অর্থনীতিহাইলাইটস

১২৪ টাকায়ও রেমিট্যান্সের ডলার কিনছে ব্যাংক

সংকট আরো তীব্র

১২৪ টাকায়ও রেমিট্যান্সের ডলার কিনছে ব্যাংকএক বছর আগে ঘোষিত দরের চেয়ে ১-২ টাকা বেশি দামে রেমিট্যান্সের ডলার কেনায় ছয়টি ব্যাংকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। একই অভিযোগে চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে এসে আরো ১০টি ব্যাংকের ট্রেজারি প্রধানকে জরিমানা করা হয়েছিল। যদিও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জ্ঞাতসারেই ব্যাংকগুলো এখন ঘোষিত দরের চেয়ে ১২-১৪ টাকা পর্যন্ত বেশি দামে ডলার কিনছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ডলারের সংকট আরো তীব্র হয়ে ওঠার কারণেই ব্যাংকগুলো মুদ্রাটি সংগ্রহে এতটা মরিয়া হয়ে উঠেছে।  বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদিত দর অনুযায়ী, রেমিট্যান্স আনার জন্য ব্যাংকগুলোর ডলারপ্রতি সর্বোচ্চ ১১০ টাকা ৫০ পয়সা দেয়ার কথা। যদিও দেশের অনেক ব্যাংকই এখন ডলারপ্রতি ১২৪ টাকা ৩৫ পয়সা পর্যন্ত পরিশোধ করছে। ব্যাংকগুলো এখন খুচরা বাজারের (কার্ব মার্কেট) চেয়েও বাড়তি দরে ডলার সংগ্রহ করছে। কার্ব মার্কেটে গতকাল প্রতি ডলার লেনদেন হয়েছে ১১৯ থেকে ১২০ টাকায়। তবে এখানেও গতকাল ডলারের তীব্র সংকট ছিল বলে জানিয়েছেন গ্রাহকরা।

বণিক বার্তার অনুসন্ধানে দেখা গেছে, দেশের ব্যাংকগুলোর কাছে গতকাল মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক মানি এক্সচেঞ্জগুলো প্রতি ডলার ১২২ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ১২৩ টাকা ৬০ পয়সা পর্যন্ত প্রস্তাব করেছে। এর মধ্যে বেশির ভাগ লেনদেনই হয়েছে ১২৩ টাকার বেশি দরে। আন্তর্জাতিক মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠান ‘ট্রান্সফাস্টের’ কাছ থেকে সর্বোচ্চ ১২৪ টাকা দরেও রেমিট্যান্সের ডলার কিনেছে দেশের অনেক ব্যাংক। আর যুক্তরাজ্যভিত্তিক মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠান ‘ট্যাপট্যাপ’ থেকে সংগ্রহ করা ডলারের বিনিময় হার ছিল ১২৩ টাকা ৫০ পয়সা। সংযুক্ত আরব আমিরাতভিত্তিক মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠান ‘জিসিসি এক্সচেঞ্জ’ থেকেও একই দরে রেমিট্যান্স কিনেছে দেশের ব্যাংকগুলো।

ব্যাংকগুলো যে দামে ডলার কিনছে, তার চেয়ে ১-২ টাকা বেশি দামে আমদানিকারকদের কাছে বিক্রি করছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। এক্ষেত্রে প্রতি ডলারের বিনিময় হার গ্রাহকভেদে ১২৫ টাকায় গিয়েও ঠেকছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) ও ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) থেকে এখন ডলারের বিনিময় হার নির্ধারণ করে দেয়া হচ্ছে। সংগঠন দুটির বেঁধে দেয়া দর অনুযায়ী ব্যাংকগুলোর সর্বোচ্চ ১১০ টাকা ৫০ পয়সায় রফতানি ও রেমিট্যান্সের ডলার কেনার কথা। আর আমদানিকারকদের কাছে ডলার বিক্রির কথা সর্বোচ্চ ১১১ টাকায়। যদিও ঘোষিত এ দরের কোনো প্রতিফলন বাজারে দেখা যায়নি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ডলারের ঘোষিত দরের সঙ্গে বাজার পরিস্থিতির কোনো সামঞ্জস্য নেই। এ কারণে আমদানি ঋণপত্র (এলসি) পরিশোধের জন্য অনেক বেশি দামে রেমিট্যান্স কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। বিদেশী মানি এক্সচেঞ্জগুলো ডলারের যে দর প্রস্তাব করছে, সেটি ঘোষিত দরের চেয়ে ১২-১৪ টাকা বেশি। ব্যাংকগুলো যদি ওই দামে ডলার না কেনে, তাহলে রেমিট্যান্সের বড় অংশ হুন্ডিতে চলে যাবে। সেপ্টেম্বরে রেমিট্যান্স প্রবাহে বড় বিপর্যয়ে এর প্রমাণ পাওয়া গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকেও যেকোনো মূল্যে রেমিট্যান্স আনার জন্য উৎসাহ দেয়া হচ্ছে।

মধ্যপ্রাচ্য থেকে আসা রেমিট্যান্সের প্রায় অর্ধেকই আসে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির মাধ্যমে। গতকাল এক্সচেঞ্জ হাউজ থেকে ব্যাংকটি ডলারপ্রতি ১২৩-১২৪ টাকায় রেমিট্যান্স কিনেছে। চলতি নভেম্বরের প্রথম পাঁচদিনে ব্যাংকটি রেমিট্যান্স কিনেছে প্রায় ৫ কোটি ডলার। এ রেমিট্যান্সের পুরোটাই ঘোষিত দরের চেয়ে অনেক বেশি দরে কেনা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা নিশ্চিত করেছেন।

এমন আরো সংবাদ

Back to top button