বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী বলেছেন, ‘মিয়ানমার সীমান্ত বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। দেশটির ২৬৪ বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি) ও সেনাসদস্য বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন। আমরা ধৈর্য ধারণ করে মানবিক দিক থেকে আন্তর্জাতিক সুসম্পর্ক বজায় রেখে পরিস্থিতি মোকাবিলার চেষ্টা করছি।’ গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় আজ মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে বিজিবি মহাপরিচালক এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, ‘গতকাল সোমবার প্রধানমন্ত্রী এই দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী আমাদের ধৈর্য ধারণের নির্দেশ দিয়েছেন। সেই ধারাবাহিকতায় আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’
বিজিবি প্রধান আরও বলেন, ‘গতকাল সোমবার রাত পর্যন্ত ১১৫ জন বিজিপি, সেনা সদস্য এবং অন্যান্য সদস্য আত্মসমর্পণ করে আমাদের কাছে আশ্রয় নিয়েছেন। আজ মঙ্গলবার সকালে আরও ১১৪ জন যোগ হয়েছেন। পরবর্তী সময়ে আজ দুপুরের মধ্যে আরও ৩৫ জন যোগ হয়ে বর্তমানে ২৬৪ জনে দাঁড়িয়েছে। এই ২৬৪ জনকে আমরা আশ্রয় দিয়েছি। তাদের খাবারেরও ব্যবস্থা করেছি। এদের মধ্যে আহত ১৫ জন ছিল। তারমধ্যে আটজন গুরুতর আহত ছিল।’
মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী বলেন, ‘বিজিবির ব্যবস্থাপনায় এদের (আশ্রয় নেওয়াদের) চারজনকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। আর চারজনকে চিকিৎসকের পরামর্শক্রমে তাদের জীবন রক্ষার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে স্থানান্তর করা হয়েছে। আমাদের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কাজ করছে এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মিয়ানমারের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে তাদের প্রত্যাবর্তনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। আমরা আশা করছি, এটি খুব শিগগিরই হবে।‘
বিজিবি প্রধান আরও বলেন, ‘সীমান্তে গোলাগুলি হলে কিছু শেল এসে বাংলাদেশে পড়ছে। দুর্ভাগ্যজনক ভাবে সোমবার এক রোহিঙ্গা ও এক বাংলাদেশি নারী নিহত হয়েছেন। মৃত্যু কোনো ভাবেই আমাদের কাম্য নয়। আমরা বারবার বলছি এবং আজকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি বড় মিটিং হচ্ছে। আগামীকাল বুধবার আমি সরেজমিন পরিদর্শনে যাব। আজ সকালে মিয়ানমারের ডিএ (ডিফেন্স অ্যাটাসে) আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন এবং আমরা সব দিক থেকে এনগেজ করে যত তাড়াতাড়ি এই সমস্যার আশু সমাধান করা যায়, সেই চেষ্টা করছি। আজ ৬৫ জন রোহিঙ্গা নৌকায় করে পানিপথ দিয়ে প্রবেশ করার চেষ্টা করেছে। সেখানে আমাদের টেকনাফ বিজিবি তাদের প্রতিহত করে পুশব্যাক করার কার্যক্রম চলমান আছে। আমরা কোনো রোহিঙ্গাকে আর ভেতরে ঢুকতে দেব না। এভাবে আমরা দেশের অখণ্ডতা বজায় রেখে সরকারপ্রধানের নির্দেশনায় কাজ করে যাচ্ছি এবং পরিস্থিতি এখন পর্যন্ত সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আছে।’
এর আগে দুপুর পৌনে ২টায় বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী টুঙ্গিপাড়া পৌছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিসৌধ বেদীতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পরে তিনি মন্তব্য বইতে মন্তব্য লিখে স্বাক্ষর করেন। এ সময় বিজিবি সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ যশোর রিজিয়ন কমান্ডার, গোপালগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) শেখ জোবায়ের আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।