শিক্ষাহাইলাইটস

নতুন বছরের বই বিতরণ করলেন প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন ছবি: বাসস
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা  বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন ছবি: বাসস

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০২৪ শিক্ষাবর্ষের জন্য মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ উদ্বোধন করেছেন। গতকাল প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী তার কার্যালয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। আজ থেকে সারা দেশে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পাঠ্যপুস্তক বিতরণ কার্যক্রম শুরু হতে যাচ্ছে। নতুন বছর ২০২৪ সালের প্রাক্কালে এ বই বিতরণ অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা দেশবাসীকে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানান। শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী। এছাড়া প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেনও বক্তব্য দেন।

আওয়ামী লীগ সরকার বিশ্বখ্যাত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাঠ্যক্রম অনুসরণ করে বাংলাদেশে একটি আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে চায় উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘‌‌জাতির পিতা বলতেন, “‍‌শিক্ষায় যে খরচ সেটা হচ্ছে বিনিয়োগ।” আমিও সেটাই মনে করি। শিক্ষার ক্ষেত্রে যত টাকা লাগে আমি দেব। বিশ্বে যত নামিদামি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে, তারা কীভাবে শিক্ষা দেয়, কী কারিকুলাম শেখায়—সে পদ্ধতি ব্যবহার করে আমরা সে রকম আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন শিক্ষা ব্যবস্থা বাংলাদেশে তৈরি করতে চাই।’

কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে কারিগরি শিক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, ‘সাধারণ শিক্ষার সঙ্গে সঙ্গে হাতে-কলমে শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে, যাতে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়। সবাই যে শুধু সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত হবে তা নয়, দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে হলে কারিগরি শিক্ষার বিশেষ প্রয়োজন রয়েছে। আমরা সারা দেশে ১০০ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলছি। কলকারখানা গড়ে উঠবে সেখানে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লব আমাদের দ্বারপ্রান্তে, তার জন্য উপযুক্ত প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষায় শিক্ষিত নাগরিক আমাদের প্রয়োজন পড়বে। কাজেই উপযুক্ত কর্মঠ জনগোষ্ঠী আমাদের গড়ে তুলতে হবে। যারা দক্ষতার সঙ্গে কাজ করতে এবং দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে। ফলে দেশের উৎপাদন বাড়বে এবং দেশে বিনিয়োগ আসবে। সেভাবেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’

বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দিয়ে তিনি বলেন, ‘‌নতুন বইয়ের ঘ্রাণ, নতুন বই পড়ে দেখা, এতে মলাট লাগানো এসবের আনন্দটাই আলাদা। বই পড়বে এবং বইয়ের যত্ন নেবে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‌আমরা চাই, আমাদের দেশটা যেন বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারে। সেজন্য আমাদের কারিকুলামগুলোয় পরিবর্তন আনা হয়েছে। আজকে শিক্ষাকে আমরা যেভাবে গুরুত্ব দিচ্ছি, তার ফলে আমাদের সাক্ষরতার হার অনেক বেড়ে গেছে। এ সাক্ষরতার হার যেখানে মাত্র ৪৪ ভাগ ছিল, সেখান থেকে আমরা আজকে ৭৬ দশমিক ৮ ভাগে উন্নীত করেছি।’

তিনি বলেন, ‘‌সব থেকে বড় কথা আমাদের প্রাইমারি স্কুলে ছেলেমেয়ে সবাই সমানভাবে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। সেদিকে লক্ষ রেখে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আমরা বাংলাদেশকে দারিদ্র্যমুক্ত জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ হিসেবে গড়তে চাই। একমাত্র শিক্ষাই পারে সমগ্র জাতিকে দারিদ্র্যমুক্ত করতে। বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ রাখাসহ শিক্ষাকে বহুমুখীকরণ করার দিকে আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি। বিভিন্ন জেলায় বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ ও বিশেষায়িত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে আমরা জ্ঞান-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষার বিকাশে বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছি। কারণ আমাদের একটাই লক্ষ্য—আজকের ছেলেমেয়েরাই ২০৪১ সালের স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার সৈনিক হবে। তারা আমার মতো প্রধানমন্ত্রী হবে, মন্ত্রী হবে, ভালো শিক্ষক হবে, উচ্চ পদে আসীন হবে। কাজেই সেভাবেই তাদের গড়ে তোলা হবে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘‌শিক্ষা ব্যবস্থার প্রসারে সরকার ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত ব্রডব্যান্ড নিয়ে গেছে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ মহাকাশে উৎক্ষেপণের পর বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ উৎক্ষেপণের কাজ শুরু হয়েছে। তৃতীয় সাবমেরিন কেব্‌ল সংযুক্ত করা হলে আরো সুযোগ সৃষ্টি হবে। আমি চাই, প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন জাতি গড়ে উঠবে এবং তা ছোটবেলা থেকেই। আমাদের ছেলেমেয়েরা খুব মেধাবী। কাজেই তাদের সেই মেধা বিকশিত হওয়ার সুযোগ করে দেয়া হবে। তাদের ভেতরের সুপ্ত জ্ঞানকে আমরা কাজে লাগাতে চাই ভবিষ্যতের জন্য। কারণ আমাদের দেশের পরিবেশ পরিস্থিতি বিবেচনা করেই এর জন্য যা প্রয়োজন সেভাবে আমাদের দেশটার উন্নতি করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘‌ছোট্ট সোনামণিদের আমি বলব, মন দিয়ে পড়াশোনা করতে হবে। বাবা-মা, অভিভাবক ও শিক্ষকদের কথা মন দিয়ে শুনতে হবে এবং মানতে হবে। ক্লাসের বই মনোযোগ দিয়ে পড়তে হবে, পাশাপাশি জ্ঞান আহরণের জন্য অন্যান্য বইও পড়তে হবে।’

প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন জাতি গড়ে তোলার কথা তুলে ধরে সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমরা ইনকিউবেশন সেন্টার করেছি। যেখানে ট্রেনিং নিয়ে শুধু দেশে নয়, বিদেশেও যাতে লোকজন কাজ করতে পারে তার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। অর্থাৎ আধুনিক প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন একটি জাতি আমরা গড়ে তুলতে চাই। সে লক্ষ্য নিয়ে যা যা করণীয় এরই মধ্যে আমরা তা করছি।’

এমন আরো সংবাদ

Back to top button