বৈদেশিক বিনিয়োগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) ও কমনওয়েলথ এন্টারপ্রাইজ অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কাউন্সিল (সিডব্লিউইআইসি) একসঙ্গে কাজ করছে। মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) বিডার কনফারেন্স রুমে সিডব্লিউইআইসির চেয়ারম্যান লর্ড মারল্যান্ডের সঙ্গে মতবিনিময়ের পর বিডা ও সিডব্লিউইআইসির যৌথ প্রেস কনফারেন্সে বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান (সিনিয়র সচিব) লোকমান হোসেন মিয়া এ কথা বলেন।
এ সময় তিনি বলেন, বাণিজ্য সম্প্রসারণ ও বৈদেশিক বিনিয়োগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে একসঙ্গে কাজ করছে বিডা ও সিডব্লিউইআইসি। কমনওয়েলথ এন্টারপ্রাইজ অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কাউন্সিল (সিডব্লিউইআইসি) বিশ্ববাজারে বাংলাদেশকে উপস্থাপনসহ কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলো থেকে অধিকহারে বিনিয়োগের সুযোগ করে দেবে। সেই সঙ্গে বাংলাদেশে সিডব্লিউইআইসির একটি হাব অফিস খোলা হবে, যাতে আমাদের দেশের ব্যবসায়ীরা খুব সহজেই অন্য দেশের সঙ্গে বাণিজ্য সম্প্রসারণ করতে পারে এবং কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলো থেকে বিনিয়োগ আনতে পারে।
প্রেস ব্রিফিংয়ে সিডব্লিউইআইসির চেয়ারম্যান লর্ড মারল্যান্ড বলেন, সিডব্লিউইআইসি কমনওয়েলথভুক্ত ৫৬ দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক উন্নয়ন, বাণিজ্য সম্প্রসারণ ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি নিয়ে কাজ করে। আমাদের কাজ হলো কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর আর্থ-সামাজিক ও অবকাঠামো উন্নয়ন এবং পলিসি পর্যবেক্ষণ, সে দিক দিয়ে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ খুবই উজ্বল। কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে ভারত ও নাইজেরিয়ার মতো বাংলাদেশের অর্ধেক জনসমষ্টির বয়স ৩০ এর নিচে, সেই সঙ্গে বাংলাদেশে রয়েছে বিশাল মার্কেট যা সহজেই বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করবে। ঢাকায় সিডব্লিউইআইসি হাব অফিস স্থাপিত হলে, কমনওয়েলথভুক্ত দেশসমূহের ব্যবসায়ীদের মধ্যে আন্তঃযোগাযোগ বহুলাংশে বৃদ্ধি পাবে, যার ফলে বাংলাদেশে বাণিজ্য সম্প্রসারণ ও বিদেশী বিনিয়োগ দ্রুততম সময়ের মধ্যে সম্ভব হবে।
মতবিনিময় সভায় বিডা ও সিডব্লিউইআইসির মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি, বিনিয়োগ উন্নয়নে সহায়তার জন্য উভয় পক্ষের সম্মতিতে কাঠামো স্থাপন, পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে প্রাতিষ্ঠানিক সম্পর্ক ও সক্ষমতা বৃদ্ধি, স্থানীয় ও বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণ এবং কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্য সম্প্রসারণের লক্ষ্যে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করা হয়।
উল্লেখ্য, সিডব্লিউইআইসি একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান যা কমনওয়েলথ সদস্য দেশগুলোর সরকার প্রধান কর্তৃক ম্যান্ডেটপ্রাপ্ত হয়ে ৫৬টি সদস্য দেশে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সংক্রান্ত সহযোগিতা প্রদান করে থাকে। বিনিয়োগ ও বাণিজ্য উন্নয়নের লক্ষ্যে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান এবং সরকারি প্রতিষ্ঠানের মোট ১৪০টি সহযোগী প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে সিডব্লিউইআইসি সংস্থার নেটওয়ার্ক গড়ে উঠেছে।
বাংলাদেশ ২০১৮ সালে সিডব্লিউইআইসির সদস্যপদ গ্রহণ করেছে। সিডব্লিউইআইসি প্রতি ২ বছর পর সদস্যভুক্ত দেশে আন্তর্জাতিক বিজনেস ফোরামের আয়োজন করে। ২০২১ সালের ১ নভেম্বর গ্লাসগোতে অনুষ্ঠিত কপ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গ্রিন ইনভেস্টমেন্ট অ্যাওয়ার্ড ঘোষণা করা হয় এবং সিডব্লিউইআইসি কর্তৃক ২০২২ সালে লন্ডনে আয়োজিত কমনওয়েলথ ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট সামিটে প্রথমবারের মতো অ্যাওয়ার্ডটি প্রদান করা হয়।
বিডা ও সিডব্লিউইআইসির মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতার অংশ হিসেবে গত বছরের ১৩-১৪ সেপ্টেম্বর ঢাকায় ‘কমনওয়েলথ ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড ট্রেড ফোরাম ২০২৩’ অনুষ্ঠিত হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ আয়োজনের উদ্বোধন করেন। ফোরামে কমনওয়েলথভুক্ত ৫৬টি দেশের প্রায় ৩০০ প্রতিনিধি এবং ১৪টি দেশের মন্ত্রী/প্রতিমন্ত্রী অংশগ্রহণ করেন। সে সময় উগান্ডার কোম্পানি ইকো ব্রিক্সকে পরিবেশবান্ধব ওয়েস্ট রিসাইক্লিংয়ে অবদানের জন্য প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়। বাণিজ্য সম্প্রসারণের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোকে বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগের আহবান জানিয়ে বলেছিলেন, আমরা সারাদেশে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল ও ৩৯টি হাই-টেক পার্ক প্রতিষ্ঠা করেছি, যা বিদেশী বিনিয়োগের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। বাংলাদেশে বিদেশী বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য বিডা ও সিডব্লিউইআইসি যৌথভাবে কাজ করে চলছে।