দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সারা দেশে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রায় আট লাখ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। ২৯ ডিসেম্বর থেকে মাঠে রয়েছে পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, ব্যাটালিয়ন আনসার, এপিবিএন ও কোস্টগার্ড। এছাড়া ৩ জানুয়ারি থেকে মাঠে নেমেছে সশস্ত্র বাহিনী। তবে একক বাহিনী হিসেবে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে আনসার থেকে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সংস্থাটির পাঁচ লাখের বেশি সদস্য মাঠে নামানো হয়েছে।
প্রতিটি কেন্দ্রেই আনসার সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন জানিয়ে মহাপরিচালক বলেন, ‘নির্বাচনসংক্রান্ত নিরাপত্তায় প্রতিটি কেন্দ্রে ১২ জন করে আনসার ও ভিডিপি সদস্য সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করবেন। তাদের মধ্যে একজন প্লাটুন কমান্ডার (পিসি) ও একজন সহকারী প্লাটুন কমান্ডারের (এপিসি) নেতৃত্বে ছয়জন পুরুষ ও চারজন নারী ভিডিপি সদস্য নিয়োজিত থাকবেন। পিসি ও এপিসিরা অস্ত্রসহ এবং ভিডিপি সদস্যরা লাঠি হাতে ভোট কেন্দ্রের নিরাপত্তা ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত থাকবেন। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটলে তা দ্রুত ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানোর নির্দেশনা দেয়া রয়েছে।’
মেজর জেনারেল একেএম আমিনুল হক বলেন, ‘একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন জাতিকে উপহার দেয়ার জন্য নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা মোতাবেক কাজ করতে আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রতিটি সদস্যকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সাধারণ মানুষ যাতে নির্ভয়ে ভোট কেন্দ্রে আসতে পারে সেজন্য আনসার-ভিডিপির সদস্যরা নিরাপত্তার পরিবেশ নিশ্চিত করতে কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছেন। অত্যন্ত সতর্কতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনের জন্য সচেষ্ট থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে কোনো ধরনের অবহেলা বা গাফিলতি বরদাশত করা হবে না।’
এ সময় বাহিনীর অতিরিক্ত মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজিম উদ্দিন, উপমহাপরিচালক (অপারেশনস) মো. ফখরুল আলম, উপমহাপরিচালক (প্রশিক্ষণ) মো. জিয়াউল হাসান ও অন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, দেশের প্রতিটি কেন্দ্রে পুলিশের পাশাপাশি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় ১২ জন আনসার সদস্য মোতায়েন থাকবেন। আনসার ছাড়াও গ্রামঞ্চলের নির্বাচন কেন্দ্রগুলোতে এক বা একাধিক গ্রাম পুলিশ মোতায়েন থাকার কথা জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। ২০ নভেম্বর আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে বৈঠক করে ইসি। ওই বৈঠকে কোন বাহিনীর কতসংখ্যক সদস্য কতদিনের জন্য মোতায়েন করা হবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আনসার মোতায়েন থাকবে ভোটের আগে-পরে মোট ছয়দিন। আর পুলিশ মোতায়েন থাকবে পাঁচদিন।
এরই মধ্যে নির্বাচন ঘিরে যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে সারা দেশের ভোট কেন্দ্রগুলোতে নিরাপত্তা জোরদার করার নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। গতকাল সন্ধ্যায় নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের উপসচিব মো. আতিয়ার রহমান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এমন নির্দেশনা দেয়া হয়।
চিঠিতে বলা হয়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে সারা দেশে সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ অন্যান্য স্থাপনায় ৪২ হাজার ২৪টি ভোট কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভোট কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে সেসব প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি, সম্পাদক বা অনুরূপ কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি এবং ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের মালিক পক্ষের সঙ্গে সভা করে বা যোগাযোগের মাধ্যমে অথবা দায়িত্ব দিয়ে ভোট কেন্দ্রের নিরাপত্তা ও নজরদারি বাড়াতে হবে।