বেশ কিছুদিন ধরেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম জুড়ে রঙিন চিত্রকর্মে সেজে ওঠা মহাখালী ফ্লাইওভারের ছবি দেখা যাচ্ছে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে নগরের সৌন্দর্যবর্ধনের অংশ হিসেবে মহাখালী ফ্লাইওভার চিত্রিত করার পদক্ষেপ নেয়া হয়। বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ লিমিটেডের অর্থায়নে এ উদ্যোগ আলোর মুখ দেখে গত বছর৷ আগস্টের মাঝামাঝি সময়ে। সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে শুরু হয় ফ্লাইওভারে রঙ-তুলির আঁচড় দেয়া।৷ক্রিয়েটিভ এজেন্সি TRA দায়িত্ব পায় চিত্রায়ণের মূল ভাবনা ও শিল্প নির্দেশনার। বার্জারের”‘wrong বদলে রঙিন করি’ ক্যাম্পেইনের অংশ হিসেবে ইতিবাচক বিভিন্ন প্রতিপাদ্য এবং তার চিত্রায়ণের মাধ্যমে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির বিষয়টি প্রাধান্য পায়।
উদ্যোগের সঙ্গে জড়িতরা এখানে দেশের ইতিহাস-সংস্কৃতি তুলে ধরার ওপর জোর দেন। তাই বিষয়বস্তু হিসেবে পরবর্তী সময়ে ভাবনায় যোগ হয় দেশের নানা ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক দিকগুলো। ব্যক্তিগতভাবে যেকোনো কাজের ক্ষেত্রে দেশীয় আঁকার ধরন, উপাদানকে প্রাধান্য দেয়ার কথা জানিয়েছেন প্রকল্পের নির্দেশক। এখানেও বিষয়বস্তু নির্ধারণ ও চিত্র অঙ্কনের ধরনে তাই হয়েছে। লোকজ মোটিফের ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে এ কাজে। চিত্রকর্ম আঁকার কাজটি মাঠপর্যায়ে বাস্তবায়ন করেছে আরেকটি এজেন্সি।
কাজ শুরু করার পর সম্পূর্ণ কাজের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয় শিল্পী মনিরুজ্জামান মনিরকে। এ প্রকল্পে শিল্প নির্দেশনার দায়িত্বে ছিলেন দুজন শিল্পী। তারা হলেন৷ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের প্রভাষক মো. রাসেল রানা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের সাবেক শিক্ষার্থী শিল্পী শাকিল মৃধা। তারা প্রথমে চিত্রকর্মগুলো ডিজিটাল মিডিয়ায় অঙ্কন করেছেন। তাদের দুজনের সঙ্গেই কথা হয় বণিক বার্তার। শিল্পী মো. রাসেল রানা জানান, প্রকল্পটিতে কাজ করার ক্ষেত্রে নিজেদের সম্পূর্ণ শৈল্পিক স্বাধীনতা পেয়েছেন। তাদের ইলাস্ট্রেশনে উপদেষ্টা হিসেবে শিল্পী মনিরুজ্জামান মনির সহযোগিতা করেছেন।
TRA (Transforming Reality into Art)-এর প্রতিষ্ঠাতা ও স্বত্বাধিকারী আরিফ সিদ্দিকী নিটোল এবং তার সহধর্মিণী তাহসিনা ফেরদৌস রিনিয়া প্রকল্পটির মূল উদ্যোক্তা। আরিফ সিদ্দিকী নিটোল জানিয়েছেন, ফ্লাইওভারের ১ লাখ ৮১ হাজার ৯৬৯ বর্গফুট অংশ চিত্রকর্মে সাজানো হচ্ছে। ১৯টি পিলারের ওপর নির্মিত এ ফ্লাইওভারের দৈর্ঘ্য ১ দশমিক ১২ কিলোমিটার। এর ১৪টি পিলারের ওপর থাকা সিলিং এখন পর্যন্ত রঙিন হয়েছে। নির্দেশকদের আশা মার্চেই কাজ শেষ হয়ে যাবে।
ফ্লাইওভারের নকশায় মূলত ফুটে উঠেছে বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের শিল্প-সংস্কৃতি, ইতিহাস উৎসব। এদেশের শিল্প সংস্কৃতির বৈচিত্র্যময়তা, লোকশিল্প, তাঁত শিল্প তুলে ধরা হয়েছে। টেপা পুতুল, নৌকা, গরুর গাড়ি, হাতপাখা, রিকশাসহ আরো অনেক কিছু দেখা যাচ্ছে এখানে। ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সেই ইতিহাস বদলে দেয়া তর্জনি সবকিছু তুলে ধরা হয়েছে এখানে।
আরো আছে বাউলের গান, জামদানি শাড়ি, নকশিকাঁথার গল্প। বেশকিছু প্রতিপাদ্য আছে পিলারগুলোর গায়ে। যেমন ‘বাঁচলে দেশ, আমরা বাঁচব বেশ’, ‘একটি গাছ, একটি প্রাণ’সহ এমন অনেক প্রতিপাদ্য এখানে দেখা যাবে, যা ভবিষ্যতের নির্মল দেশ গড়ার জন্য সবার কাছে আহ্বান হিসেবে কাজ করবে। নির্দেশক ও শিল্পীরা নগরী ঢাকাকে ঘিরে এ রকম নান্দনিক উদ্যোগ আরো হতে পারে বলে আশাবাদী।