রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে ১ হাজার ১৩৮ কোটি ডলার ঋণ অর্থায়নের জন্য ২০১৬ সালে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয় রাশিয়া। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথমার্ধ (জুলাই-ডিসেম্বর) পর্যন্ত হালনাগাদকৃত তথ্য অনুযায়ী, এ পর্যন্ত প্রতিশ্রুত ঋণ বাবদ ছাড় হয়েছে সর্বোচ্চ প্রায় ৬২৭ কোটি ৩০ লাখ ৪০ হাজার ডলার বা ৫৫ শতাংশ। প্রকল্পটির সিংহভাগ কাজও এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। এখন পর্যন্ত প্রকল্পের ৮৫ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। চলতি বছরেই চালু হতে পারে রুশ প্রযুক্তি ও অর্থায়নে নির্মিত পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির প্রথম ইউনিট। বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বড় বড় অবকাঠামো ও পারমাণবিক চুল্লিসহ বৃহৎ যন্ত্রাংশ বসানোর কার্যক্রম শেষ। শিডিউল অনুযায়ী বিদ্যুৎ কেন্দ্রের যন্ত্রাংশ, অবকাঠামো ও জ্বালানিও এরই মধ্যে দেশে চলে এসেছে।
ছাড়ের অপেক্ষায় থাকা বাকি ৫০০ কোটি ডলারের বেশি অর্থ হাতে এলে তা কোন কাজে ব্যবহার হবে জানতে চাইলে রূপপুর প্রকল্পসংশ্লিষ্ট এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে বণিক বার্তাকে বলেন, ‘এ প্রকল্পের ঋণের অর্থছাড় ও অর্থের ব্যবহার অন্যান্য প্রকল্পের মতো নয়। বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ, প্রযুক্তি, প্রকল্পের যন্ত্রাংশ থেকে শুরু করে জ্বালানি সরবরাহ ও নিরাপত্তার বিষয়গুলো রাশিয়া নিজেই বাস্তবায়ন করছে। ফলে প্রকল্প ব্যয়ের বেশির ভাগ অর্থ তারা নিজেরাই পেয়ে যাবে। বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ চুক্তি অনুযায়ী, প্রকল্পের যন্ত্রাংশ তৈরি ও প্রতিস্থাপনের কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত অর্থছাড় হয় না। ফলে অনেক যন্ত্র ও যন্ত্রাংশ প্রতিস্থাপন হলেও সেগুলো এখনো পরীক্ষামূলক পর্যায়ে রয়েছে। অনেক যন্ত্রাংশ এখনো শিপমেন্ট পর্যায়ে রয়েছে। নানা ধাপে কাজগুলো চলছে।’
বিষয়টি নিয়ে জানতে বণিক বার্তার পক্ষ থেকে নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেডের (এনপিসিবিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মো. শৌকত আকবরের সঙ্গে যোগাযোগ করেও তার বক্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দুটি ইউনিটের মোট সক্ষমতা ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট। একেকটি ইউনিটের সক্ষমতা ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট। চলতি বছরেই রূপপুরের প্রথম ইউনিট চালু হওয়ার কথা। প্রথম ইউনিটের জ্বালানি দেশে এসেছে গত বছরের ২৮ সেপ্টেম্বর। আর ২০২৫ সালের মধ্যেই দ্বিতীয় ইউনিট চালু হয়ে যাওয়ার কথা। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দুজন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রথম ইউনিট চালুর জন্য এখন প্রি-কমিশনিং পর্যায়ে কাজ চলছে। অর্থাৎ কোল্ড টেস্ট, হট টেস্ট কাজ চলছে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি চূড়ান্তভাবে চালু করতে হলে আরো অন্তত তিনটি ধাপ রয়েছে। এর সঙ্গে গ্রিডলাইন নির্মাণ, সাবস্টেশন ও অন্য বিষয়গুলোর কাজ সঠিকভাবে করা গেলে দ্রুতই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির প্রথম ইউনিট চালু করা যাবে।