বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর শেষে দেশে বিদ্যুৎ খাতের মোট উৎপাদন সক্ষমতা দাঁড়াবে ৩১ হাজার মেগাওয়াটে। দেশে ২০২৩ সালে বিদ্যুতের দৈনিক সর্বোচ্চ গড় উৎপাদন হয়েছিল সেপ্টেম্বরে, ১৩ হাজার ২০৮ মেগাওয়াট। আর গড় উৎপাদন সর্বনিম্নে নেমেছিল জানুয়ারিতে, ৯ হাজার ৬০০ মেগাওয়াটে। ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হলেও চলতি বছর বিদ্যুতের সর্বোচ্চ গড় উৎপাদন ১৫ হাজার মেগাওয়াটের ঘরেই থাকবে। যদিও বিদ্যুৎ বিভাগের ভাষ্য হলো চলতি বছর বিদ্যুতের সর্বোচ্চ উৎপাদন প্রাক্কলন করা হয়েছে সাড়ে ১৭ হাজার মেগাওয়াট। বিদ্যুৎ চাহিদা পরিমাপের ক্ষেত্রে সাধারণত একটি নির্দিষ্ট সময়ের সর্বোচ্চ (পিক আওয়ার) ও সর্বনিম্ন (অফপিক আওয়ার) উৎপাদনকে বিবেচনা করা হয় বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। সরকারি বিদ্যুৎ সঞ্চালন কোম্পানি পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০২৩ সালে বিদ্যুতের সর্বোচ্চ গড় উৎপাদন ছিল সেপ্টেম্বরে। ওই মাসে সন্ধ্যায় পিক আওয়ারে সর্বোচ্চ উৎপাদন ছিল ১৪ হাজার ৬৫ মেগাওয়াট। দিনের বেলায় ছিল ১২ হাজার ৩৫১ মেগাওয়াট। দিন ও রাতের হিসাবে ওই মাসে বিদ্যুতের সর্বোচ্চ গড় উৎপাদন ছিল ১৩ হাজার ২০৮ মেগাওয়াট।
সর্বনিম্ন উৎপাদন হয় জানুয়ারিতে। ওই সময় সন্ধ্যায় পিক আওয়ারে সর্বোচ্চ গড় উৎপাদন ছিল ৯ হাজার ৬০৮ মেগাওয়াট। আর দিনে ছিল ৮ হাজার ৪৬৬ মেগাওয়াট। দিন ও রাতের হিসাব যোগ করে দেখা গেছে ওই মাসে গড় সর্বনিম্ন উৎপাদন ছিল ৯ হাজার ৩৭ মেগাওয়াট।
বিপিডিবির তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা দেখানো হয়েছে মোট ২৫ হাজার ৯৫১ মেগাওয়াট। ২০২৪ সালের মধ্যে সরকারি, বেসরকারি ও যৌথ বিদ্যুৎ কেন্দ্র মিলিয়ে আরো অন্তত ৫ হাজার ৪৮০ মেগাওয়াট উৎপাদন সক্ষমতায় যুক্ত হওয়ার কথা রয়েছে। এর মধ্যে সরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে যুক্ত হবে ২ হাজার ৭৭৪ মেগাওয়াট, বেসরকারি থেকে ১ হাজার ৪৯২ মেগাওয়াট ও যৌথ বিদ্যুৎ কেন্দ্র (পিপিপি) থেকে যুক্ত হবে ১ হাজার ২৪৪ মেগাওয়াট। এ সক্ষমতা যুক্ত হলে দেশে মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা পৌঁছবে ৩১ হাজার ৪৩১ মেগাওয়াটে।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের বিদ্যুৎ খাত দীর্ঘদিন ধরেই লোকসান ও আর্থিক সংকটের বৃত্তে ঘুরপাক খাচ্ছে। এ বিদ্যুতে আর্থিক লোকসান থেকে বের হতে হলে খাতটি থেকে অযৌক্তিক ব্যয় কমিয়ে আনতে হবে। বিশেষ করে বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ ও অব্যবহৃত বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যয় থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও বুয়েটের সাবেক অধ্যাপক ইজাজ হোসেন বলেন, ‘বিদ্যুৎ খাতে চাহিদার চেয়ে সক্ষমতা বৃদ্ধির হার অনেক বেশি। এটি একটা পর্যায়ে গিয়ে বিদ্যুতের ট্যারিফের ওপর প্রভাব ফেলছে। বিদ্যুতের চাহিদা বাড়ার কথা বলা হচ্ছে, আসলে অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় চলতি বছর এটি নাও বাড়তে পারে। আগামীতে চাহিদার প্রবৃদ্ধি কতটুকু হবে সেটিও বলা মুশকিল। এ পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে হলে অদক্ষ বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর ব্যবহার বাদ দিতে হবে। মেয়াদোত্তীর্ণ বিদ্যুৎ কেন্দ্র আর নবায়ন করা যাবে না। সেই সঙ্গে কোনোভাবেই বেইজ লোডভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা এ মুহূর্তে করা যাবে না। বর্তমানে যেসব বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাজ চলছে, সেগুলোকে চাহিদার সঙ্গে ভারসাম্যপূর্ণ করতে হবে।’