নির্বাচনহাইলাইটস

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পন্ন

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পন্নদ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পন্নদ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আগামীকাল রোববার (৭ জানুয়ারি) সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীন ভোট গ্রহণ চলবে। নওগাঁ-২ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আমিনুল ইসলাম মারা যাওয়ায় ওই আসনের নির্বাচন স্থগিত করেছে ইসি। ফলে একটি বাদ দিয়ে ২৯৯ আসনে ভোট হবে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবশ্যই উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। তিনি বলেন, ‘সর্বাধিক সংখ্যক প্রার্থী এবারের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। উৎসবমুখর ভোট হবে এটাই আশা।’

যেকোনো মূল্যে এবারের নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে হবে উল্লেখ করে বলেন, এজন্য ইসির পক্ষ থেকে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। ভোটাররা যাতে কেন্দ্রে এসে নির্ভয়ে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে নিরাপদে বাড়ি ফিরে যেতে পারেন, সেজন্য পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। নির্বাচনের দিন মাঠ পর্যায়ে পুলিশ, র‌্যাব, আনসার-ভিডিপি, আর্মি, নেভি, কোস্টগার্ডসহ সবমিলিয়ে প্রায় আট লাখ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন থাকবে। ভোটগ্রহণে থাকবেন আট লাখ কর্মকর্তা-কর্মচারী। এছাড়া এক লাখ কর্মকর্তা-কর্মচারী স্ট্যান্ডবাই থাকবে। যেকোনো অপরাধে তাৎক্ষণিক শাস্তি দিতে মাঠে থাকছেন তিন হাজার ম্যাজিস্ট্রেট ও বিচারক।

এদিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আজ সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। সন্ধ্যা ৭টায় নির্বাচন কমিশন ভবন থেকে বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারে তার ভাষণ সরাসরি সম্প্রচার করা হবে। এর আগে গত ১৫ নভেম্বর জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। ওই ভাষণে তিনি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন। ওইদিন রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবন থেকে তার ভাষণ বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি এড়াতে ভোট কেন্দ্র, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান এবং ভবনের নিরাপত্তা জোরদার ও নজরদারি বৃদ্ধির নির্দেশ দিয়েছেন ইসি। নির্দেশনায় বলা হয়েছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে সারা দেশে সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ অন্যান্য স্থাপনায় মোট ৪২ হাজার ২৪টি ভোট কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভোট কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে সেসব প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি, সম্পাদক বা অনুরূপ কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি এবং ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের মালিকপক্ষের সঙ্গে সভা করে বা যোগাযোগের মাধ্যমে অথবা দায়িত্ব দিয়ে ভোট কেন্দ্রের নিরাপত্তা ও নজরদারি বৃদ্ধি করতে হবে। এবার ভোটের সর্বশেষ আপডেট জানার জন্য ‘স্মার্ট ইলেকশন ম্যানেজমেন্ট বিডি’ অ্যাপস চালু করা হয়েছে। এর মাধ্যমে ভোটের সর্বশেষ পরিস্থিতির সঠিক তথ্য সম্পর্কে জনগণ যেকোনো জায়গা থেকে সহজে জানতে পারবে। এছাড়া ভোটাররা তার ভোটার নম্বর ও কেন্দ্রের নাম এবং অবস্থান জানতে পারবে। গুগল প্লে স্টোরে গিয়ে অ্যাপটি ডাউনলোড করা যাবে।

এবার ভোটে রিটার্নিং অফিসার হিসেবে ৬৬ জন দায়িত্ব পালন করছেন। এর মধ্যে দুইজন বিভাগীয় কমিশনার ও ৬৪ জন জেলা প্রশাসক। কমিশনের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৯৯টি সংসদীয় আসনে এক হাজার ৯৭০ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ইসিতে নিবন্ধিত ৪৪টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে এই নির্বাচনে ২৮টি রাজনৈতিক দলের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন এক হাজার ৫৩৪ জন প্রার্থী। আর স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোটের মাঠে আছেন ৪৩৬ জন।

২৯৯ সংসদীয় আসনে মোট ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ৪২ হাজার ২৪টি। এসব কেন্দ্রে ভোটকক্ষ দুই লাখ ৬১ হাজার ৯১২টি। সর্বশেষ প্রকাশিত তালিকা অনুযায়ী, এবারের নির্বাচনে মোট ভোটার ১১ কোটি ৯৬ লাখ ৮৯ হাজার ২৮৯ জন। যার মধ্যে পুরুষ ভোটারের সংখ্যা ছয় কোটি ৭৬ লাখ নয় হাজার ৭৪১ ও নারী ভোটারের সংখ্যা পাঁচ কোটি ৮৯ লাখ ১৮ হাজার ৬৯৯। এছাড়া সারাদেশে এবার তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার আছেন ৮৪৯ জন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবেন স্থানীয় ২০ হাজার ৭৭৩ জন পর্যবেক্ষক। এছাড়া প্রায় দুই শতাধিক বিদেশী পর্যবেক্ষক থাকছেন বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ।

গত ২ জানুয়ারি বিকাল পর্যন্ত ১৮৬ জন পর্যবেক্ষক-সাংবাদিককে অনুমোদন দিয়েছে নির্বাচন কমিশন, যাদের মধ্যে ১২৭ জন পর্যবেক্ষক আর ৫৯ জন গণমাধ্যমকর্মী। আরো কিছু বিদেশি পর্যবেক্ষকের আবেদন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, সব মিলিয়ে দুই শতাধিকের বেশি হবে।

নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা দেয়ার জন্য গত ৩ জানুয়ারি থেকে সেনাবাহিনী ৬২টি জেলায় নিয়োজিত হয়েছে। উপকূলীয় দুটি জেলাসহ (ভোলা ও বরগুনা) সর্বমোট ১৯টি উপজেলায় বাংলাদেশ নৌবাহিনী দায়িত্ব পালন করবে। সমতলে সীমান্তবর্তী ৪৫টি উপজেলায় বিজিবি এককভাবে দায়িত্ব পালন করবে এবং সীমান্তবর্তী ৪৭টি উপজেলায় সেনাবাহিনী বিজিবি ও উপকূলীয় চারটি উপজেলায় কোস্ট গার্ডের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে যৌথভাবে দায়িত্ব পালন করবে। বাংলাদেশ বিমান বাহিনী হেলিকপ্টারের মাধ্যমে দুর্গম পার্বত্য অঞ্চলের ভোট কেন্দ্রে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেবে।

এই নির্বাচনে এক লাখ ৮২ হাজার ৯১ জন পুলিশ ও র‌্যাব সদস্য আইনশৃংখলা রক্ষায় মোতায়েন করা হয়েছে। পাঁচ লাখ পাঁচ হাজার ৭৮৮ জন সাধারণ আনসার ও ভিডিপি সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। তারা গত ২৯ ডিসেম্বর থেকে কাজ শুরু করেছে ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত মাঠে থাকবে।

ভোটার স্লিপ বিতরণ: এদিকে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে কেন্দ্রীয় মনিটরিং ও কো-অর্ডিনেশন সেল গঠন করেছে। নির্বাচনকালীন সহিংসতায় অগ্নিকাণ্ডসহ যেকোনো ধরনের দুর্ঘটনা মোকাবেলায় এ মনিটরিং সেল গঠন করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা যায়, গুরুত্বপূর্ণ ভোট কেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দুই লাখ ১৫ হাজার সদস্য মোতায়েন থাকবে। সাধারণ ভোটকেন্দ্রে চার লাখ ৭২ হাজার সদস্য মোতায়েন থাকবে। প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে ১৫ থেকে ১৭ জনের নিরাপত্তা সদস্যের একটি দল মোতায়েন করা হবে।

নির্বাচন কমিশন জানায়, মেট্রোপলিটন এলাকার বাইরে অস্ত্রধারী দু’জন পুলিশ, অস্ত্রধারী একজন আনসার, অস্ত্র বা লাঠিধারী একজন আনসার, ১০ জন আনসার, লাঠি হাতে একজন বা দু’জন গ্রামপুলিশ সদস্যসহ ১৫ থেকে ১৬ জনের একটি দল সব সাধারণ ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা দেবে। তবে প্রতি গুরুত্বপূর্ণ ভোটকেন্দ্রের ক্ষেত্রে অস্ত্রসহ তিনজন পুলিশসহ ১৬ থেকে ১৭ জনের দল থাকবে। নির্বাচন উপলক্ষে ৫ জানুয়ারি মধ্যরাত ১২টা থেকে ৮ জানুয়ারি মধ্যরাত পর্যন্ত মোটর সাইকেল চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। তবে ইসির স্টিকার লাগানো মোটরসাইকেল এই নিষেধাজ্ঞার আওতামুক্ত থাকবে। এছাড়া ভোটের জন্য নির্ধারিত দিনের পূর্ববর্তী মধ্যরাত অর্থাৎ ৬ জানুয়ারি রাত ১২টা থেকে ৭ জানুয়ারি রাত ১২টা পর্যন্ত কিছু যানবাহন চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এসব যানবাহনের মধ্যে রয়েছে ট্যাক্সি ক্যাব, পিকআপ, মাইক্রোবাস ও ট্রাক।

এমন আরো সংবাদ

Back to top button