ফরিদ মিয়া (৫৬) গ্রামের সাধারণ পরিবারের সহজ-সরল একজন মানুষ। কিন্তু তার চিন্তা-চেতনা অসাধারণ। গতানুগতিক ধারার বাহিরে গিয়ে নতুন কিছু করার চেষ্টা তার ছোটকাল থেকেই। চার বছর ধরে এমনি এক অসাধারণ চা তৈরি করে এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি করেছেন ফরিদ মিয়া। এই চা এখন তুফান চা হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে এলাকায়। বিভিন্ন রকমের বাহারি মশলার মিশেলে এই বিশেষ চা বেশ তৃপ্তি মেটাচ্ছে মানুষের। দূর-দূরান্ত থেকে প্রতিদিন এই চা পান করতে ছোটে আসছে মানুষ। এমনি এক মুখরোচক চা তৈরি করে এলাকায় সাড়া ফেলেছেন ফরিদ মিয়া। কিশোরগঞ্জের পাশ্ববর্তী নরসিংদী জেলার মনোহরদী উপজেলার কৃষ্ণপুর ইউনিয়ন। এই ইউপির নিভৃত পল্লী পশ্চিম বীরগাঁও চৌরাস্তা বাজার সংলগ্ন কানারা পাড়া এলাকায় চা তৈরি করছেন ফরিদ মিয়া।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রাস্তার পাশে কয়েকটি লিচু ও আম গাছের ছোট্ট বাগান। চারদিকে সবুজ বৃক্ষের শীতল ছায়া। ডালপালা পত্রপল্লবের আচ্ছাদন। সবুজ ফসলের মাঠ, চারদিকে খোলামেলা পরিবেশ। আশপাশে নেই আর কোনো ধরনের দোকান। এরই একধারে রঙিন কাপড়ের পর্দা। বসার জন্য সুপারির ফালি ও বাঁশের খুৃঁটি দিয়ে তৈরি করা কয়েকটি মাচা। পাঁচ থেকে দশজন বসার মতো।
বাগানের এক কোণে তিনটে কেটলীযোগে চায়ের স্বাভাবিক সরঞ্জাম। পাশে একধারে একরাশ লাল প্লাষ্টিকের ডিবে। নানান মশলা তাতে। কোনোটায় একটা কোনোটায় দুটো, তিনটে চারটে এমনকি একটায় ১৬ পদের মশলা তাতে। ফরিদ মিয়া একসাথে ১০ থেকে ৩০ টি পর্যন্ত কাপে সেসব মশলা মেশান। একে একে একটু একটু করে। তার চায়ের দোকানের অনেক কিছুই ব্যতিক্রম। যেমন গতানুগতিক নিয়ম ভেঙ্গে তার দোকান শুরু হয় আসরের নামাজের পর থেকে। চলে মধ্যরাত পর্যন্ত। দূরবর্তী খদ্দেররা দলবেঁধে আসেন। সাইকেল হোন্ডা ইজিবাইক সিএনজি মাইক্রো নানাভাবে। দলবেঁধে চা পান করেন। সেইসাথে গল্পগুজব। তারা চলে যান। আবার একদল আসে। একা সঙ্গীবিহীন খুব কম লোকই আসেন এখানে।
কটিয়াদী, পাকুন্দিয়া, মঠখোলা, মনোহরদী, সাগরদী, খিদিরপুর, চালাকচর, নয়াপাড়া, শিবপুরসহ বিভিন্ন স্থান থেকেই আসেন মানুষ। মাঝখানে অনেকদিন বন্ধ ছিল দোকান। ফলে অনেকেই এখনও তার নতুন ঠিকানা পেয়ে উঠেননি। মধ্যপঞ্চাশের শক্তপোক্ত গড়নের ফরিদ মিয়া। নানা বাস্তবতায় এ যাবৎ তার চায়ের দোকান চারবার স্থান বদলেছে। আগে তার চা ছিল ২৭ মশলাযোগে। এখন হয়েছে সেটি ৩৫ মশলার। এলাচী দারুচিনি লঙ অর্জুন আমলকি বহেরা হরিতকি, সাত চন্দন, চন্দন গুড়ো ইত্যাদি বনস্পতি থাকে তার মশলায়। এছাড়াও মশলার পদে থাকছে ভাজা মরিচ, কাঁচামরিচ, লেবু, তেজপাতা, কালিজিরা, কাফিলা ইত্যাদি। এ ৩৫ মসলা সপ্তাহে একদিন তৈরি করেন তিনি। এতে সাতদিন চলে, শেষ হলে আবার বানান। এছাড়াও এ চায়ে আরও কিছু মশলা থাকে যা তার ব্যবসায়িক গোপনীয়তার কারনে নাম উল্লেখ বারন। শুধু লিকার চা ৫ টাকা। অর্ধেক মশলায় চা ১০টাকা ও ৩৫ মশলার চা ২০ টাকা। এ তিন পদের চা তার। সপ্তাহের বৃহস্পতিবার দিন বেচাকেনা কম তার ।অন্যদিনগুলোতে এলাকায় ওয়াজ, মেলা, গান বা কোন রাতের অনুষ্ঠান না থাকলে বেচাকেনা জমে উঠে। এ দিয়েই সংসার চলে ফরিদ মিয়ার।