রাজনীতিহাইলাইটস

বিএনপির ৪৮ ঘণ্টার হরতাল আজ ও কাল

তফসিল স্থগিতের আহ্বান রিজভীর

বিএনপিদ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার প্রতিবাদে সারা দেশে ৪৮ ঘণ্টার হরতাল ডেকেছে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো, যা আজ ভোর ৬টায় শুরু হয়ে মঙ্গলবার ভোর ৬টা পর্যন্ত চলবে। জনগণ ও নেতাকর্মীদের প্রতি শান্তিপূর্ণভাবে দেশব্যাপী এ হরতাল কর্মসূচি পালনের আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনকে নির্বাচনের তফসিল স্থগিতের আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি। গতকাল ভার্চুয়াল এক সংবাদ সম্মেলনে দলের পক্ষে রিজভী এ আহ্বান জানান।

এদিকে হরতাল কর্মসূচির আগের রাতে রাজধানীতে চার বাসে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। আগারগাঁও তালতলা, গুলিস্তান, ধানমন্ডি ও কালশীতে এসব অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এ তথ্য নিশ্চিত করে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মিডিয়া কর্মকর্তা তালহা বিন জসীম জানান, গতকাল রাত ১১টা ৫৮ মিনিটে মিরপুরের কালশী সড়কে বসুমতি পরিবহনের একটি বাসে আগুন লাগার সংবাদ পায় ফায়ার সার্ভিস। রাত পৌনে ১২টায় ধানমন্ডি এলাকায় মৌমিতা পরিবহনের একটি বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। সন্ধ্যা ৬টা ৪০ মিনিটের দিকে আগারগাঁও তালতলায় বিহঙ্গ পরিবহনের বাসে আগুন দেয়া হয়। এর ১ ঘণ্টা পর সন্ধ্যা ৭টা ৪০ মিনিটে গুলিস্তান টোল প্লাজার সামনে কমল পরিবহনের আরেকটি বাসে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। তবে এসব ঘটনায় কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি বলে জানান ফায়ার সার্ভিসের এ কর্মকর্তা। অন্যদিকে কুমিল্লা মহানগরে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা তিশা পরিবহনের একটি বাসে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। রাত সাড়ে ৯টার দিকে শহরের ঢুলিপাড়া মোড়ে ভাঙা বিল্ডিং এলাকায় টমছম ব্রিজ থেকে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাওয়ার সড়কে এ ঘটনা ঘটে।

সরকার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে বিএনপিসহ সমমনা জোটগুলোর পাশাপাশি লেবার পার্টি ও জামায়াতে ইসলামীও ৪৮ ঘণ্টার হরতাল পালন করছে। রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘জনগণের হারানো সব অধিকার পুনরুদ্ধার এবং অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে এ হরতাল। সরকারের দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানোর জন্যও এ হরতাল আহ্বান করা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘দেশের কারাগারগুলোয় ধারণক্ষমতার কয়েক গুণ বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের দিয়ে উপচে পড়েছে। অনেককে আটকে রেখে মুক্তিপণ নিচ্ছে পুলিশ, নেতাকর্মীদের না পেয়ে তার আত্মীয়-স্বজনদের আটক করে মারধর করছে। কার্যত দেশে আইনের শাসনের মূলোৎপাটন করা হয়েছে। গায়েবি মামলা ও গ্রেফতার আতঙ্কে বিএনপির নেতাকর্মীরা দুঃসহ জীবন অতিবাহিত করছে। তবে এতসব করেও এবার আর পার পাওয়া যাবে না। জনগণ রাজপথে নেমেছে অধিকার আদায়ের দুর্বার আন্দোলনে।’

একটি বিশ্বাসযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করতে, সরকারের পদত্যাগ এবং নির্বাচনের তফসিল বাতিলের আহ্বান জানান রুহুল কবির রিজভী। নির্বাচন কমিশনের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন না দিলে সরকারের পতন হবে। আপনারা যে তফসিল ঘোষণা করেছেন তা অবিলম্বে প্রত্যাহার করুন। নির্বাচন স্থগিত করে আগে পদত্যাগ করুন। অন্যথায় এ ফরমায়েশি একতরফা নির্বাচন জনগণ সর্বশক্তি দিয়ে প্রতিহত করবে।’

হরতালের আগের দিন সারা দেশ থেকে ৩০২ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে অভিযোগ রিজভীর। তিনি বলেন, ‘২৮ অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত ১৩ হাজার ২১০ জনের অধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গায়েবি মামলায় তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। মূলত বিএনপিকে ভোটের মাঠ থেকে সরিয়ে নেয়ার জন্য সরকার এমন কৌশল নিয়েছে। তারা তাদের লাঠিয়াল বাহিনী দিয়ে বিভিন্ন স্থানে নেতাকর্মীদের বাড়িতে হামলা করছে। কোথাও কোথাও নেতাকর্মীদের না পেয়ে তাদের স্ত্রী, সন্তানদেরও গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।’

গ্রেফতার বিএনপি নেতারা অগ্নিসংযোগ ও ভাংচুরের দায় স্বীকার করেছেন বলে ডিবিপ্রধানের দেয়া বক্তব্যকে ‘চতুর অপকৌশল মাত্র’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব। তিনি বলেন, ‘মূলত উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপাতে সরকারের বিশ্বস্ত দোসর হিসেবে গোয়েন্দাপ্রধান এ ধরনের নির্লজ্জ মিথ্যাচার করেছেন, যা চতুর অপকৌশল মাত্র। আমি ডিবিপ্রধানের ডাহা মিথ্যাচারের তীব্র নিন্দা, প্রতিবাদ ও ধিক্কার জানাই। আমরা গ্রেফতারকৃত বিএনপি নেতাদের আইনজীবীদের কাছ থেকে জানতে পেরেছি, তারা ডিবি কার্যালয়ে এ ধরনের কোনো স্বীকারোক্তি দেননি।’

এদিকে হরতাল-অবরোধের মতো রাজনৈতিক কর্মসূচিতে দূরপাল্লার যাত্রীবাহী বাস, পণ্যবাহী পরিবহন, তেলবাহী পরিবহনসহ অন্যান্য যানবাহন চলাচলের জন্য বিশেষ নিরাপত্তা (এসকর্ট সার্ভিস) দেবে র‍্যাব। রাজধানী ঢাকা থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চলাচলকারী ও ঢাকামুখী পরিবহনকে দেয়া হবে এ নিরাপত্তা। র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘সম্প্রতি রাজনৈতিক দলগুলোর বিভিন্ন কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন স্থানে মহাসড়কে অগ্নিসংযোগ, গণপরিবহন ও ব্যক্তিগত পরিবহন ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ, সরকারি বিভিন্ন স্থাপনা ভাংচুর ও নাশকতার মাধ্যমে দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি করে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টির অপচেষ্টা চলছে। তাই দূরপাল্লার যাত্রীবাহী বাস, পণ্যবাহী পরিবহন, তেলবাহী লরিসহ অন্যান্য যান চলাচলে যেন কোনো বাধার সৃষ্টি না হয় সে ব্যাপারটি নিশ্চিত করবে র‍্যাব।’

এমন আরো সংবাদ

Back to top button