নির্বাচনহাইলাইটস

ভোটের প্রস্তুতি শেষ করে আনছে নির্বাচন কমিশন

নির্বাচন ভবন। ফাইল ছবি
নির্বাচন ভবন। ফাইল ছবি

আর তিনদিন পরই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। বিএনপি ও তাদের সমমনারা এই নির্বাচনে অংশ না নিলেও নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ করতে সার্বিক প্রস্তুতি প্রায় শেষ করে আনছে নির্বাচন কমিশন। আজ বুধবার (৩ জানুয়ারি) থেকে মাঠে নামছে সেনাবাহিনী।

নির্বাচন কমিশন গতকাল মঙ্গলবার প্রথমবারের মতো আচরণবিধি লঙ্ঘনের জন্য একজন প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল করেছে। তিনি হলেন লক্ষ্মীপুর-১ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান পবন। অন্যদিকে, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ দ্বৈত নাগরিকত্বের কারণে বরিশাল-৪ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শাম্মী আহমেদ ও বরিশাল-৫ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর প্রার্থিতা বাতিলে হাইকোর্টের আদেশ বহাল রেখেছেন। ফলে তারা আর নির্বাচন করতে পারছেন না। এ ছাড়া ফরিদপুর-৩ আসনে নৌকার প্রার্থী শামীম হকের দ্বৈত নাগরিকত্বের ব্যাপারে আপিল বিভাগ শুনানি করবেন নির্বাচনের পর। ফলে শামীম হক নির্বাচনে প্রার্থী থাকছেন।

পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ধাপে ধাপে মোতায়েন শুরু হয়েছে। বিজিবি ও কোস্টগার্ডও থাকবে। এর বাইরে থাকছেন তিন হাজার ৮২০ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। তবে ইতোমধ্যে আট বিভাগে এক হাজার ১৬২ জন নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটকে নির্বাচনের কাজে নিয়োগ করা হয়েছে। আর ভ্রাম্যমাণ আদালতে আছেন ৭৫৪ জন ম্যাজিস্ট্রেট। আরও এক হাজার ৪০৯ জন ম্যাজিস্ট্রেট ভোটের দিন দায়িত্ব পালন করবেন।

নির্বাচনে নিরাপত্তার মূল দায়িত্ব পালন করবেন পুলিশ সদস্যরা। সারা দেশে মোট এক লাখ ৭৫ হাজার পুলিশ ফোর্স নির্বাচনে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবেন। এর মধ্যে ঢাকায় দায়িত্ব পালন করবেন ২২ হাজার পুলিশ সদস্য। এর বাইরে সেনাসদস্য, বিজিবি, র‌্যাব ও কোস্টগার্ড মিলিয়ে আরও প্রায় ৫০ হাজার ফোর্স মোতায়েন থাকবে। তারা নির্বাচনের দুই-তিন দিন আগেই পূর্ণ শক্তিতে কেন্দ্রের বাইরের নিরাপত্তা, প্রিজাইডিং ও পোলিং অফিসার, ভোটার ও প্রার্থীসহ সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে বলে জানিয়েছে কমিশন।

নির্বাচনে ৪২ হাজার ১৪৯টি ভোটকেন্দ্র এবং ভোটকক্ষ থাকবে দুই লাখ ৬১ হাজার ৫৬৫টি। এবারের নির্বাচনে মোট ১১ কোটি ৯৬ লাখ ৯১ হাজার ৬৩৩ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করার সুযোগ পাবেন।

নির্বাচনে পুলিশ ভোটকেন্দ্রের বাইরের নিরাপত্তায় থাকবে। সেনাবহিনী, বিজিবি, কোস্টগার্ড ও র‌্যাব সদস্যরা স্ট্রাইকিং ফোর্সের দায়িত্ব পালন করবে। আর ভোটকেন্দ্রের ভিতরে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবেন আনসার সদস্যরা। প্রতিটি কেন্দ্রে ১৫ থেকে ১৭ জন আনসার সদস্য থাকবেন। এই কাজে নিয়োজিত থাকবেন সাত লাখেরও বেশি আনসার সদস্য।

দেশের বিভিন্ন এলাকায় ইতোমধ্যে ব্যালট পেপার পাঠানো শুরু হয়েছে। দূরবর্তী ও দুর্গম এলাকা বিবেচনা করে পর্যায়ক্রমে এই ব্যালট পেপার পাঠানো হচ্ছে। ব্যালট বাক্স আগেই পাঠানো শুরু হয়েছে। তবে ভোট কেন্দ্রে ব্যালট পেপার যাবে ভোটের দিন সকালে।

৩০০ আসনের মধ্যে নির্বাচন হবে ২৯৯ আসনে। নওগাঁ-২ আসনে স্বতন্ত্রপ্রার্থী আমিনুল হকের মৃত্যুর কারণে ওই আসনের নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। মোট প্রার্থী এক হাজার ৮৯৫ জন।

নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, ‘নির্বাচনে আমাদের সার্বিক প্রস্তুতি ভালো। ১১টি আসন বাদে আর সব আসনের ব্যালট পেপার পৌঁছে গেছে। বুধবারের মধ্যে ২৯৯ আসনেই ব্যালট পেপার পৌঁছে যাবে। একটি আসনে প্রার্থীর মুত্যুর কারণে নির্বাচন স্থগিত আছে। শতকরা ৮৫ ভাগ কেন্দ্রে ব্যালট পেপার ভোটের দিন সকালে যাবে। আর যে কেন্দ্রগুলো দুর্গম এলাকায়, সেখানে ভোটের আগের দিন যাবে।’

‘আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও প্রস্তুতি ভালো আছে। সেনাবাহিনী বুধবার থেকে মাঠে নামবে। তারা উপজেলা পর্যন্ত পৌঁছে গেছেন। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরাও কাজ শুরু করবেন। নির্বাচনি কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ শেষ হয়েছে। অভিযোগের নিষ্পত্তিও প্রায় শেষ। আমরা একজন প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল করেছি’, বলেন নির্বাচন কমিশনের এই কর্মকর্তা।

অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, ‘আমরা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে এখনও কোনো খারাপ আশঙ্কা করছি না। আমাদের সার্বিক প্রস্তুতি আছে৷’

জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষক পরিষদের (জানিপপ) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ বিভিন্ন জেলায় ঘুরছেন নির্বাচনের সার্বিক প্রস্তুতি দেখতে। তিনি গতকাল মঙ্গলবার গাজীপুরে অবস্থান করছিলেন। তিনি বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলাসহ সার্বিক প্রস্তুতি আমার কাছে ভালোই মনে হচ্ছে। তবে শেষ পর্যন্ত কী হয়, তা নির্বাচনের দিন বোঝা যাবে। নির্বাচন কমিশন একজন প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিলসহ বিভিন্ন বিষয়ে দৃঢ়তার পরিচয় দিচ্ছে। এই নির্বাচনকে নানা কারণে সিরিয়াসলি নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার তো বলেই দিয়েছেন, তাদের ঘাড়ের ওপর থাবা আছে। আর নির্বাচন কমিশনার মো. আনিছুর রহমান বলেছেন, তারা ক্রেডিবল নির্বাচন আয়োজনে ব্যর্থ হলে রাষ্ট্র সংকটে পড়বে।’

ড. কলিমুল্লাহ বলেন, ‘বিএনপিসহ তাদের সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচন বর্জন এবং ভোটদানে বিরত থাকার আহ্বান পুরো প্রক্রিয়াটিকে অপ্রস্তুত অবস্থায় ফেলেছে। সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন হলে সেটা হতো আদর্শ-স্থানীয়। যেটি হচ্ছে সেটা আংশিক ত্রুটিপূর্ণ।’

সংবাদ উৎস
ডয়চে ভেলে

এমন আরো সংবাদ

Back to top button