তালুক সাহাবাজ চরে কয়েক বছর আগেও শুধু সেচের অভাবে শত শত জমি অনাবাদি পড়ে থাকত। সচ্ছল ব্যক্তিরা নিজস্ব খরচে স্যালো দিয়ে আবাদ করার চেষ্টা করত। এজন্য পরিশ্রমের পাশাপাশি উৎপাদন খরচও বাড়ত কিন্তু গত তিন বছর চরের অনেক জমিতে নিয়মিত আবাদ হচ্ছে। বিএডিসি থেকে সৌরবিদ্যুৎ চালিত ভ্রাম্যমাণ যন্ত্রের মাধ্যমে সেচ নিশ্চিত করা হয়েছে। চরে আমার ১০ একর জমিতে এখন নিয়মিত আলু, ভুট্টা, গম, চীনা বাদাম, কালিজিরা, মিষ্টি কুমড়া, পেঁয়াজ, মরিচ ও রসুন আবাদ করছি। চরে এখন বিএডিসির দুটি পাতকূপ, দুটি নৌকায় স্থাপিত ভ্রাম্যমাণ সৌরবিদ্যুৎচালিত এলএলপিসহ ছয়টি সেচযন্ত্র সচল রয়েছে।’ রংপুর ও দিনাজপুর আঞ্চলিক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, রংপুর বিভাগে ২০২৩-২৪ মৌসুমে ৭ লাখ ৭৮ হাজার ৪৩২ হেক্টর জমিতে রোরো ধান আবাদ হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ৩৪ লাখ ৮৩ হাজার ৭৪৬ টন।
এদিকে সৌরচালিত যন্ত্র দিয়ে সেচের পাশাপাশি কোথাও কোথাও বহুমুখী ব্যবহার শুরু হয়েছে। গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ, পলাশবাড়ী এবং রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার কাগজীপাড়া ও পীরগঞ্জ উপজেলার বড়বদনা গ্রামে সেচ কার্যক্রমের পাশাপাশি চালানো হচ্ছে বেশ কয়েকটি মেশিন। এতে ভুট্টা মাড়াই, ধান মাড়াইসহ গরুর খড় কাটা হচ্ছে। এ ব্যাপারে বিএডিসি রংপুর সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (ক্ষুদ্র সেচ) এসএম শহীদুল আলম বলেন, ‘সৌরবিদ্যুৎচালিত সেচে কৃষক উপকৃত হচ্ছেন ঠিকই কিন্তু এটি স্থাপনে প্রথমে যে ব্যয় হয়, তা সব কৃষকের পক্ষে বহন সম্ভব হয় না। এজন্য বিএডিসি প্রকৃত কৃষকের জন্য কাজ করছে। চলমান প্রকল্পে আর নতুন কোনো সেচযন্ত্র স্থাপনের সুযোগ নেই। রংপুর অঞ্চলে ক্ষুদ্র সেচ উন্নয়ন ও সেচ দক্ষতা বৃদ্ধিকরণ প্রকল্পের মাধ্যমে ৮৫০টি সৌরচালিত সেচযন্ত্র স্থাপন এবং দিনাজপুর জেলা ক্ষুদ্র সেচ উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে ২৮০টি সেচযন্ত্র স্থাপনের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। প্রস্তাব দুটি অনুমোদন পেলে প্রান্তিক পর্যায়ের অনেক কৃষক লাভবান হবেন।’