জেলার খবর

রাজশাহীতে প্রায় নয় হাজার টন খেজুর গুড় উৎপাদনের লক্ষ্য

রাজশাহী চারঘাট উপজেলার শলুয়া গ্রামে রস সংগ্রহের জন্য খেজুর গাছ প্রস্তুত করছেন গাছি ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী
রাজশাহী চারঘাট উপজেলার শলুয়া গ্রামে রস সংগ্রহের জন্য খেজুর গাছ প্রস্তুত করছেন গাছি ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

রাজশাহীতে চলতি মৌসুমে ৮ হাজার ৮২৪ টন খেজুর গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রার কথা জানিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। প্রায় ১১ লাখ ১৩ হাজার ৬৪৩টি খেজুর গাছ থেকে সংগৃহীত রস দিয়ে এই গুড় উৎপাদন করা হবে। এছাড়া খেজুরের রস ও গুড় থেকে ১৪৯ কোটি ৯৯ লাখ ৩১ হাজার ২০৩ টাকার সম্ভাব্য বাণিজ্যেরও প্রত্যাশা করছেন কৃষি কর্মকর্তারা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহীর নয়টি উপজেলার প্রায় প্রতিটিতেই সংগ্রহ করা হয় খেজুরের রস। জেলার ৫৪৪ দশমিক ৩৭ হেক্টরের মধ্যে শুধু পুঠিয়ায় খেজুরের গাছ রয়েছে ২৯০ হেক্টর জমিতে। রস সংগ্রহের পর গ্রামের ঐতিহ্যবাহী পদ্ধতিতে তৈরি হয় গুড়। এসব গুড় রাজশাহী ছাড়াও ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ বিভিন্ন স্থানে রফতানি হয়। শীত মৌসুমে প্রতি বছরই রাজশাহী অঞ্চলে গাছ তৈরি, রস সংগ্রহ, গুড় তৈরি, বাজারজাত ও পরিবহনসহ সব মিলিয়ে অর্ধ লক্ষাধিক মানুষের মৌসুমি কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়। রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার কানপাড়াহাট, সিংগাহাট, পুঠিয়ার বানেশ্বর, চারঘাট এবং পবা উপজেলাসহ নগরীর মোকামগুলোয় গুড় বিক্রি করা হয়। গ্রামাঞ্চল থেকে এসব মোকামে গুড় পরিবহনের জন্য ব্যবহার করা হয় ভ্যান। এর ফলে কয়েক হাজার ভ্যানচালকের কর্মসংস্থান হয়। পাশাপাশি মোকামগুলো থেকে ট্রাকে করে ঢাকা এবং চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হয় গুড়। এ কারণে গুড় মৌসুমে জমজমাট হয়ে ওঠে ট্রাক মালিকদের ব্যবসা। একই সঙ্গে অনেক তরুণ উদ্যোক্তাও এ বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন।

চারঘাট উপজেলার সারদা এলাকার চাষী মোহাম্মদ করিম বণিক বার্তাকে বলেন, ‘আমার জমির আইল এবং পুকুরপাড়ে ১৫০টি খেজুর গাছ আছে। এরই মধ্যে ৫০টি গাছ রস সংগ্রহের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। বাকি গাছগুলোও প্রস্তুতের প্রক্রিয়া চলছে। আর কয়েক দিনের মধ্যে এ কাজ শেষ হবে। এরই মধ্যে কয়েকটি গাছ থেকে স্বল্প পরিমাণে রস সংগ্রহ শুরু হয়েছে।’

পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর এলাকার দিলরুবা খাতুন দিনমজুর হিসেবে খেজুর রস থেকে গুড় তৈরি করেন। জানতে চাইলে  তিনি বলেন, ‘সপ্তাহখানেক ধরে গুড় তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। মালিকের কাছ থেকে পারিশ্রমিক হিসেবে দিনপ্রতি ৫০০ টাকা পাই। শীত মৌসুমে আমার মতো প্রায় ৩০ নারী-পুরুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়।’

কৃষি সম্প্রসারণ দপ্তরের তথ্যমতে, রাজশাহী জেলায় ৫৪৪ দশমিক ৩৭ হেক্টর জমিতে খেজুর গাছ রয়েছে ১১ লাখ ১৩ হাজার ৬৪৩টি। এর মধ্যে নতুন গাছ রয়েছে ৫ হাজার ৬২৫টি এবং পুরনো গাছ ১১ লাখ ৮ হাজার ১৮টি। জেলায় মোট খেজুর চাষী রয়েছেন ৪৯ হাজার ৭১১ জন। খেজুরের গুড় ব্যবসায়ী রয়েছেন ৬৪৪ জন। এছাড়া এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থেকে জীবিকা নির্বাহ করেন অন্তত ২১ হাজার ৮৫৬ জন। মৌসুমে একটি প্রাপ্তবয়স্ক গাছ থেকে ২৩ দশমিক ৫২৩ কেজি রস আসে। এবার জেলাজুড়ে সম্ভাব্য রস উৎপাদন হবে ২৪ হাজার ২৫৮ দশমিক ১৪ টন। এ থেকে গুড় উৎপাদন হতে পারে ৯ হাজার ১৪০ দশমিক ৩৪ টন। বর্তমানে রাজশাহীতে ৯০টি গুড়ের আড়ত রয়েছে। এসব আড়তে টনপ্রতি গুড়ের বর্তমান বাজার দর ১ লাখ ৬২ হাজার টাকা।

এমন আরো সংবাদ

Back to top button