প্রতিবছরের মতো এবারও যশোরের বেনাপোল সীমান্তের শূন্য রেখায় ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন দুই বাংলার ভাষাপ্রেমীরা। ২১ ফেব্রুয়ারি সকাল ১১টায় ভারত-বাংলাদেশের সীমান্তের শূন্য রেখায় কাঠ ও বাঁশের তৈরি অস্থায়ী শহীদ মিনারে বাংলাদেশের পক্ষে যশোর ৮৫/১ আসনের সংসদ সদস্য শেখ আফিল উদ্দীনের নেতৃত্বে ২০ জন ও ভারতের পক্ষে ২৪ পরগনা বিধায়ক নারায়ণ গোস্বামীর নেতৃত্বে ২০ জন রাজনৈতিক, প্রশাসনিক ও কবি, সাহিত্যিকেরা শ্রদ্ধা নিবেদনে অংশ নেন। এ সময় সীমান্ত অনেকটা মিলন মেয়ায় পরিণত হয়। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে বিজিবি, বিএসএফসহ বিভিন্ন প্রশাসনিক সংস্থার নিরাপত্তা জোরদার ছিল। দুই বাংলার এ আয়োজন পরস্পরের মধ্যে যেমন সৌহার্দ্য, সম্প্রীতির মেলবন্ধনকে জোরদার করবে তেমনি নতুন প্রজন্মকে ভাষার প্রতি আরো শ্রদ্ধাশীল হতে ভূমিকা রাখবে বলে জানিয়েছেন আয়োজকেরা।
সরেজমিন দেখা যায়, মাথার উপর সাঁই সাঁই করে উড়ছে একদিকে বাংলাদেশের লাল-সবুজ আর অন্যদিকে গেরুয়া, সাদা, নীল, সবুজ রঙের ভারতীয় জাতীয় পতাকা। এসময় ফুলে ফুলে ভরে ওঠে শহীদ মিনার চত্বর; যেন এক ছাদের নিচে দুই দেশের ভাষাপ্রেমীদের মিলন মেলা বসেছে। দেশের একমাত্র বেনাপোল সীমান্ত, যে সীমান্তে গত ২০ বছর ধরে ভারত-বাংলাদেশ যৌথভাবে ভাষা শহীদদের প্রতি এভাবে শ্রদ্ধা জানিয়ে আসছে। এবছরও সংক্ষিপ্ত পরিসরে দুই দেশের শূন্য রেখায় দুই বাংলার ভাষাপ্রেমীরা শহীদ, ছালাম, বরকত, রফিক, জব্বারদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানান। এসময় ভাষাপ্রেমীদের কণ্ঠে বেজে ওঠে- ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গানো ২১ ফেব্রুয়ারী, আমি কি ভুলিতে পারি’! সীমানা ভুলে এদিন মিলেমিশে একাকার হওয়ার সুযোগ পান দুই দেশের ভাষাপ্রেমীরা ভারতের প্রতিনিধি দলের দলনেতা ২৪ পরগনা ভারতের বিধায়ক নারায়ণ গোস্বামী জানান, মাতৃভাষা রক্ষার যেকোনো সংকট মোকাবিলায় আগামীতে দুই দেশ এক থাকবে। দুই বাংলার এ আয়োজন পরস্পরের মধ্যে সৌহার্দ্য, সম্প্রীতির মেলবন্ধনকে জোরদার করবে।
বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের দলনেতা স্থানীয় সংসদ সদস্য শেখ আফিল উদ্দীন জানান, ভাষার জন্য জীবন ত্যাগের ইতিহাস একমাত্র বাঙালির। আজ পুরো বিশ্ব ২১ফেব্রুয়ারিকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। এজন্য বাঙালি ও বাংলাদেশি হিসেবে আমরা গর্ববোধ করি। দুই বাংলার একুশ উদযাপন নতুন প্রজন্মকে ভাষার প্রতি আরো শ্রদ্ধাশীল হতে ভূমিকা রাখবে।
শূন্য রেখায় ফুল দিতে আসা ভারতীয় ভাষাপ্রেমী নন্দিতা বিশ্বাস জানান, ভাষার টানে শূন্যরেখায় বার বার ছুটে আসি। এ দিনটির জন্য সারাবছর ধরে অপেক্ষায় থাকি।
বাংলাদেশি ভাষাপ্রেমী মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ শাহ আলম জানান, জাতিরজনক বঙ্গুবন্ধু শেখ মুজিবের আহ্বানে ভাষা আন্দোলনে এদেশের মানুষ উদ্বুদ্ধ হয়েছিল; যাদের রক্তে মায়ের ভাষা অর্জিত হয়েছে, সেই ভাষা শহীদদের বিশ্ব চিরদিন মনে রাখবে। বেনাপোল ‘সরগম সংগীত একাডেমী’র সভাপতি মোস্তাফিজ্জোহা সেলিম জানান, ২০০২ সালে প্রথম বেনাপোলের সরগম সংগীত একাডেমী ও ভারতের ২৪ পরগনার ২১ উদযাপন কমিটির আয়োজনে যৌথ মাতৃভাষা দিবস পালন শুরু হয় শূন্যরেখায়। আর ২০১২ সাল থেকে সরকারিভাবে এ দিবসটি পালন করে আসছে বেনাপোল পৌরসভা ও ভারতের বঁনগা পৌরসভা।