সিলেটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভা ঘিরে ব্যস্ত সময় পার করছেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। হজরত শাহজালাল ও হজরত শাহ পরানের মাজার জিয়ারত শেষে আগামীকাল বুধবার এ জনসভার মধ্য দিয়েই আনুষ্ঠানিকভাবে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রচারণা শুরু হচ্ছে। সেখানে কয়েক লাখ মানুষের জমায়েতের লক্ষ্য নিয়ে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন দলের নেতা-কর্মীরা।
আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, শেখ হাসিনা প্রতি সংসদ নির্বাচনের সময় সিলেটে হজরত শাহজালাল (রহ.) ও হজরত শাহপরান (রহ.)-এর মাজার জিয়ারতের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী প্রচার শুরু করেন। এবারও তাই করছেন। এ ছাড়া প্রতিবারের ধারাবাহিকতায় এবারও জনসভা অনুষ্ঠিত হবে। এবারের সভার আয়োজন করেছে সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ।
একাধিক নেতা জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীর আগমনের ঘোষণায় সিলেট বিভাগের ৪ জেলার ১৯টি সংসদীয় আসনের নেতা-কর্মীদের মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। সর্বশেষ গত বছরের ২১ জুন বন্যার্তদের দেখতে সিলেট ও সুনামগঞ্জ সফর করেন শেখ হাসিনা। এ সময় তিনি সিলেট সার্কিট হাউসে মতবিনিময় সভায়ও অংশ নেন। তবে ২০১৮ সালের পর আগামীকালই প্রধানমন্ত্রী সিলেটে কোনো জনসভায় ভাষণ রাখতে যাচ্ছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফর সফল করতে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসহযোগী সংগঠনগুলো একাধিক প্রস্তুতি ও মতবিনিময় সভা, প্রচার মিছিল করেছে। নগর ও জেলা-উপজেলায় চলছেন মাইকিংও। এ ছাড়া আজ মঙ্গলবারও সর্বশেষ নানা প্রস্তুতিমূলক কর্মসূচি পালন করা হবে। দলটি জনসভাস্থল ও এর আশপাশের এলাকায় আগামীকাল অন্তত ১০ লাখ মানুষের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে কাজ করছে বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে।
আজ মঙ্গলবার সকালে সরেজমিনে দেখা গেছে, আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে জনসভাস্থলে মঞ্চ নির্মাণসহ আনুষঙ্গিক প্রস্তুতির সর্বশেষ কাজ চলছে। নগরের বিভিন্ন সড়ক ও সড়ক বিভাজককে বর্ণিল সাজে সাজিয়ে সৌন্দর্যবর্ধন করেছে সিলেট সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ। একাধিক সড়কে নতুনভাবে কার্পেটিং করা হয়েছে।
মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. জাকির হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সফর সামনে রেখে নেতা-কর্মীরা উজ্জীবিত। তাঁর এ সফরের মাধ্যমেই আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রচারণা কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হচ্ছে। তাই প্রধানমন্ত্রীর এ সফর সিলেটবাসীর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সিলেটবাসীও প্রধানমন্ত্রীকে বরণ করতে মুখিয়ে আছেন।
আওয়ামী লীগের একটি সূত্র জানিয়েছে, সিলেট বিভাগের ৪ জেলার ১৯টি সংসদীয় আসনের মধ্যে ১৮টিতে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী রয়েছে। এই প্রার্থীদের নির্দিষ্টসংখ্যক লোকসমাগম করার নির্দেশনা দেওয়া আছে। পাশাপাশি প্রতিটি জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতাদেরও কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে জনসভায় হাজির হওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এদিকে প্রধানমন্ত্রীর সিলেট সফর ঘিরে আওয়ামী লীগের পাশাপাশি সাধারণ মানুষদের মধ্যেও আগ্রহ দেখা গেছে। একাধিক সাধারণ ভোটার জানিয়েছেন, জনসভায় প্রধানমন্ত্রী কী ভাষণ দেবেন, তা নিয়ে সবার কৌতূহল রয়েছে। তিনি সিলেটের উন্নয়নে ভবিষ্যতে কী কী করবেন কিংবা তাঁর নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি কী হতে পারে, তা জানতেও মানুষের মধ্যে আগ্রহ আছে।
আওয়ামী লীগের নেতারা জানিয়েছেন, দূরদূরান্তের জেলা-উপজেলা থেকে নেতা-কর্মীরা বাস, মাইক্রোবাস ও ট্রেনে এসে সমাবেশস্থলে যোগ দেবেন। বেলা দুইটায় সভা শুরু হওয়ার কথা। এর আগেই তাঁরা সমাবেশস্থলে পৌঁছাতে চান। খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে তাঁরা সমাবেশে আসবেন। মূলত ভোটের আমেজ আনতে সিলেটকে একটা উৎসবের নগরে পরিণত করার ইচ্ছা আছে দলের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের।
প্রধানমন্ত্রীর সফর ঘিরে সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ বলে জানিয়েছেন সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. নাসির উদ্দিন খান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সিলেটের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ জনসভা করার প্রস্তুতি নিয়েই দলের নেতা-কর্মীরা কাজ করছেন। যেহেতু বরাবরের মতো এবারও সিলেটে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করছেন প্রধানমন্ত্রী, তাই সিলেটবাসী অত্যন্ত উৎফুল্ল। প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে দলীয় নেতা-কর্মীদের প্রতি যে দিকনির্দেশনা দেবেন, তা সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলবেন। তাঁর সফরের মধ্য দিয়েই মূলত সিলেটে ভোটের মাঠে নতুন আমেজ তৈরি হতে যাচ্ছে