পাকিস্তানে নওয়াজ শরিফের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান মুসলিম লীগ (পিএমএল-এন) ও পাকিস্তান পিপলস পার্টিসহ (পিপিপি) কয়েকটি দল জোট সরকার গঠনের ঘোষণা দিয়েছে। যদিও ৮ ফেরুয়ারির নির্বাচনে কারাগারে থাকা ইমরান খানের সমর্থকেরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অধিকাংশ আসনে জয়ী হয়েছেন। পাকিস্তানের প্রধান দুটি দল পিএমএল-এন ও পিপিপি ২০২২ সালে ইমরান খান সরকারকে উৎখাত করে। পরে পিএমএল-এনের প্রেসিডেন্ট শাহবাজ শরিফের নেতৃত্বে জোট সরকার গঠন করেছিল তারা। এবার নতুন জোট সরকার গঠনের ঘোষণা দিল তারা।
মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) রাতে পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদে দলগুলোর নেতাদের বৈঠক শেষে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে পিপিপির কো-চেয়ারম্যান আসিফ আলী জারদারি নতুন জোট সরকার গঠনের ঘোষণা দেন। এ সময় শাহবাজ শরিফও একই কথা বলেন। তিনি এই নতুন সরকারের নেতৃত্বে থাকবেন।
এর আগে পিএমএল-এনের প্রতিষ্ঠাতা নওয়াজ শরীফ প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী হিসেবে ছোট ভাই শাহবাজকে মনোনীত করার ঘোষণা দেন। একইসঙ্গে তিনি পাঞ্জাব প্রাদেশিক পরিষদের মুখ্যমন্ত্রী প্রার্থী হিসেবে দলের জ্যেষ্ঠ ভাইস প্রেসিডেন্ট ও মেয়ে মরিয়ম নওয়াজের নাম ঘোষণা করেন।
গত বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) পাকিস্তানে একযোগে জাতীয় ও চার প্রাদেশিক পরিষদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। জাতীয় পরিষদের ২৬৬ আসনের মধ্যে ২৬৫ আসনে ভোট হয়। এতে কোনো দল নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। জাতীয় পরিষদে ইমরান খান সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ৯২, নওয়াজ শরিফের পিএমএল-এন ৭৫ ও বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারির পিপিপি ৫৪ আসন পেয়েছে। বাকি আসন পেয়েছে অন্য দলগুলো।
পাকিস্তানে সরকার গঠন করতে জাতীয় পরিষদে অন্তত ১৩৪ আসন দরকার। এ জন্য জোট সরকার গঠন করতে শুরু থেকেই পিপিপি এবং জাতীয় পরিষদে ১৭ আসন পাওয়া মুত্তাহিদা কওমি মুভমেন্ট-পাকিস্তানের (এমকিউএম-পি) নেতাদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে আসছিলেন পিএমএল-এনের নেতারা।
এমনকি তারা সাবেক ক্রিকেটার ও প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দল তেহেরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) সঙ্গেও আলোচনার আগ্রহ প্রকাশ করে। কিন্তু দুর্নীতির অভিযোগে আদিয়ালা কারাগারে সাজা ভোগ করা ইমরান খান কোনো ধরনের সহযোগিতা করতে অস্বীকৃতি জানান। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘আমরা পিএমএল-এন, পিপিপি কারো সঙ্গেই বসব না।’
এ পরিপ্রেক্ষিতে রোববার লাহোরে পিপিপির চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারির বাসায় দুই দলের নেতাদের বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে দুই দল জানায়, পাকিস্তানে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য ঐকমত্যে পৌঁছেছে তারা। তবে জোট সরকারের প্রধানমন্ত্রী কে হবেন, তা নিয়ে আলোচনা চলছিল। পিপিপির পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী পদে বিলাওয়ালকে চাওয়া হচ্ছিল।
এসব বিষয় নিয়ে গত সোমবার ও মঙ্গলবার পিপিপির কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক হয়। এরপর গতকাল বিলাওয়াল এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, তিনি নিজেকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী পদে প্রার্থিতা থেকে প্রত্যাহার করে নিচ্ছেন। বিলওয়াল বলেন, প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনি তার পিতাকে আবারও দেখতে চান। বিলাওয়াল বলেন, ‘তিনি আমার পিতা, এজন্যে আমি এ কথা বলছি না। দেশ এখন এক সংকটময় মুহূর্তে আছে। এ আগুন নেভানোর ক্ষমতা আসিফ আলী জারদারিই আছে।’