মালয়েশিয়ায় ভাষাশহীদদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ
মোদের গরব, মোদের আশা। আ-মরি বাংলা ভাষা!’ বাংলার মতো মধুর ভাষা যেন পৃথিবীতে আর নেই। বাংলাভাষার মাধুর্য এবং গুরুত্ব শুধু ১ লক্ষ ৪৮ হাজার বর্গমাইলেই সীমাবদ্ধ নয়। বিশ্বে প্রথম ভাষার জন্য প্রাণ দেওয়ার গৌরব অর্জন করে বাংলা মায়ের সন্তানরা।
২১ ফেব্রুয়ারি বুধবার সকালে কুয়ালালামপুরস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশন মহান শহীদ দিবস এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করে। অনুষ্ঠানের প্রারম্ভে হাইকমিশন প্রাঙ্গণে প্রভাতফেরির মাধ্যমে হাইকমিশনের অস্থায়ী শহীদ মিনারের বেদীতে হাইকমিশনার মোঃ শামীম আহসান এর নেতৃত্বে হাইকমিশন পরিবারের সদস্যবৃন্দ পুস্পস্তবক অর্পণ করেন। এ ছাড়া মালয়েশিয়ায় সফররত বাংলাদেশ-মালয়েশিয়া চেম্বার অব কমার্সের নেতৃবৃন্দ,স্থানীয় কমিউনিটির নেতৃবৃন্দ এবং সামাজিক, সাংস্কৃতিকসংস্থার সদস্যবৃন্দ পর্যায়ক্রমে পুস্পস্তবক অর্পণ করেন। এর পর, মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করেন। দিবসের মূল অনুষ্ঠানের শুরুতে শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে মোনাজাত এবং এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। অনুষ্ঠানে দিবসটিকে কেন্দ্র করে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী কর্তৃক প্রদত্ত বাণী পাঠ করা হয় এবং এ দিবস উপলক্ষে প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। অনুষ্ঠানে হাইকমিশনে কর্মরত তামিল, ম্যান্ডারিন ও মালয় ভাষাভাষীর সদস্যগণ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের তাৎপর্য উল্লেখ করে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য প্রদান করেন। এরপর ভাষা আন্দোলন সংক্রান্ত একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। আলোচনা সভায় মূলবক্তব্যে মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মহান শহীদ দিবস এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের গুরুত্ব তুলে ধরেন। তিনি মহান ভাষা আন্দোলনে জাতির পিতা বন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের অবদানের কথা কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করেন। জাতির পিতার ‘সোনার বাংলা’ গঠনে মালয়েশিয়ায় বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের একযোগে কাজ করার উদাত্ত আহবান জানান। তিনি প্রবাসী বাংলাদেশিদের বৈধপথে রেমিট্যান্স প্রেরণ এবং প্রবাসী পেনশন স্কিমে অংশগ্রহণের মাধ্যমে দেশের উন্নয়নে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঐকান্তিক প্রচেষ্টা সফল করার জন্য তাদের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।
অপরদিকে, ২০ ফেব্রুয়ারী মঙ্গলবার , কুয়ালালামপুরস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশন, সেন্টার ফর অল্টারনেটিভস বাংলাদেশ এবং মালয়েশিয়ার টেলরস ইউনিভার্সিটির স্কুল অফ লিবারেল আর্টস অ্যান্ড সায়েন্সেস এর সহযোগিতায় ‘প্রযুক্তির মাধ্যমে বহুভাষিকতার প্রসার’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ উদযাপন করেছে। মালয়েশিয়ার টেইলর’স বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘গ্র্যান্ড হলে’ আয়োজিত এই অনুষ্ঠানের বিভিন্ন পর্বে উচ্চপর্যায়ের আলোচনা, প্যানেল আলোচনা, প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনী, আলোকচিত্র প্রদর্শনী এবং নয়টি দেশের শিল্পীদের পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এম পি ‘র ধারণকৃত বক্তব্য প্রচার করা হয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ তার বক্তব্যে ‘শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ স্মরণে বিভিন্ন দেশ এবং বিভিন্ন ভাষাভাষীর জনগোষ্ঠীকে নিয়ে আয়োজিত ভিন্নমাত্রিক এই অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য কুয়ালালামপুরস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, মাতৃভাষা আন্দোলন বাঙালি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছে এবং স্বাধীনতার পথ দেখিয়েছে। তিনি ঐতিহাসিক মাতৃভাষা আন্দোলনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভূমিকার কথা গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন। তিনি আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের গুরুত্ব তুলে ধরেন তিনি।