বিশ্ব নেতাদের কড়া বার্তা দিলো দেশের উপকূলীয় অঞ্চলের কিশোর-কিশোরীরা
হিস্যা বুঝে নিতে বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশের তরুণরা
বিশ্ব নেতাদের কড়া বার্তা দিলো দেশের উপকূলীয় অঞ্চলের কিশোর-কিশোরীরা। সচেতন তরুণরা জলবায়ু সম্মেলন কপ-২৮-এ জলবায়ু পরিবর্তনে বাংলাদেশের অবস্থা তুলে ধরেছে! জলবায়ু অর্থায়ন, জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত নারীদের সুরক্ষাসহ লস অ্যান্ড ড্যামেজ তহবিলের উপর দৃঢ় পদক্ষেপ নেয়ার মাধ্যমে টেকসই ভবিষ্যতের জন্য তারা বিশ্ব নেতৃবৃন্দকে আহ্বান জানিয়েছেন। প্রতি বছরের চেয়ে এবার জলবায়ু সম্মেলনে তরুণ-তরুণী অংশগ্রহণ অনেক বেশি দেখা গেছে। শেষ মুহূর্তেও তরুণদের অংশগ্রহণ ছিলো চোখে পড়ার মতো। বাংলাদেশ থেকে এবার ২০ জন তরুণ-তরুণী অংশ নিয়েছেন। তারা বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। বাংলাদেশে যে সব সমস্যার কারণে জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে প্রত্যন্ত অঞ্চলে, সেগুলো তারা সম্মেলনে এসে বিভিন্ন দেশের সভা-সেমিনারে তুলে ধরছেন।
সম্মেলনে অংশ নেওয়া ইয়ুথনেটর নির্বাহী সম্বন্বয়কারি সোহানুর রহমান বলেন, জলবায়ু ক্ষয়ক্ষতি তহবিলের সূচনা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ একটি মুহূর্ত। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় বাংলাদেশের এখনই আনুমানিক ১০০ কোটি ডলার খরচ হয়। সেখানে পুরো বিশ্বের ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর জন্য এখন পর্যন্ত প্রতিশ্রুতি এসেছে মাত্র ৪০ কোটি ডলারের সামান্য বেশি। সম্মেলনের বিভিন্ন সভায় অংশ নিয়ে বাংলাদেশের সমস্যা তুলে ধরার চেষ্টা করছি। বাংলাদেশের প্রধান চাহিদা এডাপটেশন কিংবা অভিযোজন। জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা বাস্তবায়নে আমাদের টাকা দরকার ২৩০ মিলিয়ন ডলার। যা ২০৫০ সালের মধ্যে লাগবে। এখানে আমাদের দাবি হচ্ছে এডাপটেশনের ফান্ড দ্বিগুন করা। আমরা ১০০ মিলিয়নের গল্প জানি। ২০২০ সাল থেকে দেওয়ার কথা। কিন্ত আমরা সেগুলো পাচ্ছি না।
সম্প্রতি এডাপটেশন গ্যাপ রিপোর্ট বলছে- বাংলাদেশ যে অর্থায়ন পায় তার ১৩/১৮ গুন অর্থায়ন আমাদের দরকার। আমাদের প্রত্যাশা হচ্ছে এই সম্মেলন থেকে এডাপটেশনের ফান্ড দ্বিগুন হবে। যা স্থানীয় ও তরুণ অভিযোজনকে সম্প্রসারিত করবে। আরেকটা কথা হচ্ছে কখনোই জলবায়ু সুবিচার হতে পারে না মানবধিকার ছাড়া। আরেকজন কর্মী ফারজানা ফারুক ঝুমু বলেন, আমি মিডিকেশন নিয়ে কাজ করছি। আমরা বিভিন্ন দেশের বৈঠকে অংশ নিয়ে তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করছি। নিজেরা বসে ঠিক করছি কোন দাবি করা যায়। এই মুহূর্তে সদ্য যে রিপোর্ট, বর্তমান অবস্থায় বাংলাদেশের তাপমাত্র ২.৮ ডিগ্রি হয়ে যাবে। যা বাংলাদেশর জন্য মৃত্যুর স্বরুপ। সেই জায়গা থেকে জীবাশ্ম জ্বালানিতে সরে আসার জোরালো কন্ঠে আওয়াজ তুলতে হবে।
জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে দীর্ঘ দিন কাজ করা ইয়ুথনেটের জাতীয় সম্বন্বয়কারি শাকিলা ইসলাম বলেন, আমরা জানি বাংলাদেশের যে নারীরা আছে, তারা সামাজিক দৃষ্টি কোন ও জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য ঝুকিপূর্ণ। উপকূলিয় অঞ্চলের নারীরা সবচেয়ে স্যালাইনিটি ও যৌনস্বাস্থ্য নিয়ে ঝুঁকির মধ্যে থাকছে। আমরা এই সম্মেলনের মাধ্যমে নারীদের, বিশেষ করে প্রত্যন্ত অঞ্চলের নারী অধিকার তুলে ধরতে চেষ্টা করছি। জলবায়ু পরিবর্তনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বাংলাদেশের নারীরা। জলবায়ু তহবিলের যে বরাদ্দ হবে সেখানে নারীদের জন্য বরাদ্ধ থাকা উচিত, যাতে করে তহবিলের ন্যায্য বন্টন হয়।
এদিকে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বন্ধে দুর্বল একটি খসড়া চুক্তি নিয়ে বিভিন্ন দেশের তুমুল সমালোচনার মধ্যে মঞ্চে বিক্ষোভের ঝড় তুলেছেন ১২ বছরের এক কিশোরী। মাথার ওপরে একটি ব্যানার ধরে আচমকা মঞ্চে দাঁড়িয়ে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন ভারতীয় এই কিশোরী জলবায়ুকর্মী লিসিপ্রিয়া কাংগুজাম। ব্যানারে লেখা ছিল: “শেষ হোক জীবাশ্ম জ্বালানি। রক্ষা পাক আমাদের পৃথিবী, আমাদের ভবিষ্যৎ।” দর্শকশ্রোতাদের করতালির মধ্যে পরে তাকে সরিয়ে নেওয়া হয়। কপ-২৮ এর মহাপরিচালক রাষ্ট্রদূত মজিদ আল সুয়াইদি কিশোরী লিসিপ্রিয়ার প্রতিবাদ প্রসঙ্গে বলেন, তিনি কপ-২৮ সম্মেলনে অল্পবয়সীদের এমন উদ্যমের প্রশংসা করেন। লিসিপ্রিয়ার জন্য আরেকবার হাততালি দিতে দর্শকশ্রোতাদের অনুরোধও জানান তিনি।