দেশ

ফানুস-আতশবাজিতে সর্বনাশা দুষণ বর্ষবরণে আগে হুঁশিয়ারি ক্যাপসের

fanushনববর্ষ মানেই উৎসবমুখর একটি দিন।  প্রতিবছর ৩১ ডিসেম্বর রাত ১২টা এক মিনিট থেকেই শুরু হয় নতুন বছর উদযাপনের উন্মাদনা। মুহুরমুহ শব্দ করে আকাশে ছড়িয়ে পড়ে আতশবাজির আলোকছটা।  প্রতিবছরই ইংরেজি নববর্ষ উপলক্ষে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে রাতের বেলা আতশবাজি ও ফানুস পোড়ানো হয়।  ফলশ্রুতিতে বছরের প্রথম দিন শুরু হয় অস্বাস্থ্যকর বায়ু সেবন করে এবং সরব উপস্থিতিতে শব্দ দূষণের মত নীরব ঘাতকে সাথে নিয়ে। এই আকস্মিক বায়ু ও শব্দ দূষণ মানুষ, পশুপাখি ও পরিবেশ প্রতিবেশ উপর উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে।

স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান ও খ্যাতিমান জলবায়ু বিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার জানিয়েছেন, বায়ুমন্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) এর গবেষণা দল গত ৬ বছরব্যাপী (৩১ ডিসেম্বর ২০১৭ থেকে ১ জানুয়ারি ২০২৩) ইংরেজি নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে বায়ু ও শব্দ দূষণের তীব্রতা পর্যবেক্ষণ করে আসছে।  গবেষণায় দেখা যায় যে, ডিসেম্বরের শেষ দিনের তুলনায় জানুয়ারি মাসের প্রথম দিনের বায়ুমান অনেক বেশী খারাপ থাকে। উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায় যে, ৩১ ডিসেম্বরের থেকে ১ জানুয়ারি বায়ুমান সূচক সর্বনিম্ন ৬% থেকে সর্বোচ্চ ৬৬% শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছিল। গবেষণায় আরও দেখা যায় যে, পটকা-আতশবাজি ইত্যাদি ফুটানোর ফলে শব্দের তীব্রতা সহনীয় মাত্রা ছাড়িয়ে যায়। উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায় যে, বর্ষবরণের পটকা-আতশবাজি থেকে উৎপন্ন শব্দের মাত্রা পূর্বের দিনের তুলনায় সর্বনিম্ন ৪৬% থেকে সর্বোচ্চ ১১৩% পর্যন্ত বেশী হয়ে থাকে।

আতশবাজির শব্দের জন্য প্রাণী ছাড়াও শিশু, বয়স্ক, গর্ভবতী মা এবং রোগীদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি বেড়ে যায়। আমাদের দেশেই বর্ষবরণের বাজির শব্দে গত বছর শিশু প্রাণহানি ঘটেছে, এছাড়াও উচ্চ শব্দের কারণে অনেকেই হার্ট অ্যাটাক করেন এবং অসুস্থ হয়ে যাবার মত ঘটনা ঘটেছে। পাখিরা প্রচণ্ড আওয়াজের কারণে উড়া-উড়ি করে এবং গাছে বা বিল্ডিঙের দেয়ালে আঘাত পেয়ে নিচে পড়ে যায় ফলে আহত হয় এবং মারাও যায়। রাস্তার কুকুর-বিড়াল, গৃহস্থলী প্রাণী এমনকি বন্যপ্রাণীরাও শব্দের কারণে ভয়ে বিভ্রান্ত হয়ে দিক-বিদিক ছোটাছুটি করতে গিয়ে মারা যাচ্ছে। আতশবাজি ও ফানুস উড়িয়ে পুরনো বছরকে বিদায় জানিয়ে নতুন বছরকে বরণ করতে গিয়ে ২০২৩ সালের শুরুতেই সারাদেশ থেকে ২০০ স্থান থেকে আগুনের সংবাদ পেয়েছিল জাতীয় জরুরী সেবা ৯৯৯ ও ফায়ার সার্ভিস।

সম্প্রতি ডিএমপি কমিশনার, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ অর্ডিন্যান্স (অর্ডিন্যান্স নং- III/৭৬) এর ২৮ ও ২৯ ধারায় অর্পিত ক্ষমতাবলে (১৮ ডিসেম্বর) রাত ১২টা থেকে শুভ বড়দিন এবং ইংরেজি নববর্ষ উদযাপন উৎসবমুখর ও নিরাপদ পরিবেশে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে অনির্দিষ্টকালের জন্য সব ধরনের আতশবাজি, পটকা ফোটানো, ফানুস ওড়ানো, মশাল মিছিল ইত্যাদি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এ আদেশ বলবৎ থাকবে, এটি নিসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার।

এমতাবস্থায় বায়ুমন্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) দেশবাসীর নিকট অনুরোধ করছে যে, প্রত্যেকে যেন সামাজিকভাবে নিজ নিজ স্থান হতে সচেতন হয় এবং পরিবেশ ও জান-মালের নিরাপত্তার জন্য আতশবাজি ও ফানুস বর্জন করেন। এক জনের ক্ষণিকের আনন্দ উল্লাস যেন অন্যের ক্ষতির কারণ না হয়। আমাদেরকে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে এবং একজন দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে জনগণের কথা মাথায় রেখে নববর্ষকে আমন্ত্রণ জানাতে হবে।

এমন আরো সংবাদ

Back to top button