সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে ছাড়াই পাকিস্তানে জাতীয় নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। স্থানীয় সময় সকাল ৮টা (বাংলাদেশ সময় সকাল ৯টা) থেকে এই ভোটগ্রহণ শুরু হয় এবং একটানা তা চলবে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। ভোটগ্রহণ উপলক্ষ্যে পাকিস্তানজুড়ে মোবাইল পরিবেষা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ক্রমবর্ধমান সহিংসতা ও নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতির কারণে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির সরকার। খবর দ্য ডন এবং দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনাল। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঘড়ির কাঁটা আজ সকাল ৮টা বেজে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশব্যাপী ভোট কেন্দ্রগুলো ভোটারদের জন্য খুলে দেয়া হয়েছে এবং ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। কোনো ধরনের বিরতি ছাড়াই আজ বিকেল ৫টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ চলবে। ১৬তম এ সাধারণ নির্বাচনে পাকিস্তান জুড়ে নাগরিকরা ৯০ হাজার ৬৭৫টি ভোট কেন্দ্রে তাদের ভোট দিচ্ছেন। জাতীয় পরিষদের ২৬৬টি আসনে মোট ৫ হাজার ১২১ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এসব প্রার্থীদের মধ্যে মাত্র ৩১৩ জন নারী।
এদিকে নির্বাচন ঘিরে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে পাকিস্তানের কিছু এলাকায়। গতকাল বুধবার পৃথক বোমা ও গ্রেনেড হামলায় অন্তত ২৯ জন নিহত হয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সারাদেশে ‘সাময়িকভাবে’ মোবাইল পরিষেবা স্থগিত করা হবে বলে জানিয়েছে পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ‘নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতির’ আলোকে ‘সাময়িকভাবে সারা দেশে মোবাইল পরিষেবা স্থগিত করার’ এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলেও মন্ত্রণালয়টি জানিয়েছে।
এক বিবৃতিতে মন্ত্রণালয়টি বলেছে, ‘সাম্প্রতিক সময়ে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বৃদ্ধির এবং প্রাণহানির ফলে দেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। আর এই কারণে নিরাপত্তা হুমকির বিরুদ্ধে সুরক্ষার ব্যবস্থা নেওয়ার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে।’ এর আগে জিও নিউজ জানিয়েছিল, করাচি, লাহোর এবং পেশোয়ারসহ পাকিস্তানের বেশ কয়েকটি জায়গায় মোবাইল ফোন পরিষেবা ব্যাহত হয়েছে।
পৃথক প্রতিবেদনে রয়টার্স ও ডন বলছে, কারাবন্দি সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সমর্থিত প্রার্থী ও পাকিস্তান মুসলিম লীগ (পিএমএল-এন) প্রার্থীদের মধ্যে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) দল গত জাতীয় নির্বাচনে জয়ী হয়েছিল। তবে এবারের প্রেক্ষাপট পুরো ভিন্ন। পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের দলীয় প্রধান ইমরান খানসহ শীর্ষস্থানীয় অনেক নেতা কারাবন্দী। দলীয় প্রতীকে ভোট করতে পারছে না পিটিআই। এ পরিস্থিতি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোটের লড়াইয়ে আছেন দলটির নেতারা। আজকের ভোটের লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত থাকার ঘোষণা দিয়েছেন তাঁরা। ভোটে হস্তক্ষেপ হতে পারে, সেটা মাথায় রেখেই কৌশল সাজানোর কথাও বলেছেন পিটিআই কর্মী–সমর্থকেরা।
রাজধানী ইসলামাবাদের একটি বিপণিবিতানের মুঠোফোন বিক্রয়কর্মী বরকত উল্লাহ। ২২ বছর বয়সী এই তরুণ বলেন, ‘পতাকা-ব্যাজ এগুলো দেখানোর জন্য। কিন্তু ভোট দেব মন থেকেই।’
ইসলামাবাদের আরেক বাসিন্দা হাসান আলী জানালেন, পিটিআইয়ের পতাকা ও ব্যাজ পরিধান করে এবং দলীয় সংগীত গাইতে গাইতে তিনি ভোটকেন্দ্রে যাবেন। ২৮ বছর বয়সী হাসান বলেন, ‘কতজনকে তারা ঠেকাবে? আমি কাউকে ভয় পাই না।’ প্রয়োজনে অন্য দলের লোকজনের সঙ্গে মিশে গিয়ে তিনি ইমরানের পিটিআইকে ভোট দিয়ে আসবেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, নির্বাচনে কে আসলে বিজয়ী হবেন তা স্পষ্ট না হলেও এটি নির্ধারণে পাকিস্তানের শক্তিশালী সামরিক বাহিনীর ক্ষমতাধর জেনারেলরা বেশ বড় ভূমিকা রাখতে পারেন। স্বাধীনতার পর থেকে গত ৭৬ বছরে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে পারমাণবিক অস্ত্রধারী দেশটিতে আধিপত্য বিস্তার করে রেখেছে।