দেশহাইলাইটস

রাজধানীতে গণপরিবহন চলাচল সীমিত, চলছে না দূরপাল্লার বাস

বিএনপি ডাকা তৃতীয় দফা অবরোধের প্রথম দিনসারাদেশে বিএনপির ডাকা তৃতীয় দফার সড়ক, রেল ও নৌপথ অবরোধ কর্মসূচি শুরুর পর থেকে রাজধানীতে গণপরিবহন সীমিত হয়ে এসেছে। যাত্রী সংকটে বন্ধ রয়েছে দূরপাল্লার বাস। ঢাকায় সহিংসতার কোনো ঘটনা না ঘটলেও বগুড়া, ফেনী ও নারায়নগঞ্জে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। আজ বুধবার (৮ নভেম্বর) ভোরে শুরু হওয়া টানা ৪৮ ঘণ্টার এ অবরোধ শুক্রবার ভোর পর্যন্ত চলবে। তৃতীয় দফার অবরোধের শুরুতে রাজধানীতে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক দিনের তুলনায় অনেক কম দেখা গেছে। মহাখালী বাস টার্মিনাল এলাকায় দূরপাল্লার বাসের জন্য ভোরে সাধারণত যাত্রীদের ভিড় থাকলেও আজ তেমনটা দেখা যায়নি। তবে কিছু কিছু এলাকায় যাত্রীবাহী বাস, সিএনজি অটোরিকশা চোখে পড়লেও সড়কগুলোকে ব্যক্তিগত যানবাহন খুবই কম দেখা যাচ্ছে। ঢাকার অন্যতম ব্যস্ততম বিজয় সরণীতে অল্প কিছু যানবাহন চলাচল করতে দেখা গেছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অফিসগামী ও শ্রমজীবী মানুষে চলাচল বাড়ছে এবং বাস স্টপেজগুলোতে লোকজনের ভিড় বাড়ছে।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, গাবতলী বাস টার্মিনালে দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ আছে। তবে সিটি সার্ভিসের কিছু বাস ওই এলাকায় চলাচল করছে এবং আগের অবরোধগুলোর তুলনায় ব্যক্তিগত গাড়িও কিছুটা বেশি দেখা যাচ্ছে। এদিকে অবরোধে ‘নাশকতা ঠেকাতে’ পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাব ও বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। বিজিবি সদর দপ্তর জানায়, পোশাক কারখানার নিরাপত্তা জোরদারে ঢাকা ও আশপাশের জেলায় ৪৮ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন। এছাড়াও সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পর্যাপ্ত সংখ্যক বিজিবি মোতায়েন রয়েছে। র‌্যাব সদর দপ্তর জানা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে রাজধানীতে র‍্যাব ফোর্সেস এর ১৬০টি টহল দলসহ সারাদেশে ৪৬০টি দল মোতায়েন রয়েছে। রাজধানীর মোড়ে মোড়ে এবং গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোতে পুলিশসহ আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কড়া অবস্থান দেখা গেছে।

এদিকে সকাল সাড়ে ৭টার দিকে বগুড়া শহর জামায়াতের আমির অধ্যক্ষ আবিদুর রহমানের নেতৃত্বে দুই শতাধিক নেতাকর্মী লাঠিসোটা হাতে মিছিল শেষে মহাসড়ক অবরোধ করে। পুলিশ তাদের সড়ক থেকে সরিয়ে দিতে গেলে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। একপর্যায়ে পুলিশ জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ারশেল ও শটগান থেকে দুই রাউন্ড ছররা গুলি ছুড়ে। এতে জামায়াত-শিবিরের ১০ নেতাকর্মী গুলিবিদ্ধ হন। পরে তারা কয়েকটি হাত বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে এলাকা ছেড়ে চলে যান। বগুড়ার পাশাপাশি এদিন ফেনীতেও বিক্ষিপ্ত কিছু সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

তৃতীয় দফা ৪৮ ঘণ্টার সর্বাত্মক অবরোধের আগের রাতে গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর খিলগাঁও-মালিবাগ এলাকায় বাহন পরিবহনের একটি বাসে আগুন দেয়া ঘটনা ঘটেছে। খিলগাঁওয়ে আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদর দফতরের কাছে পার্কিং করা ছিল বাহন পরিবহনের বাসটি। অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা বাসটিতে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায়। পরে খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস বাসের আগুন নিভিয়েছে। এ ঘটনায় হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।

গত ২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশে হামলা, নেতাকর্মীদের হত্যা, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ আন্দোলনরত বিভিন্ন দলের সহস্রাধিক নেতাকর্মী গ্রেফতার, বাড়ি বাড়ি তল্লাশি-হয়রানি ও নির্যাতনের প্রতিবাদ এবং চলমান একদফা দাবিতে ফের টানা দুই দিনের অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করে বিএনপি এবং বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। এর আগে ২৯ অক্টোবর হরতাল, ৩১ অক্টোবর, ১ ও ২ এবং ৫ ও ৬ নভেম্বর দুই দফায় অবরোধ কর্মসূচির পালন করেছে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী। বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর ডাকা পূর্বের হরতাল ও অবরোধে রাজধানী ঢাকায় কম পিকেটিং মিছিল হলেও রাস্তায় গণপরিবহন চলেছে একবারে সীমিত আকারে। দেশব্যাপী হরতাল ও অবরোধে ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষ, ভাঙচুর ও যানবাহনে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। সারাদেশে বিএনপি জামায়াতসহ বিরোধী দলের সহস্রাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

এদিকে ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশ সংঘাতে পণ্ড হওয়ার পর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান শাহজাহান ওমর বীর উত্তম, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলতাফ হোসেন চৌধুরী, শামসুজ্জামান দুদু, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল , যুগ্ম মহাসচিব মজিবর রহমান সরোয়ার, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন স্বপন, উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হক ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীসহ বিরোধী দলের উল্লেখযোগ্য নেতাদের গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

২৮ অক্টোবর রাত ১০টার পর থেকে এখনো পর্যন্ত নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় তালাবদ্ধ, সেদিনের সংঘাতের পর থেকে কোনো নেতাকর্মী বা অফিস সহকারীকে প্রবেশ করতে দেখা যায়নি। বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সামনে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কড়া অবস্থান। কাঁটাতারের ব্যারিকেড দিয়ে রেখেছে পুলিশ।

এমন আরো সংবাদ

Back to top button