তৈরি পোশাকশিল্পে পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিরসনে সরকার, স্থানীয় সরকার, মালিকপক্ষ ও ট্রেড ইউনিয়নকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে বলে তাগিদ দিয়েছেন আলোচকরা। বুধবার (৬ মার্চ) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিলস) উদ্যোগে পোশাক শ্রমিকদের জীবনে জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশগত বিষয়ের প্রভাব নিরূপণ এবং ট্রেড ইউনিয়নের করণীয় নির্ধারণ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন অনুষ্ঠানে বক্তারা একথা বলেন।
বক্তারা বলেন, তৈরি পোশাকশিল্পে পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিরসনে সরকার, স্থানীয় সরকার, মালিকপক্ষ ও ট্রেড ইউনিয়নকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। এছাড়া শ্রমিকদের সামাজিক ও পরিবেশগত মানদণ্ড তৈরি করতে নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে কাজ করার প্রয়োজন রয়েছে। আয়োজকরা জানান, টঙ্গী ও গাজীপুর এলাকার ১৬০টি তৈরি পোশাক কারখানার ৪০২ জন শ্রমিকের উপর এই গবেষণাটি পরিচালনা করা হয়। সরকার, মালিকপক্ষ, ট্রেড ইউনিয়ন ও তৈরি পোশাক শ্রমিকরা এ গবেষণায় অংশগ্রহণ করেন।
গবেষণার ফলাফলে জানা যায়, শতকরা ৯৯ ভাগ পোশাক শ্রমিক দেশের দূরবর্তী এলাকা থেকে স্থানান্তরিত হয়ে এসেছেন। এর মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে শতকরা ৩৬% ভাগ স্থানান্তরিত হয়েছেন বলে জানা গেছে। বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড়, ফসল উৎপাদন না হওয়া, কীটপতঙ্গের আক্রমণ বৃদ্ধি, উৎপাদনশীলতা হ্রাস ইত্যাদি কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। এছাড়া শতকরা ৭ ভাগ নদী ভাঙনের কারণে স্থানান্তরিত হয়েছেন বলে জানা যায়।
জলবায়ু পরিবর্তনের অবস্থা পর্যালোচনায় দেখা যায়, শতকরা ৫০ ভাগ পোশাক শ্রমিক জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ভুগছেন, যার ফলে ছুটি/অনুপস্থিতি বেড়েছে শতকরা ২৩ ভাগের ক্ষেত্রে, দক্ষতা কমেছে শতকরা ৮ ভাগের, উৎপাদন কমেছে শতকরা ৬ ভাগের, আয় হ্রাস ও চাকরির নিরাপত্তাহীনতা বেড়েছে শতকরা ১৩% ভাগের ক্ষেত্রে। রোগে ভোগার সংখ্যা শতকরা ১০০ ভাগের, গরমে দুর্ভোগ বেড়েছে শতকরা ৬৫ ভাগের, বৃষ্টিপাত ও জলাবদ্ধতায় নাকাল শতকরা ৪২ ভাগ এবং ঘূর্ণিঝড় ও বন্যায় দুর্ভোগের শিকার শতকরা ২০ ভাগ।
পরিবেশ দূষণের অবস্থা পর্যালোচনায় দেখা যায়, পোশাক শ্রমিকদের মতে পানি দূষণ প্রায় শতকরা ১৮ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে, বায়ু দূষণ বেড়েছে প্রায় শতকরা ৬৪ ভাগ। এর ফলে তাদের শতকরা ২১ ভাগের মাথাব্যথা, শতকরা ১৪ ভাগের মাথা ঘোরা, শতকরা ২০ ভাগের ক্লান্তি এবং শতকরা ২৫ ভাগের শ্বাসকষ্ট বেড়েছে বলে জানা যায়। এছাড়া জলাবদ্ধতা শতকরা ৭ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং রান্নায় গ্যাসের ব্যবহার প্রায় শতকরা ৩৩ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে।
বিলসের নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সুলতান উদ্দির আহম্মেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড. আবু তাহের, বিলসের উপ-পরিচালক ও প্রধান গবেষক মনিরুল ইসলাম, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপ সচিব মো. রাজা মিয়া, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব নাজমুল হক, পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. মির্জা আসাদুল কিবরীয়া, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক ডা. বিশ্বজিৎ রায়সহ অন্যান্যরা।